নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
স্বামী খুনের আসামীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক। প্রায় প্রতিদিনই এটাই চেয়ে এসেছেন মুরারই থানার পঞ্চহর গ্রামের বাসিন্দা নিহত মিয়াঁ শেখের স্ত্রী রেক্সনা বিবি। মাঝপথে মামলা প্রত্যাহারের সরকারি আবেদনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। তাই ফের মামলা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে বুধবার লিখিত ভাবে জেলাশাসকের কাছে আপত্তি জানালেন ওই বধূ। তাঁর প্রশ্ন, “স্বামী খুনে জড়িতদের শাস্তি চেয়ে দিন গুনছি। অথচ সরকার মামলা প্রত্যাহার করার জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেছে। তা হলে কীসের আইন? কীসের সুবিচার?” তাঁর দাবি, “কেউ সরকারকে ভুল বুঝিয়ে তাদের পক্ষে সওয়াল করার জন্য সুপারিশ করবে আর আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাবে কোন ধরনের বিচার।”
কথাগুলো বলতে বলতে এ দিন ন্যায় বিচার চেয়ে জেলাশাসকের কাছ থেকে ফেরার পথে কেঁদেই ফেললেন তিনি। পাশে ছিলেন দাদা মির্জা শেখ। তিনি বলেন, “নাবালক ছেলেমেয়েকে নিয়ে বোন কোনও মতে সংসার চালাচ্ছে। কেউ বিড়ি বাঁধার কাজ করে, কেউ ভাড়া গাড়ি চালায়। সেই সঙ্গে পড়াশোনার খরচও রয়েছে।” এত কিছু সামলে এই সব ঝামেলা। তাই একজন মহিলার পক্ষে নিজেকে কী ভাবে ঠিক রাখা সম্ভব বললেন রেক্সনা বিবি। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “আবেদনপত্র পেয়েছি। নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেব।”
সম্প্রতি বীরভূম জেলা আদালতের মুখ্য পাবলিক প্রসিকিউটর রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জেলাশাসকের মাধ্যমে মুরারই থানায় রুজু হওয়া চারটি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সুপারিশ করেন রাজ্য আইন দফতরের কাছে। আইন দফতর গত ১২ মার্চ সেই আবেদনে সম্মতি জানিয়ে জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিচারকের কাছে সেই আর্জি প্রস্তাব আকারে জমাও পড়েছে। ওই চারটি মামলার একটি হল ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে ফব কর্মী মিয়াঁ শেখ খুনের ঘটনা। ওই হত্যা-মামলায় অভিযুক্তেরা বর্তমানে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করে নিহতের পরিবারের। অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই রাজ্য ওই মামলাটি তুলে নিতে চাইছে। ন্যায়বিচার চেয়ে আগেই রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে ফ্যাক্স মারফত আবেদন করেছেন নিহতের স্ত্রী।
রণজিতবাবু বলেন, “২২ এপ্রিল ওই রাজনৈতিক খুনের ঘটনার মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিষয়ের শুনানি হবে রামপুরহাট ফাস্ট ট্র্যাক ফাস্ট কোর্টের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে।” তাঁর দাবি, “এক জন সরকারি আইনজীবী হিসেবে ওই মামলার যাবতীয় কাগজপত্র খতিয়ে দেখে আমার মনে হয়েছে, মামলার সারবস্তু বলতে কিছু নেই। সেই জন্য মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে।” যদিও রেক্সনা বিবিদের আইনজীবী মিলটন রসিদ বলেন, “ভুল বুঝিয়ে ও সত্য গোপন করতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে।” |