নিউ টাউন শহর তৈরি হচ্ছে ১০ লক্ষ মানুষের বসবাসের জন্য। এখন বাসিন্দার সংখ্যা ২৫ হাজারের মতো। এখন রোজ ১২.৩০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। সল্টলেক পুরসভার সহযোগিতা নিয়ে নিউ টাউনের বর্জ্য এমন জায়গায় ফেলা হয়, যেখানে ধারণ ক্ষমতা সীমা ছাড়িয়েছে বহু আগেই। সেখানে ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ বলে কোনও কিছুর অস্তিত্বও নেই। এই পরিস্থিতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তায় কর্তৃপক্ষ।
দেশের অন্যতম আধুনিক শহর নিউ টাউনের বর্জ্য ফেলার নিজস্ব জায়গাও তৈরি করেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ এমনই ‘পরিকল্পিত’ শহর যেখানে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার আগে কর্তৃপক্ষ পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করেন না। বিদ্যুৎ সরবরাহের পাকা ব্যবস্থা করা হয় না। আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থার কোনও উদ্যোগ থাকে না।
আগের বামফ্রন্ট সরকার নিউ টাউন পরিকল্পনার সময় ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি)-কে দিয়ে একটি সমীক্ষা করিয়েছিল। ভবিষ্যতে শহরে বর্জ্যের পরিমাণ কী হতে পারে, কী ভাবে তা প্রক্রিয়াকরণ করা যায় ইত্যাদি নিয়ে সবিস্তার রিপোর্ট জমা দেয় নীরি। এর পর একই বিষয় নিয়ে আরও একটি সমীক্ষা করানো হয় অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থকে দিয়ে। দুটি রিপোর্টেই বলা হয়, নিউ টাউনে ১০ লক্ষ মানুষের বসবাসের সুযোগ রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এক জন মানুষের থেকে প্রতিদিন ৫০০ গ্রাম বর্জ্য তৈরি হতে পারে। ইনস্টিটিউট অফ হাইজিনের অরুণাভ মজুমদার বলেন, “শুধু বর্জ্য ফেলা নয়, সে সব প্রক্রিয়াকরণের জন্য আধুনিক প্ল্যান্ট তৈরির দরকার।” সেই উদ্দেশ্যে নিউ টাউনের তিনটি অ্যাকশন এরিয়ার বাইরে বিয়ন্তা মৌজায় ১২৩.৫৫ একর জমি চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু শহর তৈরির জমি অধিগ্রহণ ও কেনার পাশাপাশি বর্জ্য ফেলার জায়গা আর কেনেনি হিডকো।
তবে আবাসন নির্মাণ ও মানুষের বসবাস, আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় সল্টলেক পুরসভার সঙ্গে বন্দোবস্ত করে মোল্লার ভেড়ি নামে এক জায়গায় বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। কলকাতা থেকে নিউ টাউনে প্রবেশের আগে ডানদিকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে ওই জায়গা এখন সল্টলেকের বাসিন্দাদের বর্জ্যেই উপচে পড়ছে। তার ওপর নিউ টাউনের ২৫ হাজার বাসিন্দার বোঝা।
নবগঠিত নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) কর্তৃপক্ষ জানান, পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। চিফ ইঞ্জিনিয়ার প্রণব সেনগুপ্ত বলেন, “দ্রুত একটা পাকাপাকি ব্যবস্থা করা দরকার। কয়েকটি জমি চিহ্নিত হলেও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।” হিডকোর এমডি দেবাশিস সেন এ নিয়ে কোনও কথাই বলতে রাজি হননি।
নিউ টাউন তৈরির সময় ‘অ্যাকশন এরিয়া’র বাইরে বিয়ন্তা মৌজার জমির দাম ছিল কাঠা প্রতি ৩-৪ হাজার টাকা। আর বর্তমানে তা কাঠাপ্রতি ১৪-১৫ লাখ টাকা। নিউ টাউনে মোট ৮৭৭৭ একর জমি নেওয়ার কথা হিডকোর। এ পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৬৮৩৪.৯৮ একর। এর সঙ্গে রয়েছে মোটামুটি ২৫০ একর কেনা জমি। ২০০১ সালে নতুন শহরের জন্য হিডকো ‘অ্যাকশন এরিয়া’র জমি কিনেছিল কাঠাপ্রতি ৮-৯ হাজার টাকা দামে। সেই জমি বর্তমানে হিডকো বিক্রি করছে প্রতি কাঠা ন্যূনতম ৩.৫০ লাখ টাকায়।
পাশাপাশি, এখন নতুন করে বর্জ্য ফেলার জমি কিনতে গেলে যে বিপুল দাম গুণতে হবে, তা নিয়েই চিন্তিত এনকেডিএ এবং হিডকো উভয় সংস্থাই। যদিও রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত জানান, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, “কার্যকর হলে বর্জ্য জমা থেকে সমস্যা হবে না। এই প্রক্রিয়ায় যে টুকু বর্জ্য থাকবে তা থেকে উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি হবে। যা পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকদের দেওয়া যেতে পারে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই বিধানসভায় জানিয়েছি।” |