পুলিশের উর্দি পরেই বুকে ব্যাজ সেঁটে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর নিগ্রহের প্রতিবাদ জানালেন কিছু পুলিশকর্মী। কর্তব্যরত পুলিশ এই ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। দেওয়া হয়েছে তদন্তের নির্দেশও।
সম্প্রতি দিল্লিতে এসএফআই এবং সিপিএম সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চোট পান। তার পাল্টা হিসেবে রাজ্য জুড়ে সিপিএমের বহু পার্টি অফিসে তাণ্ডব চালায় তৃণমূল। নানা জায়গায় বিক্ষোভ-সভাও করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে আসানসোল পুলিশ লাইন ও মহিলা থানা-সহ একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। পুলিশের উর্দি পড়েই বুকে ছাপানো ব্যাজ সেঁটে সামিল হন কিছু কর্মী। তাতে লেখা, ‘বিগত ৯ এপ্রিল তারিখে দিল্লির বুকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের উপরে সুপরিকল্পিত ও বর্বরোচিত আক্রমণের প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই।’ তার নীচে ছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এসআই বিজিতাশ্ব রাউতের নাম।
পুলিশের বিরুদ্ধে শাসকদলের তাঁবেদারির অভিযোগ অনেক দিন ধরেই তুলে আসছে বিরোধীরা। এ দিনের ঘটনায় তাতে ঘৃতাহুতি পড়ে। সিপিএমের বর্ধমানের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “গোটা ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং নজিরবিহীন। উর্দি পরে পুলিশ এই কাজ করতে পারে না।” কংগ্রেসের বর্ধমান জেলা সভাপতি সুদেব রায়ও বলেন, “কোনও উর্দিধারী পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যই এই রকম নিয়মবিরুদ্ধ কাজ করতে পারেন না।” |
উর্দি পরেই বুকে ব্যাজ সেঁটে প্রতিবাদ পুলিশের। —নিজস্ব চিত্র। |
আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দের বক্তব্য, “উর্দি পরিহিত পুলিশ এই কাজ করতে পারে কি পারে না, তা এখনই বলছি না। তবে কারা কী ভাবে এটা করল, তা দেখা হচ্ছে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।” বেহালায় এক অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও বলেন, “বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।”
এ দিনের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া পুলিশকর্মীরা অবশ্য ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’র কথা অস্বীকার করছেন। এঁদের এক জন, স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের এএসআই প্রীতিমুকুল রায়ের দাবি, “আমরা সাধারণ মানুষের মতোই ব্যাজ পড়ে প্রতিবাদ করেছি। রাজনীতি করার জন্য নয়।” বাজে যাঁর নাম রয়েছে, সেই এসআই তথা পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক বিজিতাশ্ব রাউতের প্রশ্ন, “পুলিশের নিয়মে কোথাও কি বলা আছে যে আমরা প্রতিবাদ করতে পারব না?”
প্রাক্তন পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় কিন্তু পরিষ্কার জানাচ্ছেন, পুলিশের চাকরিতে এই আচরণ নিয়মবিরুদ্ধ। আসানসোল আদালতের আইনজীবী শেখর কুণ্ডুর ব্যাখ্যা, “গণতান্ত্রিক মতামত প্রয়োগের অধিকার পুলিশদেরও আছে। কিন্তু উর্দি পরে নয়। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আইনে পরিষ্কার বলা রয়েছে, উর্দি পরিহিত অবস্থায় কোনও ভাবেই রাজনৈতিক কর্মসূচি বা ব্যাজ পড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করা যাবে না।”
সন্ধিবাবু বলেন, “আমরা আগের সরকারের আমলেও দেখে এসেছি, একেবারে ইউনিয়ন করে নানা ধরনের কর্মসূচি নিতেন পুলিশকর্মীরা। এতে সরকারেরই ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের ধারণা হয়, পুলিশ নিরপেক্ষ নয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই পুলিশমন্ত্রী। যে গুটিকয় পুলিশকর্মী এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” |