সিআইডি ব্যর্থ হলেই সিবিআই
নাসিরুদ্দিন কি চক্রান্তেরই বলি, রিপোর্ট তলব
সিআইডি-র কাজে আগেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার উচ্চ আদালত ফের জানাল, ধনিয়াখালি থানার লক-আপে কাজি নাসিরুদ্দিন মোল্লার মৃত্যু নিয়ে তদন্তের অগ্রগতিতে তারা সন্তুষ্ট নয়। ওই মৃত্যুর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখে দু’সপ্তাহের মধ্যে সিআইডি-কে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। এবং এটাই শেষ সুযোগ। রিপোর্ট সন্তোষজনক না-হলে তারা সিবিআই-কে তদন্তের দায়িত্ব দিতে বাধ্য হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট।
শুনানির জন্য মামলাটি এ দিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে। সিআইডি-র তরফে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট পেশ করা হয়। ওই রিপোর্ট দেখে ডিভিশন বেঞ্চের মনে হয়েছে, জেলা পুলিশের হাত থেকে সিআইডি-কে তদন্তভার দেওয়ার পরে এক এসআই-সহ তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা ছাড়া তদন্তে কার্যত আর কোনও অগ্রগতিই হয়নি।
তখনই আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, পুলিশি হাজতে নাসিরের মৃত্যুর পিছনে ষড়যন্ত্র আছে বলে তাঁর পরিবারের সন্দেহ। সত্যিই চক্রান্ত করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখা উচিত। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে।
গত ১৮ জানুয়ারি ধনিয়াখালি থানার লক-আপে তৃণমূলকর্মী নাসিরকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। সে-দিন সন্ধ্যায় নাসির নিজের ছোট ট্রাক নিয়ে বেরিয়েছিলেন। মদনমোহনতলায় তাঁর ট্রাক আটকায় পুলিশ। বচসা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, পুলিশ মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায় নাসিরকে। পুলিশ বলেছিল, নাসিরকে মারা হয়নি। গাড়ির যথাযথ কাগজপত্র না-থাকায় তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানার শৌচাগারে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধনিয়াখালি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তাঁর পরিবার ও এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ লক-আপে নাসিরকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এই নিয়ে পরের দিন ওই থানায় তুলকালাম বাধে। বিক্ষোভ-ভাঙচুর হয়। আন্দোলনে নামে কংগ্রেস এবং সিপিআই (এমএল) লিবারেশন।
ওই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে এক আইনজীবী হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা করেন। হাইকোর্ট তদন্তভার দেয় সিআইডি-কে। কিন্তু সিআইডি-র রিপোর্টে সন্তুষ্ট হতে পারেনি তারা। কেন এবং কোন ধারায় নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তার যথাযথ ব্যাখ্যা ছিল না রিপোর্টে। গ্রেফতারের এক ঘণ্টার মধ্যেই নাসিরের মৃত্যু হয় বলে সিআইডি তাদের রিপোর্টে যা লিখেছে, তা-ও কাঁচা বলে মনে হয়েছে কোর্টের। রিপোর্টে সিআইডি বলেছে, গ্রেফতারের পরে থানায় ঢুকেই পড়ে গিয়েছিলেন নাসির। তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। পড়ে যাওয়ার পরেই পুলিশ তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের পথে রওনা হয়। পথেই মৃত্যু হয় নাসিরের। অর্থাৎ নাসিরের মৃত্যু যে লক-আপে হয়নি, রিপোর্টে সেটাই উল্লেখ করেছে সিআইডি।
বিচারপতি বাগচী সিআইডি-র কাছে জানতে চান, লক-আপ বা অন্য কোথায় মৃত্যু হল, সেটা বড় কথা নয়। মৃত্যু হয়েছে পুলিশি হেফাজতে। তাই মূল প্রশ্ন, ওই ব্যক্তির মৃত্যু পুলিশের অত্যাচারে হয়েছে কি না। সিআইডি এখনও হাইকোর্টের এই প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।
আইনজীবী বিকাশবাবু এই সময়েই তৃণমূলের গোষ্ঠী-বিরোধের কথা তোলেন। তিনি বলেন, ধনিয়াখালি থানা এলাকায় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক এবং তৃণমূলকর্মী নাসিরের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব কোনও গোপন বিষয় নয়। তাদেরই কোনও গোষ্ঠী পুলিশকে ব্যবহার করেছিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। নাসিরের মৃত্যুর পরেই কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, পুলিশকে ব্যবহার করে তৃণমূলের একটি অংশ নাসিরকে খুন করিয়েছে। এই অবস্থায় গোটা ঘটনা সাজানো এবং এই মৃত্যু ষড়যন্ত্রের ফল কি না, তা দেখা উচিত বলে সওয়াল করেন বিকাশবাবু। হাইকোর্ট বিকাশবাবুর বক্তব্যে যুক্তি খুঁজে পেয়েছে। সিআইডি-কে তাই এখন রিপোর্ট দিয়ে বলতে হবে, নাসিরের মৃত্যুতে চক্রান্ত ছিল কি না।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.