শরীরটা ভাল ছিল না তাঁর। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ স্ত্রীকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, “শরীরটা ভাল লাগছে না। মাথাটা কেমন ঘুরছে। ওষুধটাও আনতে ভুলে গেছি।”
তার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই দুর্ঘটনা। বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁর শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। পরিবারের সবাই তাঁকে বার বার ছুটি নিতে বলতেন। কিন্তু সে সুযোগ কোথায়? বলতেন, “লোক কম। দেখি ছুটি মেলে কি না।” কাজ পাগল মানুষ বলে শেষ পর্যন্ত তাঁর আর ছুটি নেওয়া হত না । তাঁর স্ত্রী দীপাদেবীর তাই আক্ষেপ, “একেবারেই ছুটি নিয়ে চলে গেলেন!”
|
সুকুমার মুখোপাধ্যায়। |
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে ১৯৮৮ সালে সহকারি চালক হিসাবে তাঁকে নিয়োগ করা হয়। বছর আটেক আগে চালক পদে তাঁর পদোন্নতি হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি রানাঘাটে কর্মরত ছিলেন। মূলত রানাঘাট-লালগোলা শাখায় তিনি ট্রেন চালাতেন। সম্প্রতি তাঁর স্পন্ডেলাইটিসের সমস্যা দেখা দেয়। কানেও সমস্যা ধরা পড়ে। অন্য দিনের মতো এ দিনও তিনি তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে নিজের শারীরিক সমস্যার কথা বলেন। সুকুমারবাবু কৃষ্ণনগরের বাড়িতে একাই থাকতেন। তাঁর একমাত্র সন্তান সৌমভ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র। গড়িয়ায় একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তিনি পড়েন। গড়িয়ায় ছেলের সঙ্গে থাকেন স্ত্রী দীপাদেবী। ফোনে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখতেন। কিন্তু এ দিন সকালে স্বামীর সঙ্গে তাঁর সংলাপই যে শেষবারের মতো তা ভাবতেই পারছেন না দীপাদেবী।
ব্যবসায়ী সুধীরচন্দ্র মুখোপ্যধ্যায়ের ছোট ছেলে সুকুমারবাবু বরাবরই মেধাবী ছাত্র। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে তিনি ভর্তি হন কৃষ্ণনগর গভর্মেন্ট কলেজে। সেখান থেকে বিএসসি পাশ করে তিনি বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ট্রেনের সহকারি চালকের চাকরি পেয়ে যান। কিছু দিনের মধ্যে তিনি উকিলপাড়ার পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে চলে যান রেলের আবাসনে। তারও পরে তিনি কৃষ্ণনগর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে সেখানেই বসবাস শুরু করেন। সুকুমারবাবুর প্রতিবেশী রজত বসু কৃষ্ণনরের সহকারি স্টেশন ম্যানেজার। তিনি বলেন, “অত্যন্ত মিশুকে ছিলেন। সব সময় হাসতেন। সহকর্মীদের খুব প্রিয় ছিলেন তিনি।” শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, আত্মীয় পরিজনদের কাছেও তিনি বেশ প্রিয় ছিলেন। সব আত্মীয় পরিজনেব সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তিনি। তাঁর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে উকিলপাড়র বাড়িতে। সুকুমারবাবুর বড় দাদা স্বপন মুখোপাধ্যায় রানাঘাট কলেজের অধ্যাপক। বৌদি অঞ্জনাদেবী সন্তানস্নেহে সুকুমারবাবুকে মানুষ করেছেন। প্রিয় দেওরের মৃত্যু সংবাদে ভেঙ্গে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, “ওর শরীরটা ভাল ছিল না। ছুটি নিতে বলতাম। কিন্তু কথা কানেই নিত না।” |