ধোনি বনাম সহবাগ ছাপিয়ে প্র্যাক্টিসে পিচ বিতর্ক |
আবহাওয়া আপাতত অগ্নিগর্ভ দিল্লিতে!
বুধবার রাজধানীর পারদ চল্লিশ ডিগ্রি পেরিয়ে গেল। কিন্তু শুধু তাই বলেই নয়। ধোনি বনাম সহবাগ দামামার মধ্যে কোটলায় প্রাক্টিস পিচের দশা দেখে চেন্নাই সুপারকিংসের তাকরাকা রেগে আগুন হলেন বলেও!
চেন্নাই অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তো প্র্যাক্টিসেই এলেন না। তাঁর না আসার কারণ পিচ কি না, সেটা স্পষ্ট হয়নি। তবে বিকেলে প্র্যাক্টিসে এসে চেন্নাইয়ের রিজার্ভ বেঞ্চও পিচ নিয়ে যে রকম নাক সিটকালো, সেটা দিল্লির হোম গ্রাউন্ড আর কিউরেটর বেঙ্কট সুন্দরমের জন্য মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়। চেন্নাইয়ের এক টেল এন্ডার তো বলেই দিলেন, “জঘন্য প্র্যাক্টিস উইকেট। বল থমকে থমকে ব্যাটে আসছে। এই উইকেটে ভদ্রস্থ ব্যাটিং করা সম্ভবই নয়। আমাদের মতো পিছনের সারির ব্যাটসম্যানরাই এখানে ব্যাট করতে চাইছে না। তা হলে বুঝতেই পারছেন, আমাদের টিমের ভাল ব্যাটসম্যানরা এই প্রাক্টিস পিচ দেখে কতটা বিরক্ত!”
ধোনি না এলেও সুরেশ রায়না, মুরলী বিজয়, মাইকেল হাসিদের নেটে হাল্কা নকিং করতে দেখা গেল। হাত ঘোরালেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ক্রিস মরিস, ডার্ক নানেসরাও। কিন্তু সব মিলিয়ে পুণে ওয়ারিয়র্সের কাছে হেরে দিল্লির ডেরায় আসা চেন্নাইয়ের ক্রিকেটারদের প্রস্তুতিতে যে তাগিদটা প্রত্যাশিত ছিল, সেটার বদলে হাবেভাবে বিরক্তিই ধরা পড়ল বেশি। বেঙ্কট সুন্দরমকে এই নিয়ে ধরা হলে, তিনি অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বললেন, “প্রাক্টিসের উইকেট নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।”
তবে কিউরেটর যা-ই বলুন, কোটলায় অ্যাওয়ে টিমের প্র্যাক্টিসের আয়োজন নিয়ে এটাই প্রথম বিতর্ক নয়। এর আগে দিল্লির শেষ হোম ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদও অসন্তোষ প্রকাশ করে গিয়েছিল। সে বার সকালের জ্বালাময়ী গরম এড়াতে চাওয়া দু’টো দলকে একই সময় প্র্যাক্টিসে ডাকা নিয়ে যথেষ্ট গোলমাল হয়েছিল। দু’দলকে চারটে ব্যাটিং নেটে ব্যাচ ভাগ করে প্র্যাক্টিস সারতে হয়েছিল। ফিল্ডিং প্র্যাক্টটিসও করতে হয়েছিল মাঠ ভাগাভাগি করে। যা নিয়ে হায়দরাবাদ টিম ম্যানেজমেন্ট রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে। |
এ দিন সকালেই বেঙ্গালুরু থেকে ফেরা দিল্লি টিম আর প্রাক্টিসে না নামায় আজ অবশ্য তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। তবে মাঠ আর মাঠের বাইরে জেরবার হয়েই চলেছে দিল্লি। ডেয়ারডেভিলসের সময়টা যে ভাল যাচ্ছে না, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বেঙ্গালুরুর সঙ্গে মঙ্গলবারের রক্তচাপ বাড়ানো ম্যাচে সুপার ওভারে হারায় এই আইপিএলে ওদের টানা হারের সংখ্যাটা বেড়ে পাঁচ হয়েছে। আগের মরসুম থেকে ধরলে যা টানা সাত ম্যাচে হার দাঁড়ায়। পয়েন্টস টেবলেও সবার শেষে। তাই ঘরের মাঠে ধোনি-বাহিনীর বিরুদ্ধে জিতে ঘুরে দাঁড়াতে দল মরিয়া। কিন্তু এ জন্য যাঁর দিকে দিল্লীবাসী তাকিয়ে, সেই বীরেন্দ্র সহবাগ একশো শতাংশ ফিট কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকই যাচ্ছে। বেঙ্গালুরুতে মঙ্গলবার ম্যাচের শেষ তিন ওভার তিনি ফিল্ডিং করেননি। সুপার ওভারেও তাঁকে ব্যাট হাতে নামতে না দেখে অনেকেই আশ্চর্য হয়েছিলেন। এখন শোনা যাচ্ছে সহবাগকে পেড়ে ফেলেছে ‘ডিউ-ফ্যাক্টর’। বেঙ্গালুরুতে রাতে এত হিম পড়েছে যে তার মধ্যে ফিল্ডিং করায় সহবাগের পিঠের পুরনো ব্যাথা আবার চাগাড় মেরে উঠেছে।
চেন্নাইয়ের বোলিং কোচ অ্যান্ডি বিকেল অবশ্য জানিয়ে দিলেন, সহবাগকে হিসাবে ধরেই ঘুটি সাজাচ্ছেন তাঁরা। বিকেল বলছিলেন, “ডিডি আমাদের জন্য ডেঞ্জারাস দিল্লি। দুই ওপেনার সহবাগ আর ওয়ার্নারের জন্যই ওরা অসম্ভব বিপজ্জনক সাইড। মানছি টানা পাঁচটা হেরেছে। কিন্তু সে জন্যই ওদের নতুন করে হারানোর কিছু নেই। ওরা আমাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে। আর সহবাগ-ওয়ার্নার জুটি ক্লিক করে গেলে তো কথাই নেই। আমরা সব রকম বিপদের মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকছি।” মুম্বই আর পুণের কাছে হেরে চিপক-দুর্গের পতনের পরে চেন্নাইও যে চাপে, সেটা বিকেলের কথাতেই পরিষ্কার। বলছিলেন, “আমাদের দলটা এ বার নতুন। কিন্তু এটাও ঠিক নিজেদের দুর্গ, নিজেদের ঘরের মাঠেই আমরা ভাল খেলতে পারছি না। পারফরম্যান্সে অনেক উন্নতি ঘটাতে হবে আমাদের।”
চেন্নাইয়ের সতর্ক থাকার আরও একটা কারণ ‘ল্য অব অ্যাভারেজ’। যা বলছে, দিল্লির জয়ে ফেরা শুধু সময়ের ব্যাপার। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে জয়ের খুব কাছে পৌঁছেও সুপার ওভারে ধাক্কা খেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। কিন্তু চার ম্যাচে দু’টো হারা চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সহবাগদের কপাল খুলে যেতেই পারে! |