আগে পাঁচটি সংস্থা জমি নিয়েছে। এ বার নিউটাউনের অর্থতালুক (ফিনান্সিয়াল হাব)-এ জমি চেয়ে হিডকো-র কাছে আবেদন করল তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। ফলে অর্থতালুকের জন্য চিহ্নিত প্রথম পর্যায়ের ২৫ একর জমির দুই-তৃতীয়াংশই বিলি হয়ে যেতে চলেছে।
হিডকো-র চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস সেন মঙ্গলবার বলেন, “নিউটাউনের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট (সিবিডি) এলাকায় ন’টি প্লটে পঁচিশ একর জমি রাখা ছিল অর্থতালুকের জন্য। এর সিংহভাগই (সাড়ে ১৭ একর) চলে গেল। ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সিবিডি-তে আরও কুড়ি একর চিহ্নিত করা হয়েছে।”
মহাকরণে নতুন সরকার ক্ষমতায় বসার পরে পশ্চিমবঙ্গের বিনিয়োগ-মানচিত্রে কার্যত খরা চলছে। গত দু’বছরে শিল্পের জন্য নতুন কোনও বড় লগ্নির খবর নেই। এমনকী, বিভিন্ন জেলায় সরকারের অধীনস্থ শিল্প-পার্কে ফাঁকা পড়ে থাকা ‘তৈরি জমি’ নেওয়ারও লোক মিলছে না বার বার বিজ্ঞাপন দিয়ে। উল্টে এবিজি-সহ বেশ কিছু সংস্থা রাজ্য ছেড়ে পাততাড়ি গুটিয়েছে। এমন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নিউটাউনের অর্থতালুকে বিনিয়োগের এ হেন আগ্রহকে ‘চোখে পড়ার মতো ঘটনা’ হিসেবেই দেখছে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ।
অর্থতালুক বা ফিনান্সিয়াল হাব-কে বলা যেতে পারে আর্থিক কর্মকাণ্ডের স্নায়ুকেন্দ্র। ব্যাঙ্ক, বিমা, মিউচুয়াল ফান্ড-সহ বিবিধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেখানে ফ্রন্ট অফিস, শাখা অফিস, ডেটা অফিস খোলে। থাকে বিদেশি মুদ্রা বিনিময়, শেয়ার ও ঋণপত্র কেনা-বেচার বন্দোবস্ত। সোজা কথায়, এক চৌহদ্দির মধ্যে সংস্থা ও গ্রাহকের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবার সংস্থান। হিডকো-সূত্রের খবর: তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিউটাউনের প্রস্তাবিত অর্থতালুকে জমি চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্ক অব বরোদা। জমির বায়না বাবদ তারা ২৫ লক্ষ টাকা করে জমাও দিয়েছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পরে হিডকো-কর্তৃপক্ষের ধারণা, তিনটি ব্যাঙ্কই শর্ত মেনে প্রস্তাব দিয়েছে, তাই জমি পেতে তাদের অসুবিধে হবে না। তবে স্বশাসিত সংস্থা ইনস্টিটিউট অফ কোম্পানি সেক্রেটারিস অফ ইন্ডিয়া এবং শ্রীরাম ক্রেডিট কোম্পানি নামে একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে তাদের আবেদনে কিছু অসচ্ছতা আছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে হিডকো।
নিউটাউনে অর্থতালুকের জন্য চিহ্নিত এলাকায় ইতিমধ্যে যে পাঁচটি সংস্থা জমি নিয়েছে, তারা হল: ইউকো ব্যাঙ্ক, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স, পশ্চিমবঙ্গ অর্থ নিগম ও পশ্চিমবঙ্গ পরিকাঠামো উন্নয়ন অর্থ নিগম। শেষের দু’টি রাজ্য সরকারি সংস্থা। দেবাশিসবাবু জানান, সিবিডি-তেই চিহ্নিত অঞ্চলের বাইরে ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক আগে জমি কিনে রেখেছে। সিবিডি-লাগোয়া এলাকায় জমি নিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক, কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। সব মিলিয়ে সিবিডি-র ভিতরে-বাইরে মোট ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান জমি নিয়েছে। হিডকোর নিয়ম, প্রতিটি সংস্থাকে জমির হাতবদলের তিন বছরের মধ্যে নির্মাণ সেরে কাজ শুরু করতে হবে। সরকারের এক মুখপাত্রের দাবি, সব ঠিকঠাক চললে ওই বারোটি সংস্থায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মিলিয়ে বেশ ক’হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে।
দেবাশিসবাবু জানান, অর্থতালুকে লগ্নি চেয়ে আবার বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। অর্থতালুক প্রকল্পকে তুলে ধরতে মুম্বই-দিল্লির মতো বেঙ্গালুরু-চেন্নাই-হায়দরাবাদে ‘রোড-শো’র পরিকল্পনাও রয়েছে রাজ্যের। |