অমিত মিশ্রকে আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক করার জন্য পুরো কৃতিত্ব দিয়েও বলব, ১২০ তুলতে পুণে ওয়ারিয়র্সের ম্যাচটাকে একেবারে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া মারাত্মক ভুল হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে ১২০ টার্গেট মানে ‘রান আ বল’। সেখানে কোনও দল যেমনই ব্যাটিং করুক, ১৮ ওভারের মধ্যে খেলা সাঙ্গ করে ফেলা উচিত। বুধবার তার চেয়ে মাত্র এক ওভার বেশি লাগল সহারা স্টেডিয়ামে ম্যাচটা শেষ হতে। তবে সেটা পুণের পক্ষে নয়, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অনুকূলে!
পুণের এ দিন আরও বেশি করে উচিত ছিল ম্যাচটা অতক্ষণ না টানা। কারণ, টিভিতে দেখে নিজে একজন স্পিনার হিসেবে আমার মনে হল, উইকেটে বল বেশ টার্ন করছিল। শুধু অমিত নয়, ওদের টিমের অন্য স্পিনার করণ শর্মার বলও ভাল ঘুরেছে। এই অবস্থায় তো উত্থাপ্পা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজদের আরও বেশি করে দরকার ছিল রানের গতি বাড়ানো। পুণের টিম ম্যানেজমেন্টের স্ট্র্যাটেজি ঠিক বুঝলাম না। তবে এটা বুঝছি, এই হারের পর ম্যাথেউজের ক্যাপ্টেন্সি প্রশ্নের মুখে পড়বে। এমনিতে ধোনির সিএসকে-র মতো মেগাটিমকে আগের ম্যাচে পুণে হারানোয় সে দিনের অস্থায়ী অধিনায়ক রস টেলরের খুব প্রশংসা হয়েছে। এ দিন ম্যাথেউজের পুণে মাত্র সাত রানে শেষ ছ’উইকেট খুইয়ে ১২০ রানের ম্যাচও ১১ রানে হারার পর ওদের নেতৃত্ব-জট হয়তো আরও বাড়বে। |
আমি অবশ্য ব্যক্তিগত ভাবে খুশি অমিতের হাত ধরে হায়দরাবাদ নাটকীয় জয় তুলে নেওয়ায়। সেই অনূর্ধ্ব উনিশ জাতীয় ক্যাম্প থেকে ওর সঙ্গে আমার পরিচয়। বেঙ্গালুরুর এনসিএ-তে কত দিন একসঙ্গে কাটিয়েছি। ছেলেটার সবচেয়ে বড় গুণ প্রচণ্ড পরিশ্রমী। নিজের বোলিংয়ের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সেগুলো সারিয়ে তুলতে পারে। যখন যার হয়ে খেলুক জান দিয়ে খেলে। যার প্রমাণ, আইপিএলে ওর তিনটে হ্যাটট্রিক তিনটে আলাদা ফ্র্যাঞ্চাইজি-র হয়ে। ধারাবাহিকতাও দারুণ। আমি যদি খুব ভুল না হই, অমিত মিশ্র আইপিএল ইতিহাসে সর্বাধিক উইকেটশিকারিদের তালিকায় প্রথম তিনে আছে (আসলে ৮৩ উইকেট নিয়ে দুইয়ে)।
ওর লেগ স্পিনে দারুণ বৈচিত্র। গুগলিটা লা জবাব। এ দিন হ্যাটট্রিক করল দিন্দাকে গুগলিতে বোল্ড করে। তার আগের দু’টো বল ফ্লিপার। যাতে রাহুল শর্মা বোল্ড আর ভুবনেশ্বর কুমার এলবিডব্লিউ। ওই ওভারেই তার দু’টো ডেলিভারি আগে ম্যাথেউজকে নিল সনাতনী লেগ স্পিনে। অবিশ্বাস্য একটা ওভার বললেও সবটা বলা হয় না। এক ওভারে চার উইকেট! যুবরাজ খেললে কি পুণে জিতত? ভেবে লাভ নেই। তবে এক ওভারে চার উইকেট পড়লে হয়তো আর কিছু করার থাকে না।
আসলে একজন লেগ স্পিনারের যখন এত বৈচিত্র থাকে তাকে ‘জাজ’ করে ঠিকঠাক খেলাটা ব্যাটসম্যানদের দারুণ কঠিন হয়ে যায়। অমিতের মতো বোলার এক ওভারে হয়তো দুটো ফ্লিপার দেবে। একটা-দুটো গুগলি। একটা ফ্লাইট করাবে। গোটা দুয়েক নিখাদ লেগ স্পিন। ব্যাটসম্যান সর্বদা ধাঁধায় থাকে পরের বলটা কী আসে তা নিয়ে। ওর মতো বৈচিত্র বিশ্বে খুব কম লেগ স্পিনারের আছে। দেশকেও ওর এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে।
টি-টোয়েন্টিতে বেশির ভাগ স্পিনার ভাবে যত জোরে বল করা যায় তত ভাল। ব্যাটসম্যানকে আটকে রাখা যাবে। কিন্তু ইন্সট্যান্ট ক্রিকেটেও দরকার বলের স্পিডের ভেরিয়েশন। অমিত ঠিক যেটা করছে। তবে ইংল্যান্ডে বছর দুই আগে ভারতের ০-৪ হারের সিরিজে অমিতকে দেখে আমার মনে হয়েছিল হাওয়ায় একটু স্লো বল ছাড়ছে। দেশে ফিরে ও দ্রুত সেই ভুল শুধরে নেয়। সঙ্গে ব্যাটিংয়েও ধার বাড়িয়েছে। অনেকেই বোধহয় জানেন না, এ মরসুমে রঞ্জিতে অমিতের ডাবল সেঞ্চুরি আছে হরিয়ানার হয়ে।
এ দিনই তো হ্যাটট্রিকের মতো ওর ২৪ বলে ৩০ রানের ইনিংসটাও আদৌ ভোলার নয়। নইলে হায়দরাবাদ কিন্তু ১১৯-য়েও পৌঁছয় না! |
হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক অমিতের |
আইপিএল ওয়ান
১৫ মে ২০০৮ |
কোটলায় দিল্লি ডেয়ারভিলসের হয়ে। বিপক্ষ ডেকান চার্জাসর্।
শিকার: রবি তেজা, প্রজ্ঞান ওঝা, আরপি সিংহ। |
আইপিএল ফোর
২১ মে ২০১১ |
ধরমশালায় ডেকান চার্জার্সের হয়ে। বিপক্ষ কিংস ইলেভেন পঞ্জাব।
শিকার: রায়ান ম্যাকলারেন, মনদীপ, রায়ান হ্যারিস। |
আইপিএল সিক্স
১৭ এপ্রিল ২০১৩ |
পুণেতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে। বিপক্ষ পুণে ওয়ারিয়র্স।
শিকার: ভুবনেশ্বর কুমার, রাহুল শর্মা, অশোক দিন্দা। |
|
আইপিএলে অমিত মিশ্র দ্বিতীয় বোলার যিনি সতীর্থদের সাহায্য ছাড়াই হ্যাটট্রিক করলেন। বুধবার তাঁর হ্যাটট্রিকে দু’টি বোল্ড, একটি এলবিডব্লিউ। এই কৃতিত্ব টুর্নামেন্টে আর আছে মাখায়া এনতিনির (তিনটিই বোল্ড)। |
|