|
|
|
|
|
|
গোষ্ঠী বিমা |
...জোট বেঁধে বিমা করি |
গোষ্ঠী বিমা বা গ্রুপ ইনশিওরেন্সের মস্ত সুবিধা হল তার কম প্রিমিয়াম। অনেকে মিলে করা
হয় বলে কম টাকা গুনেও এখানে মোটা কভারেজ পাওয়া সম্ভব। জানাচ্ছেন প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী |
বিমা মানেই যে তা ব্যক্তিগত ভাবে করা হবে, তা কিন্তু নয়। বেশ কয়েক জন মিলে জোট বেঁধেও (গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে) বিমা করা সম্ভব। অবশ্যই তার জন্য কিছু শর্ত আছে। রয়েছে তার নিজস্ব নিয়মকানুন। কিন্তু এ ধরনের গোষ্ঠী বিমার (গ্রুপ ইনশিওরেন্স) মূল সুবিধা হল তুলনায় কম অঙ্কের প্রিমিয়ামে বেশি কভারেজ। আসুন, আজ এই বিমার মূল বিষয়গুলো জানতে চেষ্টা করি আমরা।
গোষ্ঠী বিমা কী?
ব্যক্তিগত বিমার বেলায় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এক জনেরই বিমা করা হয়। পলিসি আপনার হলে, প্রিমিয়াম দেবেন শুধু আপনি। তেমনই কভারেজ কিংবা ম্যাচিওরিটির টাকার হকদারও আপনি অথবা আপনার নমিনি।
গোষ্ঠী বিমার ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু আলাদা। এখানে একই পলিসির জন্য প্রিমিয়াম দেন বেশ কয়েক জন। তেমনই কভারেজও পান তাঁরা সকলে। অফিস-কাছারিতে এ ধরনের বিমা এখন বহুল প্রচলিত।
আগেই বলেছি, এ ধরনের বিমায় প্রিমিয়ামের অঙ্ক তুলনায় অল্প। তাই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা একেবারে কম হলে, বিমা সংস্থার পক্ষে লাভের মুখ দেখা শক্ত। সেই কারণে সাধারণত কমপক্ষে ৫০ জনকে নিয়ে এক একটি গোষ্ঠী তৈরি করা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সদস্য সংখ্যা তার কমও হতে পারে।
করে কারা?
ধরন দেখেই বুঝতে পারছেন, সাধারণত এই বিমা করে বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়ী সংস্থা, অ- সরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সমবায়, ব্যাঙ্ক, শ্রমিক সংগঠন, পেশাদারদের সংগঠন ইত্যাদি। বিমার পরিচালক হিসেবেও তাই নথিভুক্ত থাকে ওই সব সংস্থা কিংবা সংগঠনের নামই। |
|
সুবিধা কোথায়?
গোষ্ঠী বিমার মূল সুবিধা তিনটি
(১) প্রিমিয়ামের অঙ্ক ব্যক্তিগত বিমার নিরিখে অনেকটাই কম।
(২) দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর পরিচালকের সহায়তা মেলে। ব্যক্তিগত বিমার ক্ষেত্রে পুরো দৌড়ঝাঁপ করতে হয় পরিবারকেই।
(৩) অনেক বিমাতেই গোড়ায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা থাকে। গোষ্ঠী বিমাতেও তা থাকতে পারে। তবে সেই নিয়মকানুন ব্যক্তিগত বিমার তুলনায় অনেকটা শিথিল।
বিমার অঙ্ক একই?
অনেকেই জানতে চান, কোনও গোষ্ঠী বিমায় কভারেজের অঙ্ক প্রত্যেক সদস্যের জন্য সমান কি না। উত্তর হল, দু’রকম প্রকল্পই আছে। অনেক ক্ষেত্রে বিমার অঙ্ক সকলের জন্য এক। তেমনই কিছু ক্ষেত্রে আবার আর্থিক সুবিধার তারতম্য থাকে।
আর জীবনবিমা?
জোট বেঁধে জীবনবিমা অবশ্যই করা সম্ভব। তবে তা সাধারণত টার্ম পলিসি হয়। অর্থাত্, মেয়াদ শেষে বোনাস-সহ ম্যাচিওরিটির সুবিধা থাকে না। শুধুমাত্র গ্রাহক মারা গেলে কভারেজের অঙ্ক হাতে পান তাঁর নমিনি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এখন কিছু কিছু সংস্থা অবশ্য মেয়াদ শেষে টাকা ফেরতের সুবিধাযুক্ত পলিসিও বাজারে ছাড়ছে।
পলিসি বন্ড কার হাতে?
