নেপালের ব্যবসায়ী অপহরণ ও খুন হত্যা মামলায় ৭৮ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট জমা দিল পুলিশ। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি এসিজেএম মধুমিতা বসুর এজলাসে ওই চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। আদালত সূত্রের খবর, ছ’শো পাতার ওই চার্জশিটে ৫২ জনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫টির উপরে বাজেয়াপ্ত করা জিনিসপত্র দেখানো হয়েছে। সরকারি আইনজীবী সুদীপ বসুনিয়া জানান, ২৯ এপ্রিল থেকে ওই মামলার বিচার সেশন কোর্টে শুরু হবে। ওই দিন অভিযুক্তদের ফের আদালতে হাজির করানো হবে। তিনি বলেন, “৭৮দিনের মাথায় চার্জশিট জমা পড়েছে। এবারে বন্দিদের ট্রায়াল শুরু হবে।” এদিন অভিযুক্ত জেলবন্দি সুরেন্দ্রকুমার মিশ্র ও তাঁর স্ত্রী মণিকা মিশ্র, অভিজিত্ বসু এবং রাজীব রায় ওরফে প্রবীণ দাসকে আদালতে হাজির করানো হয়। তাদের হাতে মামলার কপি তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২ ফেব্রুয়ারি শনিবার শিলিগুড়ি কাছে সুকনা থেকে নেপালের বিরাটনগরের ব্যবসায়ী গঙ্গাবিষাণ রাঠী (৬৯) এবং চন্দ্রপ্রকাশ চৌরেল (৪৫)-এর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১০ জানুয়ারি বাড়ি থেকে শিলিগুড়ি আসার পর নিখোঁজ হয়ে যান গঙ্গাবিষাণ। ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে টাকা আদায়ের ছক কষেছিল দুষ্কৃতীরা। সে ছক মতোই রাঠীর ছেলেকে ফোন করে ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। ৫০ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হন অপহৃতের পরিবার। উত্তরায়ণে একটি রেস্তোরা’র পিছনে দুষ্কৃতীদের হাতে ৫০ লক্ষ টাকা তুলে দেন ওই ব্যবসায়ীর ছেলে। কিন্তু তার পরে ছয় ঘন্টা কেটে গেলেও রাঠীর খোঁজ না পেয়ে পুলিশকে সব জানান তাঁর ছেলে। পরের দিন সকালে বর্ধমান স্টেশন থেকে অভিযুক্ত সুরেন্দ্র কুমার মিশ্র এবং অভিজিত্ বসুকে ৫০ লক্ষ টাকা সহ গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে উত্তরায়ণের একটি ফ্ল্যাট থেকে সুরেন্দ্রের স্ত্রী মণিকা দেবীকে ধরা হয়।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সুকনার জঙ্গল থেকে ওই ব্যবসায়ী এবং চৌরেলের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। চৌরেল নেপাল শিবসেনা পার্টির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ছকে চৌরেল দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সামিল ছিল। পরে চৌরেলকে সরিয়ে পুরো টাকা হাতানোর ছক কষেছিল অন্য দুষ্কৃতীরা। কিছুদিন আগে ওই খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আলফার এক প্রাক্তন জঙ্গি রাজীবকে গ্রেফতার করে শিলিগুড়ি গোয়েন্দা দফতরের কর্মীরা। ঘটনার তদন্তভার ছিল শিলিগুড়ি থানার পুলিশ অফিসার শান্তনু সরকারের উপর। জেলবন্দি অবস্থাতেই যাতে অভিযুক্তদের বিচার শুরু হয় সে জন্য তিন মাসের আগে চার্জশিট জমা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন শান্তনুবাবু। এদিন চার্জশিট জমা পড়ে। সরকারি আইনজীবী বলেন, “তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট জমা পড়ায় সংশোধনাগারে বন্দি অবস্থাতেই অভিযুক্তদের বিচার শুরু হবে।” |