ধরা দিয়েই জামিন পার্থদের • ক্ষমা চাইলেন ঋতব্রত
সিপিএম-কে চাপে ফেলে আত্মসমর্পণ
বুধবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন প্রেসিডেন্সি-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ বসু এবং দলের ছাত্র-নেতা তমোঘ্ন ঘোষ। দুই নেতাকে আত্মসমর্পণ করিয়ে বস্তুত সিপিএমের উপরেই চাপ বাড়াল শাসক দল। কারণ, দিল্লিতে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত এসএফআই এবং সিপিএম নেতাদের কাউকে এখনও গ্রেফতার করেনি সে রাজ্যের পুলিশ। দল তাঁদের আত্মসমর্পণ করতেও বলেনি। তবে এ দিন এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তর স্মরণসভায় দিল্লির ঘটনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তথা অন্যতম অভিযুক্ত ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত ১০ এপ্রিল প্রেসিডেন্সিতে হামলার সময় এক ছাত্রকে মারধর ও আটকে রাখার অভিযোগ দায়ের হয় তৃণমূলের ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে। এ দিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে আত্মসমর্পণ করার পরে ৩০০ টাকার ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি পেয়েছেন পার্থ ও তমোঘ্ন। ৩০ এপ্রিল ফের তাঁদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই নেতাকে জেরা করা হবে। পার্থ অবশ্য এ দিন বলেন, “আবার বলছি, আমি নির্দোষ। আমি কোনও ছাত্রকে মারধর করিনি। আমার সামনে কোনও ছাত্রকে মারাও হয়নি। ঘটনার সময়ে আমি প্রেসিডেন্সির ধারেকাছেই ছিলাম না।” পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, এ পর্যন্ত যে সব তৃণমূল ছাত্র নেতাকে জেরা করা হয়েছে, তাঁদের সকলেই দাবি করেছেন যে, যারা হামলা চালিয়েছিল, তারা কেউ তাঁদের সঙ্গে মিছিলে ছিলেন না।

সে দিনের ঘটনায় আমাদের যোগদানের কোনও ফুটেজ
যদি পাওয়া যায়, তা হলে হাসতে হাসতে জেলে যাব।
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়
কেন আত্মসমর্পণ করলেন পার্থরা?
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মূল কারণ দু’টি। প্রথমত, বেড়ে চলা বিড়ম্বনায় রাশ টানার চেষ্টা। তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থর স্ত্রী বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। দল বিপাকে পড়ছে দেখে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সোনালিকে নির্দেশ দেন পার্থকে আত্মসমর্পণ করতে বলার জন্য। দ্বিতীয়ত, এর ফলে সিপিএম-কে কোণঠাসা করা যাবে বলেই তৃণমূল নেতারা আশাবাদী। বস্তুত এ দিন থেকেই সিপিএমের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, তদন্তের স্বচ্ছতার স্বার্থে তাঁদের নেতাদের আইনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অমিতবাবুকে নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত হলেও ঋতব্রত এখনও সে পথে হাঁটেননি।
এ প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “দিল্লি পুলিশ তদন্ত করছে। যারা দোষী, তাদের তারা গ্রেফতার করুক। বামপন্থীরা জেলে যেতে ভয় পায় না।” কিন্তু তার আগেই তো আত্মসমর্পণ করানো যায়? সূর্যবাবু বলেন, “কারা দোষী, সে ব্যাপারে সংগঠনগত ভাবে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। তার পরে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
ঋতব্রত অবশ্য এ দিন নজরুল মঞ্চে সুদীপ্তর স্মরণসভায় ফের দাবি করেছেন যে, দিল্লিতে মন্ত্রী নিগ্রহের ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ ছিল না। তাঁর কথায়, “আবার বলছি, সে দিনের ঘটনায় আমাদের যোগদানের কোনও
আমার সামনে
কোনও ছাত্রকে
মারাও হয়নি। ঘটনার
সময়ে আমি প্রেসিডেন্সির
ধারেকাছেই ছিলাম না।
পার্থ বসু
ফুটেজ যদি পাওয়া যায়, তা হলে হাসতে হাসতে জেলে যাব। নিগ্রহে আমি বা আমাদের সংগঠন জড়িত নয়। কিন্তু এসএফআই সে দিন ওখানে ছিল বলে দায় এড়াতে পারি না। তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি, ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।” ঘটনা হল, আগে ঋতব্রতই দাবি করেছিলেন যে, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ছিলেন যোজনা ভবনের অন্য গেটে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের ছবিতে স্পষ্টই দেখা যায় অমিত মিত্রের পিছনে স্লোগানরত ঋতব্রতকে। এর পর এ দিন আর অন্যত্র থাকার দাবি না করে নিগ্রহে যুক্ত না-থাকার কথা বলেছেন তিনি।
পাশাপাশি, ঘটনার দু’দিন পরে দিল্লিতে যা বলেছিলেন, এ দিন তার চেয়েও স্পষ্ট ভাবে ‘দায়’ স্বীকার করেছেন ঋতব্রত। স্বীকার করেছেন, দিল্লির ঘটনায় তাঁরা অস্বস্তিতে। সিপিএম নেতাদের কারও কারও মতে, দলের চাপেই নিজের অবস্থান থেকে খানিকটা সরে এসে এ দিন দিল্লির ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন ঋতব্রত।
এত অল্পে অবশ্য ওই এসএফআই নেতাকে ছাড় দিতে রাজি নয় তৃণমূল। সুদীপ্তর স্মরণসভায় ঋতব্রতর উপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “দিল্লিতে যাঁরা গুন্ডা, কলকাতায় তাঁরা সাধু হয়ে মঞ্চ আলো করে বসেছিলেন! যাঁদের কারাগারের অন্তরালে থাকার কথা, তাঁরা যে ভাবে বক্তৃতা করে গেলেন, তাতে প্রমাণ হচ্ছে সিপিএম এই গুন্ডামিকে সমর্থন করে এবং তারা বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নয়।” এ দিনই ঋতব্রতর কলকাতা আসা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা। তাঁর কথায়, “এফআইআরে ঋতব্রতের নাম থাকলেও তাঁকে গ্রেফতার তো দূরের কথা, জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে না। সেই নেতাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একই দিনে কলকাতায় উপস্থিত, এটা খুবই বিস্ময়কর!”
বস্তুত, নজরুল মঞ্চের স্মরণসভায় ঋতব্রতকে হাজির থাকতে বলা হবে কি না, তা নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টানাপোড়েন ছিল সিপিএমের অন্দরে। শেষ পর্যন্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যুক্তি দেন, সংগঠনের ডাকা স্মরণসভায় সাধারণ সম্পাদকই অনুপস্থিত থাকলে বার্তা যেতে পারে যে, অপরাধবোধ থেকেই এমন সিদ্ধান্ত। তার চেয়ে প্রকাশ্য মঞ্চে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া ভাল। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, ঋতব্রতর ব্যাখ্যার পরে দিল্লির নেতাদের উপরেও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ তৈরি হবে এই ভাবনাও ছিল আলিমুদ্দিনের। সেই মতোই দুপুরের উড়ানে কলকাতা এসে সন্ধ্যার বিমানে আবার দিল্লি ফিরে যান ঋতব্রত। মঞ্চে ছিলেন অভিযুক্ত আর এক এসএফআই নেতা শতরূপ ঘোষও।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.