তারাবাজি
রিউমার আমার জীবনের সঙ্গী

শুভ নববর্ষ।
শুভ নববর্ষ আপনাকে। সব পাঠকদের। নতুন বছর সবার ভাল কাটুক।

গয়নার বাক্স’ তো ভাল চলছে। নিশ্চয়ই অনেক নিশ্চিন্ত এখন আপনি?
ইয়েস আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি। চারদিকে যা ট্রেন্ড তাতে মনে হচ্ছে মানুষের ভাল লেগেছে ফিল্মটা। আমি নিজে অডিয়েন্সের সঙ্গে বসে ছবিটি দেখেছি। তাদের রিঅ্যাকশন দেখে আমি খুব খুশি।

এ রকম প্রিমিয়ারও তো কলকাতা আগে দেখেনি...
তার পুরো ক্রেডিট কিন্তু ভেঙ্কটেশের। ওরা বিশ্বাস করেছিল এই ছবিটায়। তার পরে পাবলিসিটি প্রোমোশনও দারুণ হয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ শুনছি শেষের ছাব্বিশ মিনিট আপনি এডিট করে দিয়েছেন ছবি থেকে? সেটা করতে গেলেন কেন?
বলছি। ‘গয়নার বাক্স’ ছবিতে অনেক স্তর আছে। সাধারণ মানুষ এক রকম ভাবে ছবিটিকে দেখছে, ডিসার্নিং এবং ক্রিটিকাল অডিয়েন্স অন্য চোখে দেখছে। অনেকগুলো লেভেলে অ্যাপিল করেছে ছবিটা দর্শককে।
কিন্তু এটাও ঠিক ‘গয়নার বাক্স’ এমন সব জায়গায় রিলিজ হয়েছে যেখানে মানুষের রুচি কমার্শিয়াল ছবির সেনসিবিলিটির সঙ্গে মেলে বেশি।
তাঁদের কাছে, ‘গয়নার বাক্স’ যে একটা জার্নির মেটাফর, সেটা অ্যাপিল না-ও করতে পারে।
তাঁদের কথা মাথায় রেখেই আমরা শেষ কিছুটা এডিট করে দিচ্ছি। সেই দর্শকদের কাছে পিসিমার কী হল এটাই সিনেমার এন্ডিং। তাই জন্যই এটা করা।

কিন্তু আপনি তো অপর্ণা সেন। অনেকেই বলছে অপর্ণা সেন যদি এত সহজে নিজের ছবি এডিট করে দেন, সেটা কি এক প্রকার কম্প্রোমাইজ নয়?
না, একেবারেই কম্প্রোমাইজ নয়। অপর্ণা সেনের যে অডিয়েন্স, তাঁরা পুরো ছবিটাই দেখতে পাবেন। দেখুন আমি ছবিটাতো চেঞ্জ করছি না। শুধুমাত্র শহরতলীর কয়েকটা হলে এন্ডটা একটু আগে হচ্ছে। ওই মুক্তিযোদ্ধার অংশটা বাদ দিয়ে।
আর তা ছাড়া ডিভিডি-তে, কী শহরের বাকি হলে তো পুরো ফিল্মটাই থাকছে। এইটুকু কনসিডার করতে আমার অন্তত কোনও আপত্তি নেই।


ছবিটি তো অনেক দিন আগেই করার কথা ছিল আপনার।
হ্যাঁ, সেই ‘পারমিতার একদিন’-এর পরেই আমি ‘গয়নার বাক্স’ করতে চেয়েছিলাম।
‘পারমিতার একদিন’ মুক্তি পেয়েছিল ২০০০ সালে। এটা তো ২০১৩।
হ্যাঁ, কখনও লোকেশন পছন্দ হয়নি। কখনও রিসেশনের জন্য ছবি শুরু করা যায়নি। কিন্তু দিস ইজ ওয়ান ফিল্ম আই ওয়ান্টেড টু মেক। আই স্টিল রিমেমবার, যে বছর ‘পারমিতার একদিন’ রিলিজ করেছিল আমি ঠিক করেছিলাম বছরটা শেষ হওয়ার আগে আমি ‘গয়নার বাক্স’ শুরু করবই।
কিন্তু যখন দেখলাম যে সেটা সম্ভব হচ্ছে না, সেই বছরের ৩০ ডিসেম্বর আই স্টার্টেড ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’। সেটা শেষ করে ভাবলাম এ বার ‘গয়নার বাক্স’ করব, কিন্তু তাও হল না। তখন ‘ফিফটিন পার্ক অ্যাভেনিউ’ বানালাম। এক এক করে ‘জাপানিজ ওয়াইফ’, ‘ইতি মৃণালিনী’ শু্যট করলাম। এই ‘ইতি মৃণালিনী’ বানানোর সময় আমার ভেঙ্কটেশের সঙ্গে ‘গয়নার বাক্স’ নিয়ে প্রথম কথা হয়। ওরা জানত, দিস ওয়াজ মাই ড্রিম ফিল্ম।


