জীবন ধারণে গাঁধীবাদই হাতিয়ার বিষুয়া ভগতের
গুমলা রোড থেকে বাঁ দিকে ঘুড়ে লাল সুড়কির মেঠো পথ ধরে খানিকটা এগিয়ে চিংড়ি গ্রাম। অত্যন্ত সাধারণ একটি মাটির বাড়ি। কিন্তু এই বাড়িটির প্রতিটি ধূলিকণায় জড়িয়ে রয়েছে ছোটনাগপুর মালভূমির ওঁরাও জনজাতির অহিংস আন্দোলনের ইতিহাস। আজও এই বাড়ির সদস্যরা এক গালে চড় খেলে অন্য গাল বাড়িয়ে দিয়ে গাঁধীগিরি করার পক্ষপাতী। বাড়ির বাইরে বেরোলে মাথায় গাঁধী টুপি আর খাদি ব্যবহারই তাঁদের রেওয়াজ। আজও এঁরা লাল রং-এর বিরোধী। তাই তাঁরা মাওবাদীদেরও ঘোর বিরোধী। গুমলার বাসিন্দারা এই বাড়িটিকে ‘টানা বাবার বাড়ি’ বলেই জানেন।
বাড়ির দরজায় গিয়ে খোঁজ করতেই আদুল গায়ে লুঙ্গি পড়ে বেরিয়ে এলেন বিষুয়া ‘টানা’ ভগত। ইনি টানা বাবার নাতি। পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম। কিন্তু কে এই টানা বাবা? ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি ক্ষুদ্র অধ্যায় ছোটনাগপুর মালভূমির ওঁরাও আদিবাসীদের ‘টানা ভগত আন্দোলন’। আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন যাত্রা ওঁরাও। অহিংসার পথে চলা সেই আন্দোলনকে পরে রামগড় কংগ্রেসে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন মহাত্মা গাঁধী। ঝাড়খণ্ডে যাত্রা ওঁরাও পরিচিত টানা ভগত নামেই।
গ্রামের নয়াটোলি মহল্লার অত্যন্ত সাধারণ এই মাটির বাড়ি থেকেই একদিন টানা ভগতকে গ্রেফতার করেছিল ইংরেজ পুলিশ।
চিংড়িগ্রামে বিষুয়া ভগত। —নিজস্ব চিত্র
টানার নাতি বিষুয়া ভগতের কথায়, “নেতারা এসেছেন। ভোট নিয়েছেন। আর ফিরে দেখেননি। কেউ কিছু করেননি। আজও আমরা অহিংসাতেই বিশ্বাসী। যা আদিবাসী স্বভাবের বিরোধী। বাপুকে আমরা যেভাবে আজও নিজেদের অন্তরে রেখেছি কেউ তেমনটা করেছেন কিনা সন্দেহ।”
গ্রাম থেকে ছিয়াত্তর কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের উপরে আজকের বহুল পরিচিত পর্যটন স্থল নেতারহাট। চিংড়ির বাসিন্দাদের দাবি, আসল নাম ছিল ‘নেচার হার্ট’। আদিবাসী উচ্চারণে তাই হয়ে গিয়েছে নেতারহাট। ইংরেজরা গরমে ছুটি কাটানোর জন্য এই জায়গাটি তৈরি করে। তখন পাহাড়ে মাথায় করে মাল তোলার জন্য গুমলার আদিবাসীদের চাবুক মারতে মারতে কাজে নিয়ে যেত ইংরেজরা। সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে গুমলায় প্রথম অহিংস আন্দোলন গড়ে তোলেন যাত্রা ওঁরাও। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে ছোটনাগপুরের জঙ্গল মহলে। বিষুয়া জানান, “শিকারে পারদর্শী যাত্রা ওঁরাও পাখির বাসা থেকে ডিম চুরি করতে আনছিলেন। ডিমগুলি তাঁর হাত থেকে পড়ে যায়। পুষ্ট ডিমের ভিতর থেকে লাল রক্ত বেরোতে দেখেই তাঁর মানসিক পরিবর্তন হয়। তারপর থেকেই তিনি রক্তপাতের বিরোধী। টানার নির্দেশ ছিল: লাল লঙ্কা, টম্যাটো, পিঁয়াজ কিংবা তরমুজ খাবে না। আজও খান না বিষুয়ারা। কোনও রকম নেশা করেন না। মহাত্মা গাঁধীর অনুসরণে আজও সাধ্য মতো খাদি ব্যবহার করেন।
টানা ভগতের নেতৃত্বে গুমলার আদিবাসীরা ব্রিটিশ সরকারকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ব্রিটিশরা সেই সব জমি নিলাম করে তুলে দেয় জমিদারদের হাতে। যার ফলে গুমলার ওঁরাওদের অনেকেরই জমি চলে যায়। বিষুয়ার ক্ষোভ, “স্বাধীন দেশের সরকার সেই জমি ওঁরাওদের ফেরত দেওয়ার কোনও প্রয়াসই নেয়নি। জঙ্গলে মহুয়া কুড়িয়ে আমাদের পেট চলে। আজ চরম দারিদ্র আমাদের। খাদি কিনতে পারি না।”
গত বছর রাহুল গাঁধী যখন ঝাড়খণ্ডে এসেছিলেন তখন বিষুয়া এবং টানা ভগত সম্প্রদায়ের লোকজন তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। জমি ফেরত চান। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, দ্রুত ব্যবস্থা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও প্রত্যুত্তর আসেনি সরকারের কাছ থেকে। কেউ কথা রাখেনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.