বোরো চাষ করে কেউ ভেবেছিলেন মেয়ের বিয়ের ঋণ মেটাবেন। কেউ আবার পুরনো বাড়ি মেরামত করে বাসযোগ্য করবেন। তবে ১৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে নানুরের বোরো চাষিদের সব ভাবনাকে ওলটপালট করে দিল। এখন কী করে ছেলেমেয়েদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত তুলে দেবেন সেই দুঃশ্চিন্তায় মগ্ন তাঁরা। এর উপর ঘাড়ে চেপে বসেছে কৃষিঋণের বোঝা।
মঙ্গলবার বিকেলে নানুরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টিতে থুপসড়া, নওয়ানগর-কড্ডা, জলুন্দি, চারকলগ্রাম ও বড়াসাওতা পঞ্চায়েত এলাকায় বোরো ধান-সহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান। এছাড়াও ৫০০ হেক্টর জমির তিল, ৫০ হেক্টর কলাই, ৬০ হেক্টর কচু, ৫০ হেক্টর আখ। এই পরিস্থিতিতে কার্যত পথে বসার সামিল হয়েছেন তাকোড়ার মীর আনোয়ার আলি, রামকৃষ্ণপুরের গৌর গড়াইদের মতো কয়েকশো চাষি। |
বুধবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জমির পাশে দাঁড়িয়ে হাহুতাশ করছেন চাষিরা। অধিকাংশ ধান শুয়ে পড়েছে। ঝরে পড়েছে অধিকাংশ শীষ। একই অবস্থা কচু, আখ-সহ অন্যান্য ফসলের। ব্যাঙ্ক থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিন বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন মীর আনোয়ার আলি। ধান ভালই হয়েছিল। আরও কিছু টাকা খরচ করলে মাস খানেকের মধ্যে ঘরে সোনার ধান উঠত, যা বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে ১৫ হাজার টাকা হাতে থাকত। গত বছর মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। এখনও সেই খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা দেনা রয়েছে তাঁর। তাঁর কথায়, “ভেবেছিলাম এ বার কৃষি ঋণের সঙ্গে ওই দেনা শোধ করে দেব। শিলাবৃষ্টিতে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।” একই অবস্থা গৌর গড়াইয়েরও। তিনি ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সাত বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। ভেবেছিলেন ঋণ মেটানোর পরে বাড়ি মেরামত করবেন। সেই ভাবনা মাটিয়ে মিশিয়ে দিয়েছে শিলা। তাঁরা বলেন, “জমির অধিকাংশ ধানই ঝরে গিয়েছে। এখন যা অবশিষ্ট আছে, তা কেটে ঘরে তুলতে গেলে যা খরচ হবে তাতে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির সামিল। গবাদি পশুকেই খাইয়ে দিতে হবে। কী করে ঋণ মেটাব বুঝতে পারছি না।”
ব্লক কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক ফজলুল হক বলেন, “প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী ব্লকের ৫টি পঞ্চায়েত এলাকায় ৪ কোটি টাকার মতো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সব দিক দেখে তারাও যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়, সে জন্য আমরা ঋণদানকারী ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে।” শুধু ফসল নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশকিছু বাড়িও। মহাজনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ও ব্যাঙ্ক থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে টালি ও অ্যাসবেস্টরের চালের বাড়ি করেছিলেন তাকোড়ার মীর ইবরান আলি। তিনি জানান, শিলাবৃষ্টিতে টালি ও অ্যাসবেস্টর সব ফেটে-ফুটে গিয়েছে। কী করে কী করবেন বুঝতে পারছেন না। বিডিও সজল দাস বলেন, “চাষিরা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। যাঁরা বিমাযুক্ত কৃষিঋণ নিয়ে চাষ করেছিলেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কৃষি দফতরের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনের তরফে যা করার করা হবে।” |