|
|
|
|
মুম্বই বিমানবন্দর |
উড়ল বিধি ভাঙা বিমান, সমস্যা তদন্তেও |
সুনন্দ ঘোষ • কলকাতা |
এস্টাব্লিশ আইএলএস --- রজার। কনটিনিউ অ্যাপ্রোচ --- রজার। ক্লিয়ার টু ল্যান্ড --- কনফার্ম।
রানওয়েতে নামার সময়ে পাইলটের সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসারের এই কথোপকথন রেকর্ড হয়ে যায় ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)-এ। কিন্তু, গত শুক্রবার সকালে আবু ধাবি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার যে বিমান মুম্বই বিমানবন্দরে নেমেছিল, তার সেই রেকর্ড মুছে গিয়েছে সিভিআর থেকে।
কী ঘটেছিল সে দিন?
মুম্বই বিমানবন্দর সূত্রের খবর, আবু ধাবি থেকে যাত্রী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া চলে আসে মুম্বইয়ের মাথার উপরে। ততক্ষণ পর্যন্ত পাইলটের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন মুম্বই এটিসি অফিসার। কিন্তু, শেষ মূহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ। যোগাযোগ ছাড়াই বিমান নেমে আসে মুম্বইয়ের রানওয়েতে। অবাক হয়ে যান এটিসি অফিসারেরা। রানওয়েতে নেমে আসার ঠিক আগের মূহূর্তে এটিসি-র যে অনুমতি প্রয়োজন হয়, অভিযোগ, সে দিন ওই বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন ওটাল এটিসি অফিসারের সেই অনুমতি নেননি। যার মানে শেষ মূহূর্তে এটিসি তাঁকে ‘ক্লিয়ার টু ল্যান্ড’ বলেনি। প্রশ্ন উঠেছে, সেই অনুমতি ছাড়া পাইলট বিমান নিয়ে কী করে নেমে এলেন রানওয়েতে? সেই সময় অন্য বিমান থাকলে বড়সড় দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকতো মুম্বই। ঘটনার তদন্তে নেমেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)।
কিন্তু, তদন্তে নেমে সমস্যায় পড়েছেন ডিজিসিএ অফিসারেরা। ওই বিমানের সিভিআর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না কোনও তথ্য। কারণ, বিমান দ্বিতীয়বার আকাশে উড়লে আগের কথাবার্তা মুছে গিয়ে নতুন করে শুরু হয় রেকর্ডিং। এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমানের ক্ষেত্রে ঠিক তা-ই ঘটেছে। ডিজিসিএ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেও সেই উড়ানের সিভিআর সংরক্ষণ না করে কেন ওই বিমানকে দ্বিতীয়বার উড়তে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে কথা বলতে চাননি ক্যাপ্টেন ওটাল। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, বিমান নামার সময়ে বিমানের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সে কথা নামার পরেই তিনি সংস্থার লগ-বুকে লিপিবদ্ধও করেছেন।
সিভিআর-এর মতোই এটিসি-রও নিজস্ব রেকর্ডিং ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেক পাইলটের সঙ্গে এটিসি অফিসারের কথাবার্তা রেকর্ডিং করা থাকে সেখানে। এক মাসের আগে সেই রেকর্ডিং মোছা হয় না। মঙ্গলবার ফোনে ডিজিসিএ প্রধান অরুণ মিশ্র বলেন, “সিভিআর মুছে যাওয়ায় এটিসি-র ওই টেপই এখন আমাদের প্রধান ভরসা। সেই টেপ থেকেই জানা যাবে, পাইলটের সঙ্গে এটিসি-র কী কথা হয়েছে। কতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। তা ছাড়া ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার বা ব্ল্যাক-বক্স-এর তথ্য থেকেও অনেক কিছু জানা সম্ভব।” প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, পাইলটের তরফে ভুল হয়েছিল। তবে, এটিসি-র অফিসারও পুরোপুরি নির্দোষ বলে মানছে না ডিজিসিএ। অরুণবাবুর কথায়, “সে কারণে দুই পাইলট ও দুই এটিসি অফিসারকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
অভিজ্ঞ এক পাইলটের কথায়, “রানওয়েতে নামার আগে প্রতি মূহূর্তে এটিসি আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে। এটিসি-র সঙ্গে কথা না বলে আমি রানওয়ের কাছে আসতেই পারব না। হতে পারে সে দিন ‘কনটিনিউ অ্যাপ্রোচ’ পর্যন্ত এটিসি-র সঙ্গে পাইলটের যোগাযোগ ছিল। ততক্ষণে রানওয়ে দেখতে পেয়ে গিয়েছিলেন পাইলট। কিন্তু, শেষ মূহূর্তে কোনও কারণে ‘ক্লিয়ার টু ল্যান্ড’ শুনে তিনি কনফার্ম করেননি। অনেক সময়ে শেষ মূহূর্তে এটিসি অফিসারকে ছেড়ে কথা বলতে হয় টাওয়ার কন্ট্রোলারের সঙ্গে। দু’টি ভিন্ন চ্যানেলে কথা হয়। সে দিন হয়তো দ্বিতীয় চ্যানেল অন করেননি পাইলট।” অরুণবাবু জানিয়েছেন, ওই দু’টি চ্যানেল সে দিন ঠিক মতো কাজ করেছিল কি না, তা জানা যাবে ওই ব্ল্যাক-বক্স থেকেই। শুক্রবারের ঘটনা ঘটার পর পরই ডিজিসিএ-এর তরফে ওই পাইলটকে বসিয়ে বিমানের সিভিআর উদ্ধার করতে বলা হয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষকে। অরুণবাবু বলেন, “আমাদের সেই নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি। জানা গিয়েছে, এক অফিসার ছুটিতে ছিলেন। তিনি অন্য এক জনকে কার্যকর করতে বলেছিলেন। কিন্তু, তা হয়নি।” সিভিআর উদ্ধার না করেই বিমানটি আবার উড়ে গিয়েছে আকাশে। ক্যাপ্টেন ওটাল শনিবার সকালেও মুম্বই থেকে বিমান নিয়ে বেঙ্গালুরু যাতায়াত করেছেন। অরুণবাবু জানান, ডিজিসিএ-এর সেই নির্দেশ কেন কার্যকর করা হয়নি তা নিয়েও আলাদা তদন্ত করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|