পেশাদার কল্যাণ সওয়াল করলেন পুরসভার বিরুদ্ধে |
তৃণমূল পরিচালিত হুগলির শ্রীরামপুর পুরসভার বিরুদ্ধে এ বার আইনি লড়াইয়ে নামলেন শ্রীরামপুরেরই দলীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংসদের এই ‘পেশাদারিত্বে’ ফের বিড়ম্বনায় তৃণমূল।
এর আগে সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা কর্তৃপক্ষের হয়ে আদালতে দাঁড়িয়ে দলীয় সংগঠনের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে লড়েছেন এই তৃণমূল সাংসদ। রাজ্যের খাদ্য দফতরের ‘দুর্নীতি’ নিয়েও সওয়াল করেছেন আদালতে। তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিতর্ক হয়েছে। দলের অন্দরেও চাপানউতোর কম হয়নি। এ বার নিজের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত শ্রীরামপুর পুরসভার বিরুদ্ধে মামলা লড়লেন কল্যাণ। এই নিয়ে শ্রীরামপুরের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের মধ্যে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়াও হয়েছে।
কল্যাণবাবুর অবশ্য স্পষ্ট বক্তব্য, “আমি পেশাদার আইনজীবী। এটাই আমার রুটি-রুজি। ফলে, যে কারও হয়ে আমি মামলা লড়তেই পারি। এ নিয়ে পুরসভার কেউ আমাকে কিছু বলেননি। ঘাটের লিজ নিয়ে স্বার্থ জড়িয়ে আছে, এমন কেউ আড়ালে-আবডালে যা খুশি বলতে পারে।”
মামলাটি শ্রীরামপুরের জগন্নাথ ঘাট এবং টিটাগড়ের লক্ষ্মীঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচলের লিজ দেওয়া নিয়ে। সম্প্রতি শ্রীরামপুর পুরসভা ওই লিজের জন্য দরপত্র চেয়েছিল। পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ দর দিয়ে সুবল সাহা নামে এক জন তিন বছরের লিজ পান। কিন্তু ওই দরপত্রে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় অংশগ্রহণকারী অন্য একটি পক্ষ। পুরসভার বিরুদ্ধে সওয়াল করেন আইনজীবী-সাংসদ। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, যাবতীয় নিয়ম মেনেই দরপত্রের পদ্ধতি চালানো হয়। কিন্তু হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে কল্যাণবাবু ওই দরপত্র বাতিল করার পক্ষে সওয়াল করেন।
দলের সাংসদের এই ভূমিকায় স্বভাবতই অখুশি শহরের তৃণমূল কর্মীদের অনেকে। যদিও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না। পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটুকু বলতে পারি, নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে। অন্য কোনও ব্যাপারে মন্তব্য করব না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলরের ক্ষোভ, “দিন-রাত এক করে যাঁর হয়ে প্রচার করলাম তিনি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা লড়ছেন, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে।”
পুরপ্রধানের অনুগামী বলে পরিচিত এক নেতার বক্তব্য, “সাংসদ পুরসভার বিরুদ্ধে মামলা লড়ছেন, এটা কর্মীদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে। কর্মীদের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে আমাদের। অন্য কেউ কি তাঁর জায়গায় মামলা লড়তে পারতেন না!” ওই তৃণমূল নেতার কথায়, “সাংসদ নিজে এই ভাবে মামলা লড়লে দলের ভাবমূর্তির পক্ষেও তা ক্ষতিকর। যিনি সব নিয়ম মেনে সর্বোচ্চ দর ডেকেও মামলায় জড়ালেন, তিনিও তো আমাদের দলেরই কর্মী।” সাংসদ অবশ্য বলেন, “দরপত্রে কে বরাত পাচ্ছে, কে পাচ্ছে না তাতে তৃণমূলের রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” |