সুপ্রিম কোর্টে এগিয়ে মানবাধিকার
মনোরমা হত্যার রিপোর্ট প্রকাশের নির্দেশ,
সময় চায় মণিপুর সরকার
ফস্পা ও মণিপুর সরকারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় লড়াইয়েও জয়ী মানবাধিকার। এই মাসের প্রথম সপ্তাহে মণিপুরে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যা’ সংক্রান্ত ছ’টি মামলা নিয়ে হেগড়ে কমিটি সুপ্রিম কোর্টে যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ছ’টি ক্ষেত্রেই ভুয়ো সংঘর্ষে নির্দোষদের হত্যা করে জঙ্গি ‘সাজানো’ হয়েছে। এর পর গত সপ্তাহে আফস্পা ও ভুয়ো সংঘর্ষ সংক্রান্ত দ্বিতীয় শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট মণিপুর সরকারকে ২০০৪ সালের থংজাম মনোরমার ধর্ষণ ও হত্যা-সহ ৩৩টি মামলার বিচারবিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে।
৯ বছর আগের ১১ জুলাই, আসাম রাইফেল্স-এর জওয়ানরা মনোরমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ততদিনে আফস্পা বিরোধী শর্মিলা চানুর আন্দোলন চার বছরে পড়েছে। পরের দিন মনোরমার গুলিতে ঝাঁঝরা শরীরটি উদ্ধার হয়। তার যৌনাঙ্গের ভিতরেও গুলি করা হয়েছিল। ময়না তদন্তে প্রমাণ হয় মনোরমাকে ধর্ষণ করার পরে হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনার প্রতিবাদে কাংলা দূর্গে সেনা ঘাঁটির সামনে, প্রকাশ্য রাজপথে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে ১২ জন মহিলা বিরল প্রতিবাদ জানান। দেশজুড়ে শোরগোল ওঠে। বিচারপতি উপেন্দ্র তাঁর তদন্ত রিপোর্টে আসাম রাইফেল্সকেই দোষী সব্যস্ত করলেও, ঘটনাটি নিয়ে আজ অবধি কারও শাস্তি হয়নি। রিপোর্টটিও প্রকাশ করা হয়নি।
ন’বছর আগে তোলা ছবি। মনোরমার মৃত্যুর প্রতিবাদে কাংলা ফোর্টে,
সেনা শিবিরের গেটে মণিপুরি মহিলাদের সেই নজিরবিহীন প্রতিবাদ।
সুপ্রিম কোর্টে মনোরমার পরিবারের আইনজীবী কলিন গনজালভেস বলেন, “প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সকলকে আবেদন জানিয়েও নিরাপত্তাবাহিনীর বিপক্ষে থাকা ওই রিপোর্টটি প্রকাশ করা যায়নি। গত এক দশকে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু কেউ সাজা পাননি। আফস্পায় বলীয়ান নিরাপত্তাবাহিনীও তাই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে।”
মণিপুরের দু’টি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, আফস্পা আইনের আড়ালে ১৯৭৯ থেকে ২০১২ সাল অবধি নিরাপত্তাবাহিনীর ১৫২৮ জন নিরাপরাধের প্রাণ নিয়েছে। ঘটনাগুলির প্রকৃত সত্য উন্মোচনের জন্য দু’টি সংগঠন মিলিতভাবে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। তার জেরেই চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট সন্তোষ হেগড়ে, প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জে এম লিংডো ও কর্নাটকের প্রাক্তন ডিজি অজয়কুমার সিংহকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করে। প্রাথমিকভাবে ছ’টি ঘটনাকে তদন্তের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। মণিপুরে এসে ঘটনার তথ্য-প্রমাণ বিচার করে, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পরে ১ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে সেই রিপোর্টটি জমা দেওয়া হয়। রিপোর্টে ভুয়ো সংঘর্ষ বিষয়ে সরাসরি নিরাপত্তাবাহিনীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। চলতি মাসের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আফতাব আলম ও রঞ্জনা প্রকাশ দেশাই-এর ডিভিশন বেঞ্চ বলে, অবিলম্বে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উচিত মণিপুরের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখা। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মনোরমার ঘটনা-সহ ৩৩টি ঘটনার বিচারবিভাগীয় রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
তবে সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান, বিচারবিভাগীয় তদন্ত রিপোর্টের বিষয়গুলি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এ জন্য সময় প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, পরবর্তী শুনানি এক মাস পরে হবে। সেই শুনানির সময় আদালতে যেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রতিনিধি হাজির থাকেন।
ভুয়ো সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে ৩৩টি ঘটনা নিয়ে বিশেষ তদন্ত দল গড়ার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। মণিপুর ‘হিউম্যান রাইট্স অ্যালার্ট’-র সভাপতি বাবলু লোইথংবাম বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ মণিপুরের আফস্পা বিরোধী লড়াই-এর ক্ষেত্রে ‘মাইলস্টোন’। চানু ও আমাদের এতদিনের লড়াই অবশেষে আলোর দিশা পাচ্ছে।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.