বরাকরে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনায় তদন্তের ভার দেওয়া হল গোয়েন্দা দফতরকে। গোয়েন্দা আধিকারিকেরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সূত্র খুঁজে পেয়েছেন। এছাড়া ডাকাতির সময় সিসি ক্যামেরা কেন কাজ করেনি তা নিয়ে গোয়েন্দা দফতর ও ব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষ যৌথ তদন্ত শুরু করেছেন।
বৃহস্পতিবার ভরদুপুরে পশ্চিমবঙ্গ ঝাড়খণ্ড সীমান্তের বরাকরে জনবহুল এলাকায় একটি রাস্ট্রায়ত্ব ব্যঙ্কের শাখায় ডাকাতি হয়েছিল। পাঁচ কর্মী ও এক গ্রাহককে মারধর করে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা লুঠ করে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এরপরেই ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। কিন্তু পাঁচদিন পেরোলেও খোঁজ মেলেনি ডাকাতদের। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ব্যাঙ্ক ডাকাতির তদন্তভার গোয়েন্দা দফতরের হাতে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাঙ্কেরও একটি বিশেষজ্ঞ দল তদন্ত শুরু করেছে।
এখনও পর্যন্ত গোয়েন্দা দফতর কতদুর এগিয়েছে তা জানতে চাওয়া হলে মঙ্গলবার কমিশনারেটের এসিপি (ডিডি) ইন্দ্রনীল কাঞ্জিলাল বলেন, “বেশ কিছু সূত্র পেয়েছি। সেগুলো ধরেই এগোচ্ছি।” তবে দলটির নাগাল পেতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে মনে করেন এসিপি (ডিডি)। ডাকাতির সময় সিসি ক্যামেরা কাজ না করায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ আগেই তুলেছিল পুলিশ। এ দিন এসিপি (ডিডি) জানান, ঘটনার দিন সিসি ক্যামেরার তারটি ছিন্ন করা হয়েছিল। কীভাবে তা তদন্তকারী অফিসারেরা তা বুঝতে পেরেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নিয়ে দুষ্কৃতীদের ছবি আঁকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রথম থেকেই পুলিশের অনুমান ছিল ঘটনায় ভিন রাজ্যের দুষ্কৃতীরা জড়িত। তদন্তে নেমে গোয়েন্দা অফিসাররাও একই ধারণা। পুলিশের একাংশের অনুমান, ঝাড়খণ্ড বিহারের অসংগঠিত অপরাধ চক্রগুলি আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলকে ‘সফট টার্গেট’ বানিয়েছে। গত কয়েকমাসে ঘটে যাওয়া পরপর কয়েকটি অপরাধের ঘটনায় জড়িতদের পাকড়াও করে পুলিশ এ বিষয়ে কিছুটা নিশ্চিতও হয়েছে। কিন্তু ভিন রাজ্যের দুষ্কৃতীদের উপর পুরোপুরি নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না পুলিশের পক্ষে। আগাম খবর না মেলায় দিশাহারা হয়ে পড়ছেন পুলিশ কর্তারাও। কয়েকমাস আগে রূপনারায়ণপুর এবং দুর্গাপুরে দুটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় লুঠপাট হয়। পরে পুলিশ এই দু’টি ঘটনায় জড়িতদের ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার করে। এর কিছুদিন পরেই রূপনারায়ণপুর ও বরাকরের দুটি সোনার দোকানে লুঠপাট হয়। এবারও ঝাড়খণ্ড থেকেই ধরা পড়ে দুষ্কৃতীরা। মাস খানেক আগে আসানসোলের কোর্টমোড় এলাকায় একটি সংস্থায় লুঠপাট চালানোর জন্য জড়ো হওয়া পাঁচ দুষ্কৃতীকে ধরে পুলিশ। এই অভিযুক্তেরাও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, অপরাধের আগে দুষ্কৃতীরা বার কয়েক মহড়াও দিচ্ছে। পরে সুযোগ বুঝে কাজ সেরে ওপারে চলে যাচ্ছে। আর একবার ওপারে যেতে পারলেই এদের নাগাল পাওয়া রীতিমতো কষ্টের। ফলে কপালের ভাঁজ চওড়া হচ্ছে পুলিশের। এই অবস্থায় সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই পুলিশের কাছে। তবে এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় ও এসিপি (ডিডি) ইন্দ্রনীল কাঞ্জিলালের আশ্বাস, বরাকরের ব্যঙ্ক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে। |