এতটা ডেসপারেট হওয়ার কারণ?
দেখুন ‘গয়নার বাক্স’ ইজ আ ফ্যানটাসটিক স্টোরি। লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের সঙ্গে ভীষণ মিল আছে। লাতিন আমেরিকার সাহিত্যে একটা ককটেল থাকে না প্রেম, ভালবাসা, ম্যাজিক রিয়ালিজম, পোয়েট্রি, প্যাশন এই সব এলিমেন্ট আছে ‘গয়নার বাক্স’তে। আমি শীর্ষেন্দুদাকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম কী করে এত ইনফ্লুয়েন্স হল এই গল্পটায় লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের? উনি বলেছিলেন যে, মার্কেজ উনি পড়েছেন তবে একটা মাত্র বই। যাই হোক, গল্পটা আমার ফ্যাসিনেটিং লেগেছিল। আমি তো বাইলিঙ্গুয়ালও করতে চেয়েছিলাম ‘গয়নার বাক্স’। আমার ধারণা এই সাবজেক্টটা হিন্দিতে বানালেও খুব ভাল চলবে। আর দেরি হয়ে ভালই হয়েছে।

কেন?
তার কারণ আগে ডিজিটাল মিডিয়াটা এত স্ট্রং ছিল না। এই ছবিতে অনেকটা জুড়ে কম্পিউটার গ্রাফিক্স আছে। নতুন সব টেকনোলজি এসে যাওয়ার পরে গ্রাফিক্সের এত সুবিধা, আগে বানালে পেতাম না আমি। আর গ্রাফিক্সের কাজটাও ভীষণ ভাল হয়েছে।

‘গয়নার বাক্স’ বানানোর সময় সব সময়ই কি মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় আপনার ফার্স্ট চয়েজ ছিলেন?
এক সময় ভেবেছিলাম শর্মিলা আর সোহাকে নিয়ে করব। অনেকে আবার আমাকে বলেছেন, আমি নিজে কেন করলাম না চরিত্রটা। কিন্তু কী জানেন, আমার আর রিঙ্কুর (শর্মিলা ঠাকুর) মধ্যে একটা আরবান সফিসটিকেশন রয়েছে। গ্রাম্য চরিত্র প্লে করাটা হিনড্রেন্স হতে পারত।

ওই আরবান সফিসটিকেশনটা মৌসুমীর মধ্যে কম।
হ্যাঁ। আর মৌসুমীকে চুজ করেছি তার আর একটা কারণ ওর ভাইভাসিটি। একটা উচ্ছ্বাস আছে ওর মধ্যে যেটা খুব এনডিয়ারিং। একটা মিসচিভিয়াস এলিমেন্ট আছে। শি ইজ আ ভেরি ট্রান্সপারেন্ট পারসন।

কিন্তু আপনি ছাড়া অন্য কেউ ওঁকে কাজ দেন না কেন?
কোথায় কাজ দেয় না! সেটা ঠিক নয়।

কোথায় দেয়? সেই ‘জাপানিজ ওয়াইফ’-য়েও আপনি রোল দেন, ‘গয়নার বাক্স’তেও আপনি।
মাঝখানে তো দীপা মেটার সঙ্গে একটা কাজ করল। কী বলুন তো! ও নিজেই অ্যাডমিট করে যে ও এখন লেজি হয়ে গিয়েছে। খুব একটা কাজ ও নিজেই করতে চায় না। তার ওপর ওর একটা কুকুর আছে, হু ইজ নট ওয়েল। তার দেখভাল নিয়েও ব্যস্ত থাকে।

আচ্ছা অনেকেই কিন্তু শ্রাবন্তী নিয়ে প্রশ্ন করছে।
কী প্রশ্ন করছে?

