একটা বড় টুর্নামেন্টকে লোকে সব সময় চ্যাম্পিয়ন বা রানার্স আপের নাম দিয়ে মনে রাখে না। মনে রাখে, কয়েকটা বিশেষ মুহূর্ত দিয়ে। যেমন ’৯২ বিশ্বকাপ বললেই আপনাআপনি মনে পড়ে, জন্টি রোডসের উড়ে গিয়ে ওই দুর্ধর্ষ ক্যাচ। আবার ২০০৩ বিশ্বকাপ বললে লোকে আজও পরিষ্কার দেখতে পায়, আক্রমের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সচিনের ৯৮। পেপসি আইপিএলের দু’সপ্তাহ হল। পাঁচটা ম্যাজিক-মুহূর্ত এই মুহূর্তে মাথায় আসছে, যা টুর্নামেন্ট শেষেও মিনে থেকে যাবে। পরিস্থিতির বিচারে ওই পারফরম্যান্সগুলোর গুরুত্বও প্রবল।
নারিনের এক ওভারে ২৩
অনেকে বলবেন, কেন কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সুনীল নারিনের হ্যাটট্রিকটা নিয়ে বলছি না। যে কোনও টুর্নামেন্টেই কেউ হ্যাটট্রিক করলে, সেটা বিরাট ব্যাপার। কিন্তু সুনীল নারিনের মতো স্পিনারের কাছে সেটা অপ্রত্যাশিত নয়। বরং অপ্রত্যাশিত হচ্ছে মনপ্রীত গোনির সামনে এক ওভারে ২৩ দিয়ে বসাটা! এত দিন ব্যাটসম্যানরা নারিনকে দেখে ভয় পেত। কিন্তু এ দিনের পর নারিন নিয়ে যদি ভয়টা কেটে যায়, অবাক হওয়ার নেই। গোনি নামী কোনও ব্যাটসম্যান নয়। সাত নম্বরে নামে। বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্যাটসম্যানরা এ বার ভাবতেই পারে, নারিনকে গোনি যদি মেরে দিতে পারে, আমরাও পারব। এর পর কিন্তু কেকেআরের সঙ্গে অন্য টিমের ম্যাচ পড়লেই গোনির ব্যাটিংয়ের ভিডিও চলবে! |
স্টিভ স্মিথের সেই অবিশ্বাস্য শট। ছবি বিসিসিআই-এর সৌজন্যে |
স্মিথ-ম্যাজিক
আমরা স্টিভ স্মিথকে নামাচ্ছিলাম না বলে অনেক সমালোচনা হচ্ছিল। আসলে অলরাউন্ডার বাছতে আমরা সমস্যায় পড়ছিলাম। কিন্তু চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে স্মিথ যা খেলে দিল, তার পর ওকে ডাগআউটে রাখার কোনও উপায় নেই। শুধু ১৬ বলে ৩৯ নয়, তিন-তিনটে এমন ক্যাচ ধরল যে, গোটা টিমটার শরীরী ভাষা পাল্টে গেল। আর ডোয়েন ব্র্যাভোকে মারা ওই রিভার্স সুইপে ছয়টা? গোটা ক্রিকেটজীবনে ও রকম শট খুব কম দেখা যায়। শুনলাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে সঞ্জয় মঞ্জরেকরঅনেকেই বলেছে, এই আইপিএলের সেরা শট। আমি শুধু বলব, অবিশ্বাস্য একটা শট। স্মিথের ইনিংস আর ফিল্ডিং আমাদের দলের শরীরী ভাষাটাই বদলে দিয়েছে। চেন্নাই ম্যাচে আমাদের ফিল্ডিং দেখেছেন? দিন্দাও ডাইভ মেরে বাউন্ডারি আটকেছে। ফিল্ডিংয়ের সময় এক জন ভাল করলে, বাকিরাও সেটাই করতে চায়। আমাদের মনের জোরও অনেক বেড়ে গিয়েছে স্মিথের পারফরম্যান্সে।
শেষ বলের ‘থ্রিলার’
চেন্নাই সুপার কিংস বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ম্যাচের শেষ বলটার পর আমার আমির খানের ‘লগান’ সিনেমাটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ওখানে শেষ বলে ছ’রান দরকার ছিল। ইংরেজ ক্যাপ্টেন হাই ক্যাচটা লুফে লম্ফঝম্ফের পর দেখল, বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে! এখানেও দেখলাম, জাডেজার শটটা ধরে আরসিবি প্লেয়াররা যখন নাচানাচি করছে, আম্পায়ার ‘নো বল’ ডেকে বসল! এ রকম ঘটনা কিন্তু সাধারণত ঘটতে দেখা যায় না। ঘটলে, প্রভাবটা মনে অনেক দিন থাকে।
ক্যাচে শেষ ম্যাচ
দুর্ভাগ্য যে, আমাদের ক্ষেত্রেই সেটা ঘটল। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের সঙ্গে আমাদের, মানে পুণে ওয়ারিয়র্সের ম্যাচ ছিল। ব্যাট করতে নেমে আমরা তখন ভাল বিপদে। তবু রস টেলর ছিল। ডাগআউটে বলাবলি করছিলাম, রস যতক্ষণ আছে, ম্যাচটা জেতার সম্ভাবনাও আছে। কিন্তু পঞ্জাবের গুরকিরত সিংহ যে ও রকম অবিশ্বাস্য একটা ক্যাচ ধরে বসবে, কে জানত! বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে এক হাতে রসের ক্যাচটা নিয়ে ফেলল! আমাদেরও আশা শেষ।
গেইল বনাম কেকেআর
টি টোয়েন্টির রাজা বললে যা বোঝায়, গেইল তাই। নতুন করে কিছু বলার নেই। শুধু কেকেআরের বিরুদ্ধে ৮৫ রানের ইনিংসটা দেখার পর ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য একটা বার্তাই থাকছে। স্ট্র্যাটেজি কোরো না। বরং ঘোর মানসিক অবসাদের জন্য তৈরি হও!
|