ঢুকতে চেয়েছিলাম, মানছেন কাউন্সিলর
ছক কষেই মিছিল প্রেসিডেন্সিতে, বলছে তদন্ত
বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। কোনও রকম তাৎক্ষণিক উস্কানিরও ফল নয়।
কলকাতা পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, প্রেসিডেন্সির ভিতরে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা-সমর্থকেরা গত ১০ এপ্রিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে জমায়েত হয়েছিলেন। এবং তার পরেই বেধে যায় ধুন্ধুমার কাণ্ড। লালবাজারের দাবি, প্রেসিডেন্সির ভিতরে মিছিল নিয়ে যাওয়ার ছক যে ছিলই, একটি অনুমতি চাওয়ার ঘটনাই তার মোক্ষম প্রমাণ।
কীসের অনুমতি এবং কার কাছে তা চাওয়া হয়েছিল? পুলিশ বলছে, ভিতরে ঢোকার জন্য সে-দিন জোড়াসাঁকো থানার ওসি-র মাধ্যমে প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রারের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন মিছিলে থাকা নেতারাই। আরও নির্দিষ্ট করে বললে সেই অনুমতি চান স্থানীয় ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা তৃণমূল নেতা পার্থ বসু। মঙ্গলবার খোদ পার্থবাবু তা স্বীকারও করে নিয়েছেন।
পার্থ বসু।
ঠিক কী ঘটেছিল সে-দিন?
লালবাজার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, দিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের নিগ্রহের প্রতিবাদে সে-দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র মিছিল প্রথমে যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে মিছিলের একটি অংশ পৌঁছে যায় প্রেসিডেন্সির গেটে। ওই মিছিলে পার্থ বসু ছিলেন ছাড়াও ছিলেন টিএমসিপি-র দুই নেতা তমোঘ্ন ঘোষ ও তথাগত সাহা। কিন্তু প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে পৌঁছে মিছিলকারীরা দেখেন, তালা ঝুলছে। সেখান থেকেই জোড়াসাঁকোর ওসি-র মাধ্যমে প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রারের কাছে মিছিল নিয়ে ভিতরে ঢোকার অনুমতিও চান নেতারা। সেই অনুমতি মেলেনি। তবে টিএমসিপি যে ছক কষেই প্রেসিডেন্সির গেটে গিয়েছিল, এতে সেটা পরিষ্কার।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ১০ এপ্রিল টিএমসিপি-র কর্মী-সমর্থকেরা প্রথমে কলেজ স্কোয়ারে জড়ো হন। ওই সংগঠনের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সিদ্ধান্ত নেয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে মিছিল যাবে প্রেসিডেন্সিতে। পুলিশের দাবি, ছাত্রনেতাদের বোঝানো হয়, প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ নিচ্ছেন। সেখানে মিছিল নিয়ে গেলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। এমনকী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে। ছাত্রনেতাদের একাংশ পুলিশকে পাল্টা বোঝাতে থাকেন, মিছিল সুশৃঙ্খল থাকবে। এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের কথা কাটাকাটিও হয়। সেই সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা যায় পার্থ বসুকে। তিনি ছাত্রনেতাদের বলেন, প্রেসিডেন্সির গেটে তালা ঝুলছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মিছিল নিয়ে ঢোকা যাবে না। কিন্তু ছাত্রনেতাদের একাংশের চাপেই মিছিল নিয়ে প্রেসিডেন্সির গেটের সামনে যান পার্থবাবু। তার পরে প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্তের কাছে মিছিল নিয়ে প্রেসিডেন্সির ভিতরে ঢোকার অনুমতি চান তিনি। তবে সেটা জোড়াসাঁকোর ওসি-র মাধ্যমে।
অনুমতি চাওয়ার কথা মেনে নিয়ে পার্থবাবু মঙ্গলবার বলেন, “সে-দিন অনুমতি চেয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু রেজিস্ট্রারের অনুমতির অপেক্ষা না-করেই আমি ফিরে আসি। কারণ, তত ক্ষণে আমার দলের কর্মী চিনু হাজরার মাথায় ইট পড়েছে। তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাই আমিই। তার পরে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বা মিছিলের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ ছিল না।” টিএমসিপি নেতাদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্সির ভিতর থেকেই ইট এসে পড়েছিল চিনুর মাথায়। তার পরে সংগঠনের সদস্য-সমর্থকদের উপরে নেতাদের আর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। গেটের তালা ভেঙে এক দল ঢুকে পড়েন ভিতরে। প্রেসিডেন্সির ভিতর থেকে ইট আসার অভিযোগ আগেই খারিজ করে দিয়েছে লালবাজার। পুলিশের দাবি, মিছিলকারীদের এক জন গেটের স্তম্ভের উপরে উঠে কালো পতাকা লাগাতে যান। তখনই ছোট কংক্রিটের টুকরো এসে চিনুর মাথা ফাটিয়ে দেয়। পুলিশের একাংশ মনে করছে, প্রেসিডেন্সির গেটে তালা দেখেই টিএমসিপি-র কর্মী-সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাঁদের সামাল দেওয়ার মতো যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ প্রেসিডেন্সির সামনে বা ভিতরে ছিল না।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের অভিমুখ যা-ই হোক না কেন, রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় হামলাকারীদের ছাত্র বলে মেনে নিতে নারাজ। তিনি এ দিন বলেন, “কে কোন দলের, তা দেখার দরকার নেই। পুলিশ তদন্ত করে যাকে মনে করবে, তাকেই ধরবে। ঘটনা তো একটা ঘটেছেই। তাকে ধিক্কার জানাচ্ছি। যারা এটা ঘটিয়েছে, তারা ছাত্র হতে পারে না।” ছাত্র মিছিল কেন প্রেসিডেন্সির ভিতরে যাবে, সেই প্রশ্ন তুলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কোনও শাখা প্রেসিডেন্সিতে নেই। সেখানে কারা কাকে শক্তিশালী করতে গেল? আমরা যে-কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হিংসার বিরোধী।”
কিন্তু তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ বসুকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন?
শিল্পমন্ত্রীর মন্তব্য, “শুধু পার্থ বসুর ছবি দেখালে তো হবে না। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে যদি এ দোষী, ও দোষী বলা হয়, তা হলে বিচার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করা হয়।” এই প্রসঙ্গে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এ দিন একটি অনুষ্ঠানে বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। এখন আমি কিছু বলব না।” এ দিনই প্রেসিডেন্সিতে ভাঙচুরের ঘটনায় ধৃত শুভজিৎ বর্মনের জামিন মঞ্জুর করেছে ব্যাঙ্কশাল আদালত। সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস জানান, ১৮ এপ্রিল ওই ছাত্রের পরীক্ষা আছে। তাই বিচারক তাকে জামিন দিয়েছেন। এর আগেও পরীক্ষার জন্য ওই ঘটনায় অভিযুক্ত এক ছাত্রকে জামিন দেন বিচারক।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.