|
|
|
|
ফের কালবৈশাখীর আশঙ্কা রাজ্যে |
আয়লার গতিতে বৈশাখী ঝড় শহরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
ঘূর্ণিঝড় আয়লাকে ছুঁয়ে ফেলল বুধবারের কালবৈশাখী!
কালবৈশাখী ঝড়ের তীব্রতা শেষ কবে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি পেয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না আবহবিদেরা। ২০০৯ সালের ২৫ মে কলকাতায় আয়লা-র তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ১১৫-১১৬ কিলোমিটার (সুন্দরবনে ১২০ কিলোমিটার)। বুধবার সন্ধ্যায় যে কালবৈশাখী কলকাতার বুকে আছড়ে পড়ল, তারও তীব্রতার উচ্চসীমা ছিল ঘণ্টায় ১১৬ কিলোমিটার।
যে সব গাছ কলকাতা শহরে উপড়ে পড়েছে সেগুলি দেখেই ঝড়ের তীব্রতা সম্পর্কে একটা ধারণা করা যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। এক আবহবিদের কথায়, “ডালগুলিকে কেউ যেন মুচড়ে মুচড়ে ভেঙেছে। ঠিক যেমনটি হয়েছিল সেই আয়লার সময়ে।” গত সপ্তাহে একটা দুর্বল কালবৈশাখী পেয়েছিল কলকাতা। বুধবার সন্ধ্যায় মরসুমের ঘাটতি মিটিয়ে প্রচণ্ড গতির ঝড় নিয়ে মহানগরীর বুকে আছড়ে পড়ল কালবৈশাখী।
দক্ষিণবঙ্গের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে গেল বেশ কিছুক্ষণের জন্য। বেঁকে গেল বিদ্যুতের খুঁটি, পড়ে যায় হাই-টেনশন লাইনের পোল, উড়ে গেল টিনের চাল। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন এলাকায় বেশ কয়েকটি সাবস্টেশন বসে যাওয়ায় উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু অঞ্চলে দীর্ঘক্ষণ আলো ছিল না। তার ছিঁড়ে শিয়ালদহ এবং হাওড়ার সব শাখাতেই ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকল বহুক্ষণ ধরে। রেল সূত্রে খবর, হাওড়া-বধর্মান মেন লাইন, হাওড়া-খড়্গপুর, খড়্গপুর-টাটানগর হাওড়া-মেদিনীপুর অন্যদিকে, শিয়ালদহ মেন লাইন, বনগাঁ, ও শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় গড়ে সাড়ে ছ’টার পর আর ট্রেন চালানো যায়নি। বেশ কয়েকটি বিমানও কিছু ক্ষণ নামতে না পেরে কলকাতা বিমানবন্দরের উপরে চক্কর কাটতে বাধ্য হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড়ে গাছ চাপা পড়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম দুরন্ত রায় (৪০)। |
|
বিদ্যুৎ-সন্ধ্যা। বুধবার হাওড়ার বঙ্কিম সেতু থেকে দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি। |
কী ভাবে এতটা শক্তি পেল এ দিনের কালবৈশাখী?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, দিনের ঊধ্বর্র্গতির তাপমাত্রা আর বাতাসে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি গত সাত দিন ধরেই ঝড়ের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করছিল। কিন্তু ব্যাটে-বলে কিছুতেই হচ্ছিল না। মঙ্গলবার বিকেলে একটা উল্লম্ব মেঘ তৈরি হতে শুরু করেছিল ঝাড়খণ্ডে। কিন্তু তা বাঁকুড়া, বর্ধমানের উপরে এসে ভেঙে যায়। তার জেরে কলকাতায় বইতে থাকে ঠান্ডা হাওয়া। আকাশে জমা হয় কালো মেঘ। তাপমাত্রা অনেকটা নেমে যায়। বুধবার সকাল থেকে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেঘ কেটে যায়। তাপমাত্রা বাড়তে থাকে চড়চড় করে।
এ দিন বিকেলে আবহাওয়া দফতরের উপগ্রহচিত্র দেখেই আবহবিদেরা বুঝে যান, জোরদার কালবৈশাখী ধেয়ে আসছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “যে ভাবে উল্লম্ব মেঘের উচ্চতা বাড়ছিল, তাতেই আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই। তখনই আমরা সতর্কতা জারি করে দিয়েছিলাম।” কিন্তু সেই মেঘ কলকাতার উপরে ভেঙে যে ঘণ্টায় ১১৬ কিলোমিটার গতিবেগের ঝড় তৈরি করবে সেই ধারণা তাঁদেরও
ছিল না। এমনিতে ঝড়ের গতি
ছিল ৮০ কিলোমিটার মতো, যা অস্বাভাবিক নয়। |
|
কিন্তু তারই মধ্যে একটা মুহূর্তে হঠাৎ গতি বেড়ে ১১৬ কিলোমিটার ছুঁয়ে ফেলে। গোকুলবাবু বলেন, “ঝাড়খণ্ড থেকে উপকূলীয় বাংলাদেশ পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। সেটি শক্তিবৃদ্ধি করে জলীয় বাষ্প টানছে।” এর ফলে গোটা রাজ্য জুড়েই কালবৈশাখীর অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে। কোথাও কোথাও হতে পারে শিলাবৃষ্টিও। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে আরও কালবৈশাখী হতে পারে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে বলা হয়, স্বাভাবিক নিয়মে মার্চ মাসে দু’টি এবং এপ্রিল মাসে চারটি কালবৈশাখী হওয়ার কথা কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায়। এ বার মার্চে একটিও হয়নি। ১১ এপ্রিল মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী হলেও মহানগরীর বেশির ভাগ এলাকাই বৃষ্টি পায়নি। এ দিন সুদে আসলে সব উসুল হয়ে গেল।
|
পুরনো খবর: আয়লায় তছনছ দক্ষিণবঙ্গ |
|
|
|
|
|