নিজস্ব সংবাদদাতা • রানিগঞ্জ |
কয়লা চুরি বন্ধ করতে বসানো হয়েছিল চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা। তারই মধ্যে একটি আবার চুরি করেছে দুষ্কৃতীরা। তবে বাকি তিন ক্যামেরায় নিয়মিত কয়লা চুরির ছবি ধরা পড়ছে। পুলিশের কাছে তার ফুটেজ জমা দেওয়া সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এমনই অভিযোগ তুলেছে ইসিএল।
রানিগঞ্জে ইসিএলের জেকে নগর, সাতগ্রাম, মডার্ন সাতগ্রাম ও পিওর সিহারসোল কোলিয়ারির কয়লা জমা হয় সাতগ্রাম এরিয়ার নর্থব্রুক সেন্ট্রাল কোল সাইডিংয়ে। সেখান থেকে মালগাড়িতে করে বেশ কয়েকটি রাজ্যে মাসে ২৪ হাজার টন কয়লা সরবরাহ করা হয়। ইসিএলের অভিযোগ, সাইডিং থেকে কয়লা চুরি করছিল দুষ্কৃতীরা। কারা কী ভাবে চুরি করছে, তা দেখার জন্য সেখানে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়।
খনি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ক্যামেরা বসানোর পরে দেখা যায়, সাইডিং থেকে কয়লা বোঝাই করে বেরিয়ে সাইডিং থেকে কিছুটা দূরেই ময়রাবাঁধ এলাকায় এক চালক মালগাড়ি ঘণ্টা দুয়েক গাড়ি দাঁড় করাচ্ছে। তখন শ’য়ে শ’য়ে চোর এসে কয়লা লুঠ করে নিয়ে যাচ্ছে। চারটি ক্যামেরা বসানোর দিন পনেরোর মধ্যে একটি খুলে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। এর পরে সাইডিংয়ের নানা জায়গা থেকেও মাঝেমাঝে কয়লা চুরি যাচ্ছে। খনির এক আধিকারিক অভিযোগ করেন, ক্যামেরার ফুটেজ রানিগঞ্জের নিমচা ফাঁড়িতে জমা দেওয়া হয়েছে। সেই ফুটেজ দেখে তাঁরা যাকে চুরির পাণ্ডা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, পুলিশ তাকে দুষ্কৃতী বলেই মানতে চাইছে না। ওই আধিকারিকের কথায়, “এমন চলতে থাকলে তো আমরা অসহায়!”
খনি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, চুরির জেরে এই সাইডিংয়ে প্রতি মাসে ৮০০ থেকে ১০০০ টন কয়লা চুরি যাচ্ছে। নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে বাধা পেলে রাস্তায় ডাম্পার থেকে আঁকশি দিয়ে কয়লা নামিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে এলাকা সূত্রে তাঁরা জেনেছেন। খনি কর্তৃপক্ষ জানান, ওই মালগাড়ি চালকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আসানসোলে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মুর অবশ্য বক্তব্য, “নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। শুনেছি, মালগাড়িতে কয়লা পরিবহণের সময়ে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী এবং পুলিশ পাহারা দিয়ে পার করে। অবরোধ করে গাড়ি দাঁড় করালে চালকের কী করবেন?”
তৃণমূলের জেমারি পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অভয় উপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পুলিশ এবং খনি কর্তৃপক্ষের একাংশ এ সবের সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে এমন ধারণাই পেয়েছি। তা না হলে ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়ার পরেও দুষ্কৃতীদের ধরা হল না কেন?”
কংগ্রেসের রানিগঞ্জ ব্লক সম্পাদক তথা ওই খনির আইএনটিইউসি নেতা বাবলু সিংহেরও অভিযোগ, “শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন জ্বালানির কয়লা পাচ্ছেন না। দুষ্কৃতীরা নিয়মিত চুরি করছে। কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের একাংশের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এমন ঘটা কী সম্ভব?” তাঁর দাবি, “রেল লাইন পাহারা দিতে পর্যাপ্ত পুলিশ যদি না-ও থাকে ক্ষতি নেই। কিন্তু চুরি করা কয়লা প্রকাশ্যে ফাঁড়ির পাশ দিয়েই যাচ্ছে। পুলিশ তবু নির্বিকার।”
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, “কয়লা চুরি নিয়ে ইসিএলকে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ জমা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।” |