নিন্দনীয় আক্রমণের প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিল, হয়েছেও। কিন্তু সংস্কৃতিমান এবং অসংস্কৃত
নিম্নস্তরের মাঝে প্রসরমাণ ব্যবধানের যে নিয়তি, তাকে আমরা ঠেকাব কী করে?
রণবীর সমাদ্দার |
২০০৭-এ শিবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৌমিক বসু ছাত্রদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে মারা যায়। ২০০৪ থেকে ছাত্র-ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-সংঘর্ষের সূচনা। বছরের পর বছর সংঘর্ষ বাড়তে থাকে। ২০০৮-এ তা এত মারাত্মক আকার নেয় যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে, মন্টু প্রসাদ নামে এক ছাত্র বহিষ্কৃত হয়, অন্য আট জন ছাত্রের অন্য শাস্তি হয়।
ওই একই সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ইউনিয়ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। কারণ সর্বত্র প্রায় এক: দলীয় আনুগত্যের জোরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শাসক দলের সমর্থক ছাত্র-সংগঠনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা, ছাত্রছাত্রী ভর্তিতে ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, বিভিন্ন পেশাদারি অর্থকরী বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা। যদিও আশি এবং নব্বইয়ের দশকেই এই প্রবণতার সূচনা, কিন্তু এই শতাব্দীর প্রথম দশকে তা বড় আকার ধারণ করেছে।
সাম্প্রতিক ইতিহাস ভুলে আমরা বিশ্লেষণে প্রবৃত্ত হই, সে জন্যই এই উদাহরণগুলো মনে রাখা দরকার। আমরা কোনও কল্পিত উদারনৈতিক জগতের বাসিন্দা নই। ছাত্র-রাজনীতির বিষয়কে ভোটাধিকারের বিষয়ে পর্যবসিত করলে ওতে শুধু ভাবের ঘরে চুরি হবে। সমস্যা চিহ্নিত হবে না। তার বিশ্লেষণ হবে না, আলোচনা এগোবে না, ফলে নতুন রাস্তাও দেখা দেবে না। |
দখল চাই। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায়। ১০ এপ্রিল ২০১৩। |
ছাত্র-ইউনিয়ন গঠনের অধিকার এসেছিল বহু সংগ্রামের ফলে। কিন্তু কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে বড় বড় ছাত্র-আন্দোলন ইউনিয়ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হয়নি। হয়েছে সমাজের নানা সমস্যাকে কেন্দ্র করে, শিক্ষা সম্পর্কিত নানা বিষয়ে, শ্রমজীবী মানুষের সংহতিতে, কখনও কখনও আন্তর্জাতিক বিষয়ে, যার অন্যতম ছিল উপনিবেশবাদ-সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা। ছাত্র-যুবকরা সাক্ষরতা প্রসারে সহায়তা করত, বন্যা খরা ও অন্যান্য বিপর্যয়ের মোকাবিলায় সামনের সারির সৈনিক হত, একটা বড় অংশ আদর্শের আবেগে হয়ে যেত ফেরারি ফৌজ। প্রতিষ্ঠানসর্বস্ব, ভোটসর্বস্ব রাজনীতি থেকে এই ছাত্র-আন্দোলনের অবস্থান ছিল বহু যোজন দূরে। লোকে বলত, ছাত্র-রাজনীতি মানে আদর্শের রাজনীতি।
সে কাল আর এ কালের মাঝে তফাত আছে, জানি। কিন্তু এ তো সব যুগে স্থিতাবস্থার পক্ষে ওকালতি। প্রশ্ন হল, ছাত্র-রাজনীতি বলতে আমরা কী বুঝি? তার দ্যোতনা কী? কী তার অঙ্গীকার সমাজের প্রতি? শুধু ছাত্রছাত্রীরা তাতে জড়িত, এটাই কি ওই নামকরণের কারণ? না কি এই রাজনীতির বিশেষত্ব আছে; রূপান্তরী, সমাজ-পরিবর্তনকারী ও পরিবর্তনকামী দ্যোতনা আছে? ভোটভক্তি যদি দ্বিজভক্তি হয়ে দাঁড়ায়, রাজভক্তিতে পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন দেখা যায়, ছাত্রাবস্থায় সবাই ছাত্র-ইউনিয়ন নির্বাচন-কেন্দ্রিক বামপন্থী, ছাত্রাবস্থা শেষ হলে ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে গিয়েছে। এই কেরিয়ার গড়ার জন্য সীমিত ডোজ-এর বামপন্থার প্রতি সমাজের দুর্বলতা বা আকর্ষণ কেন থাকবে?
নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র-রাজনীতির প্রথম পরিণাম, এই রাজনীতি ভোটসর্বস্ব, কেরিয়ার-কেন্দ্রিক। নিজস্ব জগতে নিমগ্ন হয়ে পড়ে। বহিঃসমাজের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক থাকে না। ‘অ্যাকাডেমিক নোবিলিটি’ বা পণ্ডিত অভিজাতবর্গ উৎপাদনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায় এই ধরনের ছাত্র-সক্রিয়তা। দ্বিতীয়ত, ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশ এ ধরনের ভোট এবং ইউনিয়নসর্বস্ব রাজনীতি থেকে দূরে সরে যায়। ফলে দুর্নীতি বাড়ে। ফলে লিবারেল জগতের স্বর্গ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুন, রাহাজানির লীলাক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে বহু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
তুলনা যদি টানতে হয়, বরং ইউরোপের দিকে তাকানো উচিত, যেখানে ২০১০-১১ সালে উত্তাল ছাত্র-আন্দোলন ইতালি, ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন, স্পেনকে ভাসিয়ে দিয়েছিল। বার্সেলোনা, বোলোনিয়া, রোম, প্যারিস, লন্ডন, বার্লিন উত্তপ্ত হয়েছিল সহস্র সহস্র ছাত্রছাত্রীর মিছিলে। দাবি ছিল, শিক্ষাক্ষেত্র থেকে নয়া উদারনৈতিক নীতি এবং নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করতে হবে, অভিবাসী মানুষের উপর নিপীড়ন বন্ধ হোক, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সুরক্ষা চাই।
লিখতে লিখতেই যেন শুনতে পাচ্ছি, এ হল ষাটের দশকের মোহময়তায় আবদ্ধ মানুষের কথা। জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন, পঁয়তাল্লিশ বছরের আগের ধ্যানধারণার কারাগারে বন্দি মানুষের আর্তি। অথবা কেউ হয়তো বলছেন, ইউনিয়নের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পক্ষে কুযুক্তি।
প্রথম মন্তব্য সম্পর্কে বলতে পারি, এ কথা কখনও মেনে নিইনি যে, আদর্শের জগত কল্পস্বর্গ। বাস্তবমুখী হওয়ার অর্থ আদর্শ ছেড়ে দেওয়া। দ্বিতীয় মন্তব্য সম্পর্কে একটাই উত্তর, অপব্যাখ্যা করার থেকে কাউকে বিরত করব কী করে? ছাত্র-রাজনীতির যে সংকটের মুখোমুখি আজ পরিবর্তনকামী ছাত্রছাত্রীরা, সেই সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের এই সমস্যার বিশ্লেষণ করতেই হবে। ভোটসর্বস্বতা থেকে বেরোবার পথ বার করা আজ তাদের ঐতিহাসিক কর্তব্য ও চ্যালেঞ্জ।
