মহম্মদ ইকবাল, শম্ভুনাথ কাও এবং পার্থ বসুর পরে ফের এক তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হল। তিনি তারকেশ্বর চক্রবর্তী, ১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান এবং ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। অভিযোগ এক বৃদ্ধকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর। ঘটনা সোমবার রাতের। ওই বৃদ্ধ এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ইকবাল ও শম্ভুনাথ খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। পার্থবাবুর নামে প্রেসিডেন্সিতে ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে পুলিশ তদন্ত করছে। তালিকায় নতুন সংযোজন তারকেশ্বরবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সোমবার রাতে গাড়ি চালানো নিয়ে কিছু বচসার সূত্রে শান্তি কর্মকার নামে এলাকার ওই বৃদ্ধকে মারধর করেন তিনি। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারকেশ্বরবাবু।
ষাটোর্ধ্ব শান্তিবাবু মঙ্গলবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বলেন, “কোমরে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। বুকে-পিঠেও যন্ত্রণা রয়েছে। এক জন কাউন্সিলর এ রকম আচরণ করতে পারেন, ভাবতে পারছি না!” সেই সঙ্গেই রাস্তায় ফেলে মারার জন্য যথেষ্ট ‘অপমানিত’ বোধ করছেন তিনি। |
যাদবপুর থানায় জামিনযোগ্য ধারায় অভিযোগ করে শান্তিবাবুর ছোট ছেলে সৌরভ জানান, স্বর্ণব্যবসায়ী শান্তিবাবু নববর্ষের রাতে সাড়ে ১১টা নাগাদ বাঘা যতীন মোড়ে অটো থেকে নামেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বড় ছেলে সৌমেন। অভিযোগ, ওই সময়ে একটি স্করপিও গাড়ি (ডব্লিউবি-৬২ এএ৭৪৬৫) প্রায় তাঁর গায়ের উপরে এসে পড়ে। গাড়ির ‘লুকিং গ্লাস’টি শান্তিবাবুর ডানহাত ছুঁয়ে যায়। চিৎকার করে ওঠেন শান্তিবাবু। গাড়িতে একটি চাপড়ও মারেন। এর পরেই দাঁড়িয়ে যায় গাড়িটি। সৌরভের অভিযোগ, ওই সময়ে গাড়ি থেকে নেমে আসেন কাউন্সিলর তারকেশ্বর চক্রবর্তী। সঙ্গে আরও জনা পাঁচেক যুবক। অভিযোগ, গাড়িতে চাপড় মারায় শান্তিবাবুকে রাস্তায় ফেলে মারতে থাকেন তাঁরা। সৌরভ পুলিশকে জানান, কাউন্সিলরও তাঁর বাবাকে মারধর করতে থাকেন। বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে রেহাই পাননি সৌমেনও। তাঁকেও মারা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগে জানানো হয়েছে, প্রায় ১৫ মিনিট ধরে ধাক্কাধাক্কি ও মারধর চলে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরে বিদ্যাসাগর কলোনিতে বাড়ি শান্তিবাবুর। স্থানীয় এক রিকশাওয়ালা এই ঘটনার খবর শান্তিবাবুর বাড়িতে জানান। খবর পেয়ে মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে যান সৌরভ। এলাকার আরও কিছু লোকও পৌঁছে যান।
সৌরভের অভিযোগ, ভিড় বাড়তে দেখে শান্তিবাবুকে প্রাণে মেরে ফেলার শাসানি দিয়ে বরো চেয়ারম্যান ও তাঁর সঙ্গীরা গাড়িতে উঠে চলে যান।
ঘটনার পরে যাদবপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে শান্তিবাবু ও সৌমেনকে ভর্তি করানো হয়। সৌমেনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ওই রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়। শান্তিবাবু এখনও ভর্তি।
ডি সি (এসএসডি) সুজয় চন্দ বলেন, “গাড়ি চালানোর সময়ে রাস্তা পারাপার নিয়ে বচসা ও মারধরের একটা ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পেয়ে মামলাও রুজু করেছি। গাড়িটি কার, তার খোঁজ চলছে।” তবে ওই গাড়িটি অভিযুক্ত কাউন্সিলরের কি না, জানতে চাওয়া হলে সুজয়বাবু বলেন, “এই বিষয়ে এখনও কিছু জানতে পারিনি।”
মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে তারকেশ্বরবাবু এ দিন বলেন, “আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমি কাউকে মারধর করিনি। বেশি রাতে আমি ঘোরাফেরাও করি না। এলাকায় উন্নয়নের কাজ করছি বলে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।” |