অনেকেরই জিজ্ঞাসা ট্রেলারে কেন দেখা গেল না শ্রাবন্তীকে?
দেখুন, ওটা প্রযোজকদের ব্যাপার। ট্রেলরটা ভেঙ্কটেশ বানিয়েছিল।

শোনা যাচ্ছে আপনি যে ভাবে কাজ করেন, শ্রাবন্তী সেই পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানাতে পারেনি বলেই আপনি ওঁকে নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন।
না না একদমই না। শ্রাবন্তী বেচারি ভীষণ ব্যস্ত ছিল অন্য অনেক শু্যটিং নিয়ে। তখন ওর নানা রকম ছবির কাজ চলছে। ও কিন্তু ওয়ার্কশপ করেছিল খুব মন দিয়ে। এক দিন দেরি করে এসেছিল অবশ্য, তার জন্য বকুনিও দিয়েছিলাম। পরে অবশ্য আদর-টাদর করে দিয়েছি। কিন্তু কোনও ঝামেলা হয়নি। ঝামেলা হতে যাবে কেন?

‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ অসম্ভব সাফল্য পেয়েছিল গত বছর। কখনও ভেবেছিলেন ভূত নিয়ে ছবি করাটা এই মুহূর্তে রিস্কি হতে পারে?
কেন?

অনেকে তো বলতে পারে, ভূতের ছবি ভাল চলছে বলেই অপর্ণা সেন ‘গয়নার বাক্স’ বানালেন? আপনার ছবিকে ‘ভূতের ভবিষ্যত’-এর সঙ্গে তুলনাও করা হতে পারে?
লাইক আই সেড, ‘গয়নার বাক্স’ আমি ভেবেছিলাম সেই ২০০০ সালে। তখন কোথায় ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’।

‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবিটা তো দেখেছিলেন?
হ্যাঁ। আই লাইকড দ্য ফিল্ম।
লাইক ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’, ‘গয়নার বাক্স’ও কিন্তু খুব এন্টারটেইনিং একটি ফিল্ম। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়।
অনেক লেয়ারস আছে ছবিটায়। বেশ কিছু সিরিয়াস ইস্যুকে অ্যাড্রেস করে ছবিটা। যেমন মহিলাদের অর্থনৈতিক অবস্থা। মেয়েদের সেক্সুয়াল চয়েস। আপাত দৃষ্টিতে হয়তো ‘গয়নার বাক্স’ ভীষণ হালকা লাগতে পারে কিন্তু ইটস আ ভেরি সিরিয়াস ফিল্ম। আমি মনে করি, ‘পরমা’ আর ‘পারমিতার একদিন’-এর পর ‘গয়নার বাক্স’ই আমার সব চেয়ে ফেমিনিস্ট ফিল্ম।


এটা তো স্ট্রং স্টেটমেন্ট।
ইয়েস। সত্যি তাই।

আচ্ছা, অপর্ণা সেন অভিনয়ে ফিরবেন না? নাকি শুধুই পরিচালনা করবেন?
সৃজিত তো আমাকে একটা ছবিতে অভিনয় করতে বলেছে। দেখি...

কী ছবি? ‘ডাজন’?
না। ‘চতুষ্কোণ’ বলে একটা ছবি।

আপনি উত্তর না-ই দিতে পারেন, কিন্তু কঙ্কনার বিয়ে নিয়ে নানা রকম স্টোরি আমরা প্রায় দেখি মিডিয়াতে। আপনি কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করেন?
দেখুন, সারা জীবন তো রিউমারের সঙ্গেই কাটালাম আমি। আই হ্যাভ লিভড উইথ রিউমারস অল মাই লাইফ। এখন কঙ্কনার তাই হচ্ছে। আমি ও সব নিয়ে মাথা ঘামাই না একেবারে।
আমি আমার মেয়েদের সব সময় নিজের জীবন লিড করার ফ্রিডম দিয়েছি। আই রেসপেক্ট দেয়ার ইনডিভিজুয়ালিটি। ওরা নিজেদের জীবন নিয়ে কী করবে সেটা ওদের ব্যাপার। আর কী জানেন...


কী?
(হেসে) সব রিউমার আমার কাছে সবার শেষে এসে পৌঁছায়। তাই আমি অত ভাবি না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.