সেই অনাগত নতুন পথের কোনও আবছা রূপও কি আমরা এই সময়ে কল্পনা করতে পারি? আবার আমি বলব, ছাত্র আন্দোলনের গৌরবময় অতীতের পাতায় ফিরতে হবে, তার পুনরাবৃত্তির জন্য নয়, তার নবীকরণের লক্ষ্যে, তার আভাসকে আজকের পাথেয় করার জন্য। কী ভাবে তা সম্ভব? অল্প কিছু পুরনো তথ্যের উল্লেখ করব বহুচর্চিত ষাটের দশকের প্রেসিডেন্সি আন্দোলনের আখ্যান থেকে। তবে শুধু প্রেসিডেন্সি কলেজ নয়, অন্য বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একই জিনিস লক্ষ করা গিয়েছিল। দলীয় নিয়ন্ত্রণ ভেঙে, পার্টি-আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, ছাত্র-ঐক্য অর্জনের লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সক্রিয়তার প্লাবন এসেছিল। যাকে দেখে অনেক নীতি-নির্ধারক বলেছিলেন, এ হল ‘স্টুড্ন্ট সেন্ট্রালিটি’ অর্থাৎ ছাত্র-কেন্দ্রিক জনজোয়ার। সারা বাংলা জুড়ে বহু কলেজে সে সময় গিয়েছি, ছাত্রদের অন্তর্কলহে খুনোখুনি দেখিনি। দেখেছি দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সমাজপতিদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জাগরণের চেহারা। এর প্রমাণ মিলত জনপথে।
তার ফলে প্রেসিডেন্সি কলেজে ধর্মঘটি ছাত্রছাত্রীদের বলতে হয়নি, বহিরাগতরা আমাদের আক্রমণ করছে, সরকার আমাদের বাঁচাও। আর্তনাদের পরিবর্তে ছিল বাইরের শ্রমজীবী জনসাধারণের সঙ্গে মেশার এবং মিলে যাওয়ার অথবা বাইরের জনজোয়ারে নিজেকে বিলীন করার প্রতিশ্রুতির ধ্বনি। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ১৯৬৬-৬৭ তে অন্তত তিন-চার বার বাইরে থেকে বোমাবর্ষণ বা হামলার হুমকি এসেছে, পুলিশি অভিযানও হয়েছে, কিন্তু প্রেসিডেন্সির উচ্চবর্ণজাত, উচ্চবর্গপ্রসূত ছেলেমেয়েদের বাঁচিয়েছে বাইরের ছাত্রসমাজ, শিক্ষকেরা, এবং পাড়াপড়শিরা। দুর্বৃত্তরা আজ এসেছে বাইরের থেকে হামলা করতে, তা নিন্দনীয়। কিন্তু সমব্যথী, সক্রিয়, সহানুভূতিশীল ছাত্রসমাজ নিয়ে সমাজের যে গর্ব ছিল, আজ তাতে ভাটার টান কেন? আমাদের কি এ ক্ষেত্রে অন্তর্মুখী হওয়ার দায় নেই?
ছাত্র-আন্দোলনের ভবিষ্যৎমুখী রূপকল্পনার ক্ষেত্রে দুটো মডেল আছে: একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জে এন ইউয়ের ক্যাম্পাস-কেন্দ্রিক নিয়মতান্ত্রিক সক্রিয়তার ধাঁচ; অন্যটা হল ৬০-৭০ এর দশকের মডেল, যার মূল কথা প্রতিষ্ঠানসর্বস্বতার বিরোধিতা, দলীয় কর্তৃত্বকে অমান্য করে ছাত্র-ঐক্যের পথে এগোনো এবং বৃহত্তর সমাজে ছাত্রছাত্রীদের নিজেকে বিলীন করার নিরন্তর প্রয়াস। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়েও ওই রকম ধারা এসেছিল। বিতর্কসর্বস্ব র্যাডিকালিজম এবং ইউনিয়ন নির্বাচন-কেন্দ্রিক প্রচারসর্বস্বতা থেকে সরে এসে বেশ কিছু যুবকযুবতী বিহার উত্তরপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলে হারিয়ে গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে কোনও পদচিহ্ন না রেখেই।
