দিল্লি-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হেনস্থা, পার্টি দফতরে ভাঙচুর বন্ধে এ বার তৃণমূল কর্মীদের সংযত হওয়ার নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর মাধ্যমে কর্মীদের ‘শান্ত, সংযত ও কোনও প্ররোচনায় পা না-দেওয়ার’ জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবার বলেছেন, “রাজ্যের কোথাও কোনও বিরোধী দলের কেউ গেলে তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের দলনেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ভাবে কেউ কোথাও কোনও কর্মসূচি পালন করলে তাঁকে যেন বাধা দেওয়া না হয়। নেত্রীর এই নির্দেশ তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী সর্ব স্তরে, আমাদের দলের জনপ্রতিনিধি থেকে নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন।”
ক্ষমতায় আসার পরেই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিজয় উৎসব পালন না-করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। এমনকী, দিল্লি-কাণ্ডের পরেই রাজ্যে অশান্তি যাতে না হয়, তার জন্য দিল্লি থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার পরেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বামেদের কার্যালয় ভাঙা হয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন নেতা-কর্মীরা। নদিয়ার গয়েশপুরে বুধবারও হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার ২৪ ঘণ্টা আগেই হুগলির খানাকুলে আক্রান্ত এলাকা দেখতে গেলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ঘটনাচক্রে, সূর্যবাবু এ দিনই রাজ্য জুড়ে
সন্ত্রাসের ঘটনা বন্ধে হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে সবিস্তার চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে। পরপর হামলার এমন সব ঘটনায় দলের ‘ভাবমূর্তি কলুষিত’ হচ্ছে বলে এখন আলোচনা শুরু হয়েছে
তৃণমূলের অন্দরেই।
পার্থবাবু এ দিন বলেন, “এই ধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। আমরা সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে বিরোধীরা আমাদের দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর সুযোগ পাবে। বিরোধী দলের কোনও কর্মসূচি বা তাদের নেতাদের বাধাদান আমাদের দল অনুমোদন করছে না। আমরা তাই দলের নেতা-কর্মীদের সংযত থাকতে বলেছি। কোনও প্ররোচনায় পা না-দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।”
বিরোধী নেতা-কর্মী বা তাঁদের দফতরে হামলার ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য দলের সকলকে ‘সজাগ ও সতর্ক’ থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে। বিরোধীদের উপরে একের পর এক হামলার ঘটনা যে ঘটেছে, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবু বলেছেন, “আমরা খোঁজ নিচ্ছি। যারা এ সব করেছে, তারা আবেগতাড়িত হয়ে করেছে। তবে দল এই আবেগকে অনুমোদন করছে না।”
পক্ষান্তরে, দিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিগ্রহের ঘটনাকে সামনে রেখে বেশ কয়েক দিন ধরে লাগাতার যে সব ঘটনা রাজ্যে ঘটে চলেছে, সে সব ঘটনার কথা উল্লেখ করে এ দিন বাম পরিষদীয় দলের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে রাজ্যপালকে। চিঠিতে বিরোধী দলনেতা লিখেছেন, ‘রাজ্য সরকার বর্তমানে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করার জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। এক দিকে পুলিশ প্রশাসনের একাংশ এবং অন্য দিকে শাসক দলের ছত্রছায়ায় সমাজবিরোধীদের পেশিশক্তি ব্যবহার করে নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে স্তব্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থানায় অভিযোগ দায়ের করা যাচ্ছে না’।
সূর্যবাবুর বক্তব্য, “দিল্লির ঘটনা যে অবাঞ্ছিত, সেই কথা বলে আমরা দুঃখপ্রকাশ করেছি। আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফেও দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে। তার পরেও এমন সব ঘটনা ঘটে চলেছে, যার সঙ্গে দিল্লির ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই! প্রেসিডেন্সির ঘটনার সঙ্গে দিল্লির কী সম্পর্ক? কাল খানাকুলে গিয়েছিলাম। সেখানে যে সব মানুষের ঘরবাড়ি আক্রান্ত হয়েছে, তাঁদের সঙ্গেই বা দিল্লির ঘটনার কী সম্পর্ক?” হামলা বন্ধ হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই এবং রাজ্য প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই তাঁরা রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানাতে বাধ্য হয়েছেন বলে সূর্যবাবু জানিয়েছেন। পাশাপাশি, শাসক দলের হামলায় বিধ্বস্ত কার্যালয় পুননির্মাণে চাঁদা তুলতে এ দিনই গড়িয়াহাটে পথে নেমেছিলেন প্রবীণতম বাম নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ।
শুধু বামেরাই নয়, একদা তৃণমূলের শরিক কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাও এই সব হামলার শিকার হচ্ছেন। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, “রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে সর্বদল বৈঠক ডাকা উচিত।”
তবে প্রদীপবাবুর বক্তব্যকে কোনও গুরুত্ব দেননি পার্থবাবু। কংগ্রেসের দাবিকে কটাক্ষে উড়িয়ে তৃণমূলের মহাসচিব বলেন, “ও সব ক্লাব নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই না!” |