|
|
|
|
বৃদ্ধাকে ঘুষি মেরে ছিনতাই সল্টলেকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বিধাননগর কমিশনারেট গড়ে তোলার পরেও সল্টলেক যে অপরাধীদের ‘মুক্তাঞ্চল’ হয়েই থেকে গিয়েছে, বুধবার তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল একটি বেপরোয়া ছিনতাইয়ের ঘটনা। এ দিন সকালের ব্যস্ত সময়ে কেষ্টপুর খালপাড় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এ ই ব্লকের গ্রিনভার্জে এক বৃদ্ধার গলার হার ছিনতাই করে অনায়াসেই পালায় এক দুষ্কৃতী। শুধু তা-ই নয়, বৃদ্ধা বাধা দেওয়ায় মেরে তাঁর মুখ ফাটিয়ে দিতেও কসুর করেনি সে। এবং পুলিশ তা জানতে পেরেছে স্থানীয় কাউন্সিলরের ফোনে।
এই ঘটনায় ফের আলোচনায় সল্টলেকের সুরক্ষা। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, নজরদারি কতটা শিথিল হলে দুষ্কৃতীরা এত বেপরোয়া হতে পারে। কমিশনারেট গড়ে লাভ কী হল?
|
জখম তপতী দত্ত।
— নিজস্ব চিত্র |
গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তপতী দত্ত নামে ওই বৃদ্ধাকে। তাঁর দু’টি দাঁত মাড়ির ভিতর দিকে ঢুকে গিয়েছে। তিনটি সেলাই পড়েছে মাড়িতে। মুখ ফুলে গিয়েছে। আতঙ্ক কাটিয়ে খানিকটা সুস্থ হওয়ার পরে ফের ওই দাঁত ঠিক করতে চিকিৎসা করাতে হবে তপতীদেবীকে।
ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের দাবি, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছে না কমিশনারেটের পুলিশ। পুলিশ কোথায় থাকে, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। জবাবে অবশ্য ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসই সম্বল পুলিশের।
কী ঘটেছিল এ দিন সকালে?
এ ই ব্লকের ৮৬৭ নম্বর বাড়ির গৃহকর্ত্রী তপতীদেবী জানান, সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তাঁর বাড়ির কাছে গ্রিনভার্জে নিমপাতা পাড়ছিলেন তিনি। আচমকাই পিছন থেকে কেউ এসে তার মুখ চেপে ধরে। নিঃশ্বাস ছাড়তেও কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। সেই অবস্থাতেও দুষ্কৃতীর হাত চেপে ধরেন তিনি। তবু টের পান তাঁর গলার হারটি টানার চেষ্টা করছে ওই দুষ্কৃতী। প্রাণপণে আটকানোর চেষ্টা করলে সজোরে তাঁর মুখে ঘুষি মারে ওই দুষ্কৃতী। সম্বিত ফিরে পেয়ে তিনি দেখেন, মুখ থেকে রক্ত ঝরছে। তপতীদেবীর চিৎকারে ছুটে যান বাসিন্দারা। ততক্ষণে হার নিয়ে চম্পট দিয়েছে বেপরোয়া দুষ্কৃতী।
ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছেন ওই বৃদ্ধা। তিনি বলেন, “সাতসকালে এমন হবে, ভাবতেও পারিনি।” তপতীদেবীর ছেলে, ব্যবসায়ী সোমজিৎ দত্ত বলেন, “খানিকটা ভয় তো আছেই। দিনের বেলাতেই নিরাপদ নই। মা রোজ গ্রিনভার্জে যেতেন, এমনটাও নয়। কিন্তু কী আর করতে পারি!”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, খালপাড় সংলগ্ন ব্লকগুলিতে কোনও অপরাধ ঘটিয়ে দ্রুত সল্টলেক থেকে পালাতে সক্ষম হচ্ছে দুষ্কৃতীরা। তা হলে গ্রিন পুলিশ কোথায় থাকে, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। এলাকার মহিলাদের প্রশ্ন, এর পরে কি তাঁরা গয়না পরে বা হাতে ব্যাগ নিয়েও বেরোতে পারবেন না?
স্থানীয় কাউন্সিলর স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনা জানতে পেরে পুলিশকে জানাই। সন্ধ্যা থেকে রাতভর গ্রিনভার্জ এলাকায় নজরদারি করে পুলিশ। দিনেদুপুরে এমন ঘটবে, ভাবা যায় না। তবে এই ধরনের অপরাধ আগের থেকে কমেছে।”
বাসিন্দাদের সংগঠন ‘বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “পুলিশ কী কাজ করে, তারাই জানে। কিন্তু সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে তারা ভাবিত নয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
পুলিশ সূত্র বলছে, গত বছরে পরপর ছিনতাইয়ের পরে একাধিক দুষ্কৃতীকে ধরা হয়েছে। তার বেশ কিছু দিন পরে এই ধরনের ঘটনা ঘটল।
বাসিন্দাদের অভিযোগ মানতে নারাজ অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণকলি লাহিড়ী। তিনি বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নিশ্চিত ভাবেই ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কোথাও কোনও গাফিলতি থাকে, তা দেখা হবে।” |
|
|
|
|
|