অধিনায়কত্বের আদর্শে বরাবরই তিনি ক্যাপ্টেন কুল-এর উল্টো মেরুর বাসিন্দা। ডিপ্লোমেসির ধার ধারেন না। গোল-গোল কথার চাদরে সত্যি লুকিয়ে রাখেন না। রাগ, হতাশা, আনন্দ সব কিছুতেই সোজাসাপ্টা গৌতম গম্ভীর।
তাই মাঠে নাইট অধিনায়কের হতাশার চরম বহিঃপ্রকাশ যে মাঠের বাইরে এ ভাবে ঘটে যাবে, তাতে অবাক হওয়ার বিশেষ কিছু নেই।
সাধারণত, কেকেআর ম্যাচ হারুক বা জিতুক, গম্ভীরকে সাংবাদিক সম্মেলনে দেখা যায়। বিশেষ করে টিম হারলে তো অধিনায়ক আসবেনই। মঙ্গলবার কিন্তু ব্যতিক্রম হয়ে থাকল। মোহালিতে ম্যাচ হেরে সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন না গম্ভীর। পাঠিয়ে দিলেন সুনীল নারিনকে। তখনও জানা যায়নি যে, ড্রেসিংরুমে ঢুকে রাগ চাপতে না পেরে হেলমেটই ছুড়ে বসে ছিলেন নাইট অধিনায়ক!
এত দিন কেকেআর জেতা ম্যাচ হেরে গেলে, তাঁকে বকাঝকা করতে শোনা গিয়েছে। কিন্তু হেলমেট ছুড়ে বসার মতো কাণ্ড কোনও দিন ঘটিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। আর এখানেই শেষ নয়। মঙ্গলবারের মোহালিতে ক্ষিপ্ত গম্ভীর ড্রেসিংরুমে চিৎকার-চেঁচামেচিও কম করেননি। ব্যাটসম্যানদের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলেছেন। সাফ বলে দিয়েছেন, “জেতা ম্যাচ আমাদের হারতে হল।” নিজেকেও ছাড়লেন কি? ম্যাচের পর তো প্রকাশ্যেই বলে দিলেন, “আমার আর মর্গ্যনের উচিত ছিল ম্যাচটা শেষ করে আসা।” |
হতাশা। ম্যাচের পরে গৌতম গম্ভীর। মঙ্গলবার। |
গম্ভীর ক্ষুব্ধ। টিমের মালকিন আবার প্রবল বিষণ্ণ। মানে, জুহি চাওলা।
মঙ্গলবারের মোহালিতে যদিও এক নয়, দুই নায়িকা উপস্থিত ছিলেন। দু’জনেই টিম মালকিন। একজন জুহি হলে, অন্য জন প্রীতি। ভিভিআইপি গ্যালারিতে একে অন্যের চেয়ে খুব বেশি দূরত্বে ছিলেন না দু’জনে। কিন্তু আবেগের বহিঃপ্রকাশে কত তফাত!
ম্যাচে কিংস ইলেভেন কী করছে না করছে, তা বোঝার জন্য ম্যাচ দেখার দরকার ছিল না। প্রীতির দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নিলেই হবে। নারিনকে এক-একবার বাউন্ডারিতে ফেলেছেন মনপ্রীত গোনি, আর গালে ছোট্ট টোল, পানামা টুপি-লাল জিন্স-সাদা স্লিভলেস টি-শার্টে প্রীতি জিনটা মুহূর্তে ‘জরা হটকে!’ শেষ ওভারে যখন প্রবীণকুমার বল করছেন তখন তো প্রীতি হাতে লাল পতাকা নিয়ে একদম রেডি। কখন টিম জিতবে, আর কখন তিনি মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। কখন গ্যালারির দিকে ছুড়ে দেবেন ফ্লাইং কিস।
জুহি আবার সারাক্ষণ ঠোঁটের কোণে একটা হালকা হাসি ঝুলিয়ে রেখে গেলেন। রজত ভাটিয়ার বিশাল দু’টো ছক্কার সময় যা, ইউসুফ পাঠানের আউট হওয়ার সময়ও তাই। আসলে ম্যাচ যতই শেষ ওভারে যাক, সম্ভবত নাইট মালকিনের বিশ্বাস ছিল টিম জিতেই মাঠ ছাড়বে। কিন্তু শেষ বলের আগে বোধহয় বুঝে যান, আর হবে না। তাই তাঁর হাসিও আর দেখা যায়নি। |
স্বাভাবিক। ইডেনে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ম্যাচের পর আর কেকেআর ম্যাচে দেখা যায়নি জুহিকে। শাহরুখও আসছেন না। এ দিন আচমকাই দেখা যায়, ভিভিআইপি গ্যালারিতে জয় মেটা, বেঙ্কি মাইসোরদের সঙ্গে হাজির কেকেআর মালকিনও। সাদা টি-শার্ট, মেকআপ ছাড়া একেবারে আটপৌরে সাজে। জানা গেল, নিজের শু্যটিং, পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠান— সব ফেলে জুহি এসেছিলেন প্রীতিকে তাঁর ঘরের মাঠে হারাবেন বলে। বদলে কী দেখতে হল? ৪২ বলে ৫২ দরকার এই অবস্থা থেকে হার। শেষ ওভারে ১১ রান তুলতে না পারা। সাধে আর শেষে টিমের ক্রিকেটারদের জুহি বলে গেলেন, “এত দূর থেকে এলাম। কিন্তু হতাশা ছাড়া কিছু পেলাম না!”
|