থ্যাচারকে শেষ বারের মতো দেখতে মানুষের ঢল
লৌহমানবীকে শেষ দেখা দেখতে ভিড় উপচে পড়ল লন্ডনের রাজপথে। আশঙ্কা ছিল, শেষযাত্রাতেও বিতর্ক পিছু ছাড়বে না থ্যাচারের। দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় পথের দু’ধারে পিছন ফিরে বিক্ষোভ দেখাবেন বলে জানিয়েছিলেন থ্যাচার-বিরোধীরা। কিন্তু প্ল্যাকার্ড হাতে যে ক’জন বিক্ষুব্ধ আজ ছিলেন, ভিড়ের তুলনায় তা নেহাতই নগণ্য।
এ দিন পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হল ব্রিটেনের এক মাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের। ওয়েস্টমিনস্টার চ্যাপেলের আন্ডারক্রফট থেকে দেহ নিয়ে (কাল সারা রাত সেখানেই রাখা ছিল থ্যাচারের দেহ) সেন্ট ক্লিমেন্ট ডেন্স ছুঁয়ে ছ’টি কালো ঘোড়ায় টানা গান ক্যারেজ এসে পৌঁছয় সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে। বেলা এগারোটা বাজতে তখনও কিছুটা বাকি।
রাস্তার দু’ধারে জড়ো হয়েছেন কাতারে কাতারে মানুষ। শেষযাত্রা ভাল করে দেখা যাবে, এমন জায়গা বাছতে কাল সারা রাত ফুটপাথেও কাটিয়েছেন অনেকে। হাড় হিম করা ঠান্ডার মধ্যেই।
নিয়ে যাওয়া হচ্ছে থ্যাচারের কফিন বন্দি মরদেহ। ছবি: এএফপি
পশ্চিম লন্ডনের ওয়েস্ট কেনসিংটন থেকে যেমন এসেছেন অশীতিপর দম্পতি, তেমনই এই দলে সামিল বছর কুড়ির বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীও।
মৃত্যুর পর স্মরণসভায় সবাই ভাল ভাল কথা বলুক, পছন্দ ছিল না ব্যারনেস থ্যাচারের। বদলে মানুষের আবেগে সিক্ত এ রকম শেষযাত্রাই যেন হয়, বলে গিয়েছিলেন তিনি। বস্তুত আধ শতকে এ রকম জাঁকজমকপূর্ণ শেষকৃত্য কোনও ব্রিটিশ রাজনীতিকেরই হয়নি। টাওয়ার অফ লন্ডন থেকে করা হয় ২১টি তোপধ্বনি। সম্মান জানাতে অর্ধনমিত ছিল জাতীয় পতাকাও।
নির্ধারিত সময় মতো সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের সামনে গান ক্যারেজ পৌঁছনোর পর ইউনিয়ন জ্যাকে মোড়া কফিন কাঁধে করে নামিয়ে আনেন সেনারা। গির্জার ভেতরে অর্গ্যানে সুর তুলে তত ক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে কয়্যার। এগারোটি দেশের প্রধানমন্ত্রী, দেশ-বিদেশের অতিথিদের নিয়ে হাজির হয়েছেন স্বয়ং রানি। প্রোটোকল মেনে কালো পোশাক, কালো টুপিতে মাথা ঢাকা। ১৯৬৫তে উইনস্টন চার্চিলের মৃত্যুর পর এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্যে যোগ দিলেন ব্রিটেনের রানি।
রাজনীতির উত্তাপে যাঁর গোটা জীবনটাই কেটে গিয়েছে, মৃত্যুর পর আর সে সব নিয়ে কাটাছেঁড়া না করাই ভাল নিজের বক্তৃতায় আজ এই আবেদনই করেন লন্ডনের বিশপ রাইট রেভারেন্ড রিচার্ড চার্টরেস। থ্যাচার যখন ব্রিটেনের দায়িত্ব হাতে নিয়েছিলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের বয়স তখন সবে বারো। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বলতে উঠে মেনে নিলেন, নিজেকে থ্যাচারাইট বলতে কোনও আপত্তি নেই তাঁর। তবে গোটা অনুষ্ঠানে নজর কেড়েছেন যিনি, তিনি থ্যাচারেরই নাতনি আমন্ডা। ভাই মাইকেলের সঙ্গে ডালাস থেকে এসেছেন ব্রিটেনে। ঠাকুমার কফিনের কাছে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে, ঝরঝরে মার্কিন উচ্চারণে ‘এপহেসিয়নস’ উদ্ধৃত করেন বছর উনিশের এই তরুণী। দেশ-বিদেশের এত অতিথি দেখেও তাঁর গলা কাঁপেনি একটি বারের জন্য।
শেষকৃত্যে ছিলেন জন মেজর, টনি ব্লেয়ার, গর্ডন ব্রাউন লন্ডনের তিন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। নিজে আততায়ীর হাত থেকে বাঁচার দু’সপ্তাহের মধ্যে ইন্দিরা গাঁধীর শেষকৃত্যে এসেছিলেন মার্গারেট থ্যাচার। তাই তাঁর শেষকৃত্যে সনিয়া গাঁধী বা প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কেউ যাবেন, আশা করেছিলেন অনেকেই। সেটা অবশ্য ঘটেনি।
ভারত থেকে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। ক্যাথিড্রালে অনুষ্ঠানের পর মর্টলেক সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হবে থ্যাচারকে। লাখো মানুষের আবেগ ছুঁয়েই বিদায় নিলেন লৌহমানবী।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.