নিজস্ব সংবাদদাতা • মশাট ও খানাকুল |
বাঁকুড়ার পরে হুগলিতেও তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। কালো পতাকা দেখানো হয় তাঁকে। ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি ওঠে। এ ভাবেই দিল্লিতে রাজ্যের মন্ত্রীদের হেনস্থার জবাবদিহি চায় আন্দোলনকারীরা।
দিল্লি-কাণ্ডের জেরে গত ১০ এপ্রিল খানাকুলের পাতুল গ্রামে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের প্রায় ৪০টি বাড়িতে তৃণমূলের লোকজন ভাঙচুর, লুঠপাট চালায় বলে অভিযোগ। গোটা পনেরো বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুড়ে মারা যায় গবাদি পশু।
মঙ্গলবার সূর্যকান্তবাবুর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের কুড়ি জনের একটি প্রতিনিধি দল ওই গ্রামে যায়।
তার আগে মশাটে দলীয় কার্যালয়ে যান বাম নেতারা। সেখানে আগে থেকেই জড়ো হয়েছিল তৃণমূল ও দলের ছাত্র সংগঠনের বেশ কিছু নেতা-কর্মী। সূর্যবাবুর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। কালো পতাকা দেখানো হয় বিরোধী দলনেতাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় বিক্ষোভকারীদের। পরে অবশ্য পার্টি অফিসে ঢুকে খানিক ক্ষণ সময় কাটান সূর্যবাবুরা। পুলিশ নিরাপত্তায় কিছু ক্ষণ পরে বাম নেতাদের কনভয় রওনা দেয় খানাকুলের দিকে। পরিস্থিতি আঁচ করে তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা থেকে খানাকুল পর্যন্ত রাস্তায় জায়গায় জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। |
সূর্যকান্তদের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। মঙ্গলবার মশাটে দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি। |
আরামবাগের আরাণ্ডিতে রাস্তার ধারে কালো পতাকা টাঙানো হয়েছিল। সূর্যকান্তর গাড়ি পাতুলে ঢোকার মুখে প্রায় প্রতি মোড়ে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের লোকজন। বিরোধী দলনেতা বলেন, “এ তো নতুন কিছু নয়। বিক্ষোভ দেখাচ্ছে দেখাক, কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে হামলা বন্ধ করুক।” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে বিরোধী দলনেতাকে কালো পতাকা দেখানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনও গোলমাল হয়নি।” খানাকুলের ঘটনার দায় অস্বীকার করেন তিনি।
এ দিকে, বিরোধী নেতাকে সামনে পেয়ে পাতুলের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গ্রামে পুলিশ ক্যাম্পের আর্জি জানান সকলেই। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে তাঁদেরই নির্যাতন করছে। সূর্যবাবু সকলকে আশ্বস্ত করে বলেন, “বিষয়টি আমরা সরকারকে জানাব। যতদূর যেতে হয় যাব। আপনারা ভয় পাবেন না। আমরা পাশে আছি।”
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই জেলা প্রশাসনের কর্তাদের ফোন করে পুলিশ ক্যাম্প তৈরির অনুরোধ জানান সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী। হামলার ঘটনার নিন্দা করে সূর্যকান্তবাবু বলেন, “তৃণমূল এবং পুলিশের যৌথ উদ্যোগে এত বড় নারকীয় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে। কারও ভাত ফেলে লাথি মেরে হাড়ি তুবড়ে দিয়েছে।” ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন দে’র মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে বসে অনেক কিছু বলেছেন। এখানে তাঁর দলের ছেলেদের তাণ্ডব দেখে লজ্জা হচ্ছে।” |