যে ছাত্র-আন্দোলন থেকে প্রতিষ্ঠানের গণতন্ত্রীকরণ হতে পারে, তার রূপরেখা নির্মাণে হাত দিতেই হবে। তার এক বড় উপাদান হবে বহিঃসমাজ সম্পর্কে চেতনা। পথ এবং পাথেয়ের বিবাদ থাকেই। কিন্তু এই দ্বন্দ্বের সাময়িক সমাধানে আসে সমাবেশ এবং জাগরণের সাফল্য। ছাত্র-রাজনীতি বলতে আমরা কী বুঝি এবং কী চাই, সেটা পরিষ্কার হলে পথ ও পাথেয়ের দ্বন্দ্বের গোলকধাঁধায় ঘুরে মরতে হবে না। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত চুনী কোটালের মৃত্যুর পর কিছু ব্যতিক্রমী কণ্ঠস্বর বাদ দিলে ছাত্রসমাজ নিশ্চুপ ছিল। দলীয় নিয়ন্ত্রণের শাসনে ওই বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনগ্রসর জনজাতি এবং বর্ণের ছাত্রছাত্রীরা কোনও কথা বলতে পারেনি। সে ঘটনাও ইতিহাস! ভোট কবে কোথায় এ সব সময়ে পথ দেখাতে পেরেছে? চুনী কোটাল লোধা সমাজের প্রথম মহিলা যিনি বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পেরেছিলেন। ১৯৮৫ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। কিন্তু সৌভাগ্য বেশি দিন তাঁর সঙ্গী হয়নি। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি তাঁর কপালে জোটেনি। জুটেছিল উচ্চবর্ণজাত শিক্ষক এবং কেরানিবৃন্দের নিয়ত অপমান এবং লাঞ্ছনা। ২৭ অগস্ট ১৯৯২ চুনী আত্মহত্যা করেছিলেন অপমান ও হতাশার কোপে। ইউনিয়ন অধিকারে প্রমত্ত ছাত্রসমাজ তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলি ও দলিতদের কিছু সংগঠন কেবল এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। মনে আছে, এক দল যুবক এগিয়ে এসেছিলেন, চুনী কোটালের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে। মহাশ্বেতা দেবী লিখেছিলেন ‘ব্যাধখণ্ড’। বাংলা দলিত সাহিত্য-সংস্থা প্রতিবাদ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আত্মকেন্দ্রিকতার বিরুদ্ধে। বাকি শিক্ষাসমাজ ছিল নিশ্চুপ।
এই একবিংশ শতাব্দীর বাংলায় উচ্চবর্ণ, উচ্চ ও উচ্চ মধ্যবিত্ত সংস্কৃতি আর সমাজের নীচের স্তরের মাঝে ফাটল বাড়ছে। এই দ্বৈততার এক বড় প্রমাণ বহিরাগতদের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় চড়াও হয়ে আক্রমণ করা। যে সাম্প্রতিক ইতিহাসের ইঙ্গিত করেছি, তাতে ঘটনাবলির এই দিকে মোড় নেওয়ায় বিস্মিত হওয়ার কথা নয়। এই দুর্ভাগ্যজনক ও নিন্দনীয় কাণ্ডের প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিল, হয়েছে-ও। আশা করা যায়, বাকি সমাজও বুঝেছে, বিশেষত নীচের সমাজ, যে বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থানে হাত দিলে কী পরিণাম হতে পারে। এই সভ্য, শিক্ষিত সমাজ কী ভাবে তাদের নরকের চিরস্থায়ী বাসিন্দা করে দেবে।
সে না হয় হল। শিক্ষাহীনদের বিদ্রুপ শুনতেই হবে: ছোটলোক, দুর্বৃত্ত, গুন্ডা... কিন্তু সংস্কৃতিমান এবং অসংস্কৃত নিম্নস্তরের মাঝে প্রসরমাণ ব্যবধানের যে নিয়তি, তাকে ঠেকাব কী করে?
বিবেকবান শিক্ষিতদের সামনে উদ্যত বিপর্যয় হয়তো সেটাই!
|
সমাজতত্ত্ববিদ, ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ-এর অধিকর্তা |