|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
যুক্তরাষ্ট্রীয়তা |
রাজধানী দিল্লিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনিক ও পুলিশি সংস্কারের একগুচ্ছ নূতন প্রস্তাব বিবেচনার জন্য আহূত মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন কার্যত ব্যর্থ হইয়াছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ আটজন মন্ত্রী সম্মেলনের মঞ্চে উপস্থিত থাকিলেও অধিকাংশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই গরহাজির ছিলেন। অনেক রাজ্য নবীন মন্ত্রীদের পাঠাইয়া প্রতিনিধিত্বের দায় রক্ষা করে। ত্রিপুরা, ওড়িশা ও নাগাল্যান্ড ছাড়া আর কোনও অকংগ্রেসি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাজিরা না-দেওয়া, কেন্দ্রীয় শাসক দল কংগ্রেস শাসিত মহারাষ্ট্র, দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান বা কেরলের মুখ্যমন্ত্রীদেরও অনুপস্থিতি নিঃসন্দেহে কেন্দ্রকে বার্তা দেয়: কোনও রাজ্যই নিজস্ব প্রশাসনিক এক্তিয়ারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করিতে প্রস্তুত নয়। সেই হস্তক্ষেপ প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ হিসাবে আসিলেও তাহা প্রত্যাখ্যান করিতে রাজ্যগুলি দৃঢ়সঙ্কল্প।
এমনটা যে ঘটিবে, তাহা জানাই ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে আসর সাজাইয়া বসিলে কী হইবে, তাঁহাকে খুশি করিতে যে মুখ্যমন্ত্রীরা সার দিয়া বিজ্ঞান ভবনে প্রবেশ করিবেন না, তাহার পূর্বাভাস ছিলই। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার যেমন তাঁহার প্রেরিত চিঠিতে কিছু সুপারিশ সম্পর্কে তাঁহার আপত্তির কথা জানাইয়াছিলেন, যাহাতে পুলিশ প্রশাসনে সংস্কার প্রবর্তনের প্রস্তাব ছিল। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের হাতে থাকিয়া যাওয়া সেই কতিপয় বিষয়গুলির অন্যতম, যেখানে কেন্দ্র এখনও থাবা বসাইতে পারে নাই। তথাপি কখনও সন্ত্রাসবাদী মোকাবিলার জাতীয় কর্তব্যের দোহাই দিয়া, কখনও আন্তঃরাজ্য সংগঠিত অপরাধচক্রের চাঁইদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ ও ক্রিয়াকলাপ মোকাবিলার অজুহাতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির উপর একতরফা ভাবে নানা বন্দোবস্ত চাপাইয়া দিতে উৎসুক। রাজ্যে রাজ্যে জাতীয় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কেন্দ্র (এনসিটিসি) গড়িয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সমান্তরাল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার এমনই একটি খিড়কিদুয়ারি কেন্দ্রীয় উদ্যোগ কিছু কাল আগে মুখ্যমন্ত্রীদের সমবেত আপত্তি ও প্রতিবাদে বানচাল হইয়া যায়। কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলির ক্ষমতা ও এক্তিয়ার খর্ব করার প্রবণতা সম্মেলনেও প্রকট হইয়াছে। কংগ্রেস-শাসিত অসম এবং হরিয়ানা, উভয়েই প্রস্তাবিত প্রশাসনিক সংস্কার বিষয়ে আপত্তি তোলে।
এই আপত্তি অযৌক্তিক নহে। ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবিন্যাসে যে ভারসাম্য বজায় রাখার নিদান আছে, তাহা বিপন্ন করিয়া বারংবার কেন্দ্রের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা দেখা গিয়াছে। জরুরি অবস্থার আমলে এই প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তবে অন্যান্য সময়েও কেন্দ্রীয় শাসক দল রাজ্যগুলির এক্তিয়ার নিয়ন্ত্রণ করা ও তহবিল আটকাইয়া রাখিবার চেষ্টা করিয়া থাকে। এ কাজে প্রায়শ যোজনা কমিশনকেও ব্যবহার করা হয়। গণতন্ত্র কিন্তু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ দাবি করে। রাজ্যের সঙ্কুচিত এক্তিয়ারে কেন্দ্রের অধিকন্তু হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ তাহার অপছন্দ। কথায়-কথায় রাজ্যগুলিকে রকমারি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে টানিয়া আনার প্রয়াস যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী এবং পরিত্যাজ্য। |
|
|
|
|
|