সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে গগনচুম্বী বহুতলের আটতলায় পাঁচ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট। ২২ হাজার টাকা বর্গফুট দরে যা কেনা হয়েছিল ১১ কোটি টাকায়। ডোভার লেনে পাঁচ কাঠা জমি, যার দাম পড়েছিল সাত কোটি টাকারও বেশি। হাইল্যান্ড পার্ক, গড়িয়া ও টালিগঞ্জে তিন-তিনটি আস্ত বাড়ি।
এই সব সম্পত্তিই বিভিন্ন ব্যাঙ্কে রাখা রাজ্য সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা তছরুপ করে তার একাংশ দিয়ে কেনা। ওই জালিয়াতির চাঁই হিসেবে ধৃত ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তির পরিমাণ দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। সব চেয়ে বড় কথা, গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জানুয়ারি এই ছ’-সাত মাসের মধ্যেই এত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কেনা হয়েছিল।
লালবাজার সূত্রের খবর, জেরায় ইন্দ্রজিৎ জানিয়েছেন, সকাল-বিকেল রবীন্দ্র সরোবরের জল ও গাছপালা দেখে যাতে মন শীতল হয়, সেই জন্যই তিনি শখ করে সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটটি কেনেন। এখনও পর্যন্ত তাঁর যত স্থাবর সম্পত্তির হদিস মিলেছে, তার মধ্যে ওটিই সব চেয়ে দামি। যত জমি তিনি কিনেছেন, সব ক’টিতেই প্রোমোটারি করার উদ্দেশ্য ছিল ইন্দ্রজিতের।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “এখনও পর্যন্ত যেটুকু আমরা বুঝতে পারছি, ইন্দ্রজিৎ এক দিকে তছরুপ চালিয়ে গিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে হাতানো টাকা দিয়ে একের পর এক সম্পত্তি কিনেছে। ওই সব স্থাবর সম্পত্তির কোনওটা নিজের নামে, কোনওটা বা তার স্ত্রী রসিকা চট্টোপাধ্যায়ের নামে কেনা হয়েছিল।” মূলত, দক্ষিণ কলকাতা ও দক্ষিণ শহরতলির ওই সমস্ত জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট কিনতে খরচ হয়েছিল ৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া এক কোটিরও বেশি টাকা দিয়ে সাতটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছিলেন ইন্দ্র। সম্পত্তি বাড়ানোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রতি মাসে দু’কোটি টাকা খরচ করে চলছিল ইন্দ্রজিৎ এবং তাঁর পরিবারের উচ্চকোটির জীবনযাপন।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, জেরার মুখে ইন্দ্রজিৎ জানিয়েছেন, মুম্বইয়ের যে-প্রযোজনা সংস্থায় তিনি সাত কোটি টাকা ঢেলেছেন, সেটি মূলত কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য রিয়্যালিটি শো-এর ব্যবস্থা করে। তছরুপের অর্থ থেকেই ওই সাত কোটি টাকা গত ডিসেম্বরে প্রযোজনা সংস্থাটিকে দেন ইন্দ্রজিৎ। গোয়েন্দারা জানান, ইন্দ্রজিতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখার পরে ওই প্রযোজনা সংস্থার কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রয়োজনে গোয়েন্দাদের একটি দল মুম্বই যাবে। কী হিসেবে তাঁরা ইন্দ্রজিতের কাছ থেকে
টাকা নিলেন, সেটা খতিয়ে দেখা
হবে। ইন্দ্রজিতের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের সূত্র কী, গোয়েন্দারা সেই ব্যাপারেও প্রযোজনা সংস্থার কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “ইন্দ্রজিতের অ্যাকাউন্ট থেকেই ওই সাত কোটি টাকা প্রযোজনা সংস্থাটিতে গিয়েছে। সেই টাকার পুরোটাই জালিয়াতি করে হাতানো। আইন মোতাবেক সংস্থাটিকে ওই টাকা ফেরত দিতে হবে।” গোয়েন্দারা জানান, মুম্বইয়ের সঙ্গে ইন্দ্রজিতের যোগাযোগ রয়েছে বেশ কয়েক বছরের। গা-ঢাকা দেওয়ার জন্য তিনি মুম্বইয়েও বেশ কিছু দিন ছিলেন। |
তছরুপে ধনপতি |
৪ ফ্ল্যাট:
সাদার্ন অ্যাভিনিউ, সাউথ সিটি,
কসবা, কালিকাপুরে। |
৩ বাড়ি: হাইল্যান্ড পার্ক, সোনারপুর, গড়িয়ায়। |
৪ জমি:
ডোভার লেন, কসবা, টালিগঞ্জ,
হাওড়ায়। |
৭ গাড়ি: ছ’টি এসইউভি, একটি সেডান। |
|