রুটের অনুমোদন নিয়ে পরিবহণ দফতর ও কালনা পুরসভার মধ্যে দ্বন্দ্বে বিপাকে পড়লেন অটো রিকশার চালকেরা। অনুমোদন দেওয়ার আগে তাঁদের অনুমতি নেওয়া হয়নি জানিয়ে শহরের একটি রুটকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন কালনা পুর কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ক্ষুব্ধ অটোচালকেরা কালনা মহকুমাশাসক ও জেলা পরিবহণ আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন, অনুমতি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের অটো চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। জেলাশাসর ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “রুটের অনুমোদন দিতে পুরসভার অনুমতি বাধ্যতামূলক নয়।”
কালনা ১ ব্লকের নিভুজি বাজার মোড় থেকে ২ নম্বর ব্লকের পূর্ব সাতগাছিয়া পর্যন্ত অটো চালানোর জন্য ২০১১ সালের অক্টোবরে সাত যুবক জেলা পরিবহণ দফতরে আবেদন জানান। পরের বছর মার্চে রুট ও অটো চালানোর অনুমোদন দেয় রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি। গত ৯ জানুয়ারি নতুন রুটে অটো চলাচল শুরু হয়। কিন্তু ৪ ফেব্রুয়ারি অটো চালানো বন্ধ হয়ে যায়। ওই সাত অটোচালক যুবকের অভিযোগ, কালনার তৃণমূল বিধায়ক তথা পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু অভিযানে নেমে অটো চালানো বন্ধের নির্দেশ দেন। তার দিন তিনেক পরে বিশ্বজিৎবাবু লিখিত ভাবে জানান, পুরসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার পর থেকেই ওই রুটে অটো চালানো বন্ধ।
ওই যুবকদের দাবি, জেলা পরিবহণ আধিকারিক, জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের নানা স্তরে তাঁরা বিষয়টি জানালেও ফল হয়নি। শেষে তথ্য জানার অধিকার আইনে এক অটোচালক ১১ মার্চ পুরসভাকে চিঠি দিয়ে জানতে চান, মোটর ভেহিক্যালস আইন মেনে অটো চালানো হলেও কেন তা বন্ধ করা হল, এর জন্য যা ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ করবে কে। ২৬ মার্চ পুরসভা জানায়, তাদের অনুমতি না নেওয়ায় অটো চালানো বন্ধ করা হয়েছে। |
অটো রেখে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র। |
মঙ্গলবার মহকুমাশাসকের অফিসে নতুন মোটরযান দফতরের উদ্বোধন হয়। সকাল ১১টা নাগাদ অনুষ্ঠান মেটার পরে ওই সাত যুবক অফিসের সামনে অটো রেখে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। অটোচালক সঞ্জয় ঘোষ, শ্যামল সাহা, গোপাল বিশ্বাসদের বক্তব্য, “বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে অটো কিনেছিলাম আমরা। এখন অটো চালাতে না দেওয়ায় মাসিক কিস্তির টাকা শোধ করতে পারছি না।” কল্যাণ মণ্ডল নামে আর এক অটোচালকের দাবি, “যখন অটো চালানোর আবেদন করেছিলাম তখন আমাদের বলা হয়নি, পঞ্চায়েত বা পুরসভার নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিতে হবে। এখন পুরসভা কেন আপত্তি তুলছে জানি না।” এর পরে ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক চিরন্তন প্রামাণিক ও জেলা পরিবহণ আধিকারিক আশিসকুমার সাহা এ নিয়ে বৈঠক করে জানান, তার দফতরের অনুমোদন রয়েছে, তাই ওই যুবকদের অটো চালানোর ব্যাপারে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
পুরপ্রধান বিশ্বজিৎবাবুর অবশ্য দাবি, “অটো চালানোর জন্য সাধারণত এত বড় রুট হয় না। এ ব্যাপারে পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। পরিবহণ দফতরের দেওয়া এই রুটের অনুমোদন বৈধ নয়।” তিনি আরও জানান, ওই রুটে অটো চলাচলের ব্যাপারে রিকশা চালকদের সংগঠনও আপত্তি জানিয়েছে। শহরের অন্য অটো চালকেরাও অভিযোগ করেছেন, তাঁদের যাত্রীদেরও ওই অটোগুলি তুলে নিচ্ছে। এ সব কারণেই ওই সাতটি অটো চলাচল বন্ধ করা হয়েছে বলে দাবি পুরপ্রধানের। জেলা পরিবহণ আধিকারিক আশিসবাবুর প্রতিক্রিয়া, “ওই রুটের অনুমোদন বৈধ।” জেলাশাসকেরও বক্তব্য, “ওই যুবকদের কাছে যে অনুমোদন রয়েছে তাতে অটো চালাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” |