ব্যক্তিগত বিমায় পলিসি বন্ড (বিমা সংক্রান্ত নথি) যেমন গ্রাহকের হাতে থাকে, গোষ্ঠী বিমায় কিন্তু তা নয়। বরং এ ক্ষেত্রে ‘মাস্টার পলিসি’ দেওয়া হয় গোষ্ঠীর পরিচালককে। সেখানে গোষ্ঠীর নাম, তার সদস্যদের নাম, বিমার অঙ্ক এবং যাবতীয় শর্ত লেখা থাকে। তবে সাধারণত প্রত্যেক সদস্যকে ‘সার্টিফিকেট অফ ইনশিওরেন্স’ দেওয়া হয়। বিমার অঙ্ক, শর্ত-সহ বেশ কিছু তথ্য উল্লেখ করা থাকে সেখানেও।
প্রিমিয়ামের অঙ্ক
ব্যক্তিগত বিমার তুলনায় স্বাভাবিক ভাবেই গোষ্ঠী বিমায় প্রিমিয়ামের অঙ্ক কষা শক্ত। কারণ, এক এক জন সদস্যের বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা, কাজের ধরন, জীবনের ঝুঁকি এক এক রকম। তাই এ ক্ষেত্রে বিমার পরিমাণের উপর প্রিমিয়ামের অঙ্ক তো নির্ভর করেই। সেই সঙ্গে বিবেচিত হয় সদস্যদের প্রত্যেকের জীবনের ঝুঁকির বিষয়টিও।
যেমন ধরুন, কোনও জাহাজ পরিবহণ সংস্থা কর্মীদের জন্য গোষ্ঠী জীবনবিমা করতে চায়। কিন্তু সমস্যা হল, ওই সংস্থার কিছু কর্মী দফতরে বসে কাজ করেন। আবার অনেকে কাজ করেন জাহাজে, সমুদ্রে গিয়ে কাজ করায় যাঁদের জীবনের ঝুঁকি স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত সামগ্রিক ভাবে ঝুঁকির বিষয়টি বিচার করে গড় প্রিমিয়ামের অঙ্ক ঠিক করে সংস্থা।
প্রিমিয়াম জমা কী ভাবে?
এই ধরনের বিমায় সাধারণত বার্ষিক ভিত্তিতে প্রিমিয়াম জমা নেওয়ার চল রয়েছে। গোষ্ঠীর সমস্ত সদস্যের প্রিমিয়াম এক সঙ্গে জমা দেওয়াই নিয়ম। তবে অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহক মোট প্রিমিয়ামের মধ্যে তাঁর নিজের অংশ নিজেই সরাসরি জমা দিয়ে আসতে পারেন। তবে একই গোষ্ঠীর কিছু সদস্য পৃথক পৃথক ভাবে এবং বাকিরা এক সঙ্গে প্রিমিয়াম জমা দিতে পারবেন না। নিয়ম সবার জন্যই এক। কী ভাবে প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে, তা পলিসি কেনার সময়েই স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়।
আর গোষ্ঠী গুটিয়ে গেলে?
সে ক্ষেত্রে কি পলিসি বন্ধই হয়ে যাবে? সাধারণত হ্যাঁ। তবে অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহক ইচ্ছা করলে গোষ্ঠী পলিসিকে ব্যক্তিগত পলিসিতে রূপান্তরিত করে নিজের প্রকল্প চালিয়ে যেতে পারেন।
দাবি আদায় কী ভাবে?
গোষ্ঠী বিমার ক্ষেত্রে সদস্যের মৃত্যু হলে, তাঁর পরিবারকে প্রথমেই গোষ্ঠীর পরিচালকের কাছে আবেদন করতে হবে। তিনিই সাধারণত বিমা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে দাবি আদায়ের ব্যবস্থা করেন।
রাইডারের সুবিধা আছে?
ব্যক্তিগত বিমার মতো গোষ্ঠী বিমাতেও অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে রাইডার নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
গোষ্ঠী বিমায় যে-সব রাইডার পাওয়া যায়, তার মধ্যে রয়েছে
• ‘ডাবল অ্যাকসিডেন্ট বেনিফিট’: এই ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় গ্রাহকের মৃত্যু হলে বিমাকৃত রাশির দ্বিগুণ অর্থ পাবেন তাঁর নমিনি।
• ক্রিটিকাল ইলনেস বেনিফিট বা কঠিন রোগের চিকিত্সার খরচ পাওয়ার সুবিধা।
• দুর্ঘটনায় আংশিক বা পুরো পঙ্গুত্বের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া সংক্রান্ত সুবিধাযুক্ত আরও বেশ কিছু রাইডার পাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। |
|
|
|
|
|