প্রেসিডেন্সি-কাণ্ড
সোমেন-শিবিরকে কোণঠাসা করতে প্রশাসনকেই চাপ
প্রেসিডেন্সি-কাণ্ডে জড়িত সোমেন-অনুরাগীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক স্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এ বার চাপ সৃষ্টি শুরু হল তৃণমূলেরই শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের তরফে।
ওই ঘটনার ফুটেজে মধ্য কলকাতার ছাত্র-নেতা থেকে শুরু করে আরও যাদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সাংসদ সোমেন ও তাঁর বিধায়ক-পত্নী শিখা মিত্রের সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের দূরত্ব সুবিদিত। প্রেসিডেন্সির ঘটনার জেরে মাথাচাড়া দিয়েছে সেই গোষ্ঠী-সমীকরণই। এবং তার জেরেই এখন সোমেন-অনুগামীদের দলে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
দলের মধ্যে থেকেই প্রশ্ন উঠছে, গোলমালের পরে টিভি চ্যানেলে দলের যে ছাত্র-নেতা ও তাঁর সঙ্গীদের বিবৃতি দিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের এখনও কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আমাদের ছাত্র সংগঠন নেই। তা হলে আমাদের দলের ছাত্রেরা ওখানে গিয়েছিলেন কেন?”
প্রেসিডেন্সি-কাণ্ডে জড়িতদের ‘রং না দেখে’ গ্রেফতারের নির্দেশ পুলিশকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার সঙ্গে কারা যুক্ত, সেই ব্যাপারে দলীয় তরফেও তদন্ত চলছে। তবে দলের এক প্রবীণ নেতা বলেন, “সে দিন দলের কারা কারা ছিল, তা তো টিভিতে দেখা গিয়েছে। সেখানে দলের স্থানীয় কাউন্সিলর পার্থ (লালু) বসুকে যেমন দেখা দিয়েছে, তেমনই ছাত্র-নেতা তমোঘ্ন ঘোষ, তথাগত সাহাকেও দেখেছি।” তমোঘ্ন ও তথাগত, দু’জনেই সোমেন-ঘনিষ্ঠ। দলের এক প্রথম সারির নেতা বলেন, “দিল্লি-কাণ্ডে এসএফআইয়ের ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, শতরূপ ঘোষেদের যেমন টিভি চ্যানেলে বিবৃতি দিতে দেখা দিয়েছে, তেমনই প্রেসিডেন্সি-কাণ্ডে তমোঘ্নকে দেখা গিয়েছে। তা হলে প্রেসিডেন্সির ঘটনায় তমোঘ্নরা দায়িত্ব এড়াতে পারেন কী ভাবে?”
বিষয়টি নিয়ে তমোঘ্নর বক্তব্য জানা যায়নি। কিন্তু সোমেনবাবু স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, “আমি কাউকে আইন ভাঙার ছাড়পত্র দিইনি! আইন আইনের পথে চলবে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার যা শাস্তি, তা পাবে।” দলের তরফে প্রেসিডেন্সির বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি মঙ্গলবার বলেছেন, “সব ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষ। এ নিয়ে মন্তব্য করব না। আমাদের দলের লোকেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন চূর্ণ করতে পারে না! যারা গোলমাল করেছে, তারা আমাদের দলের লোক হতে পারে না! এর নিন্দা করেছি।” পার্থবাবুর বক্তব্যেই ইঙ্গিত, প্রেসিডেন্সি-কাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নিলে দলেরই ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে। কিন্তু ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্বের বিড়ম্বনা সহজে কাটার নয়। প্রথমত, পুলিশ যা-ই করুক না কেন, ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে পদক্ষেপ হচ্ছে না কেন? দ্বিতীয়ত, শুধু তমোঘ্ন-তথাগত কেন? কাউন্সিলর পার্থবাবুর (যিনি ঘটনাচক্রে ডেপুটি স্পিকার এবং তৃণমূল নেত্রীর স্নেহভাজন সোনালি গুহের স্বামী) বিরুদ্ধেও তো অভিযোগ রয়েছে। তাঁর ক্ষেত্রেই বা দল কী করছে?
তমোঘ্নদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবুর বক্তব্য, “পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হোক। পরে দেখা যাবে।” কাউন্সিলর পার্থবাবুর বিষয়েও মহাসচিব পার্থবাবুর জবাব, “বললাম তো, তদন্ত শেষ হোক! তার আগে যদি এ দোষী, ও দোষী বলা হয়, তা হলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে! আবার বলছি, আমরা যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হিংসার বিরোধী।” পার্থবাবুর পাল্টা দাবি, “দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর উপরে হামলা হল। এফআইআর হল। ন’দিন হয়ে গেল, কেউ গ্রেফতার হল না! কিন্তু প্রেসিডেন্সির ঘটনায় পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। প্রশাসন সক্রিয় না-হলে এটা সম্ভব হত?” পার্থবাবু জানান, প্রেসিডেন্সির ঘটনায় দলের লোকেরা যুক্ত থাকলে তাঁদের যেমন রেহাই নেই, তেমনই বিরোধী দল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা জড়িত থাকলে তাঁদেরও রেয়াত করা হবে না!
এখন কাকে ছেড়ে কাকে ধরা হবে, প্রেসিডেন্সি-কাণ্ডে তা-ই নিয়েই জেরবার শাসক দল!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.