জেলবন্দি সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে দেখা করলেন আত্মীয়েরা
শিলিগুড়ি সংশোধনাগারের সামনে দাঁড়িয়ে অন্তত ২০০ জন। ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ পাহারা বসিয়ে তাঁদের আটকে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে বন্দিদের নাম। আর একসঙ্গে ২০ থেকে ২৫ জন ছুটে যাচ্ছে জেলের মূল ফটকের ডানপাশে থাকা ছোট্ট ঘরটিতে। জেলরক্ষীরা কাউকে আটকানোর চেষ্টা করছে না। কারও পরিচয়পত্র দেখা বা নামও জিজ্ঞেস করা হচ্ছে না। ভিড়ে ঠাসা ছোট্ট ঘরটির লোহার তারের জালেরর অন্যপাশে পাঁচ জন বন্দি এসে দাঁড়াচ্ছেন। চিৎকার, চেঁচামেচিতে কেউ শুনতে পারছেন না কারও কথা। অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় ভাল করে মুখও দেখা যাচ্ছে না।
এ ভাবেই সোমবার নতুন বছরের প্রথম দিনে জেলবন্দি সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে দেখা করলেন আত্মীয়েরা। অভিযোগ উঠেছে, এর জেরে এদিন জেলের সামনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অনেকে ভাল করে জেলে বন্দি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি। সংশোধনাগারের সুপার থুপদেন ভুটিয়া বলেন, ‘‘নতুন বছরের জন্য ভিড় বেশি হয়েছিল। পরিস্থিতি বুঝে মাইকের ব্যবস্থা করা হয়। একটু বেশি জনকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমস্ত নিয়ম মেনে কাজ হয়েছে।”
এ দিন সকাল থেকে জেলবন্দি ৪৩ জন সিপিএম কর্মীর পরিবারের সদস্যরা হাজির হতে শুরু করেন জেলের সামনে। জেলা সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, জীবেশ সরকার, নুরুল ইসলাম, শঙ্কর ঘোষরাও সেখানে যান। অনেকেই বিস্কুট, পুজোর প্রসাদ নিয়ে পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে যান।
প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করতে শিলিগুড়ি বিশেষ
সংশোধনাগারের সামনে ভিড়। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ির সিটু নেতা অজয় চক্রবর্তীও জেলে। তাঁর স্ত্রী মুন্না দেবী ও মেয়ে সকাল থেকে জেল গেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। চোখের জল মুছতে মুছতে মুন্নাদেবী বলেন, “মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে একা রয়েছি। খুব অসুবিধায় পড়েছি।” ভিড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীপায়ন রায়ের স্ত্রী পাপড়ি দেবী। তিনি বলেন, “ছোট ছেলেটা শুধু শুধু বাবা বাবা করছে। কী করব বুঝতে পারছি না।’’ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কাউন্সিলর জয় চক্রবর্তীর স্ত্রী দীপা দেবী এবং দিদি মিতা সমাদ্দার।
কাউন্সিলর শালিনী ডালমিয়া, রাগিণী সিংহ বলেন, “খুব ছোট্ট জায়গা। এত মানুষ একসঙ্গে যাওয়ার ফলে কারও সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। অন্ধকারে তো কারও মুখই ভাল করে দেখা গেল না।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু বলেন, “আমার খুব খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে আমি যদি নিজেই ভিতরে থাকতে পারতাম ভাল হত।”
জেল সূত্রের খবর, এদিন বেলা ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান আত্মীয়রা। সংশোধনাগারের সুপার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সমস্ত দিকে নজরদারি করেছেন। এদিন জেলে বন্দিদের মধ্যে মিষ্টি বিলি করা হয়। দুপুরের মেনুতে মাংস ও চিংড়ি থাকার কথা থাকলেও বিতর্কে এড়ানোর জন্য তা বাতিল করে দেন জেল কর্তৃপক্ষ।
এ দিন সংশোধনাগারে যান অমিত দে’র মামা বিকাশ রায়। শুক্রবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অমিতের মায়ের মৃত্যু হয়। বিকাশবাবু বলেন, “হয়ত অমিত রাজনীতি না করলে ওঁর মা মারা যেত না। মানুষের মৃত্যু হয়, কিন্তু এভাবে মৃত্যু আমরা কোনওমতেই মেনে নিতে পারছি না। কয়েকদিন আগেও ভাল ছিল। যেদিন অমিত গ্রেফতার হল, তার পর থেকে বোন কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়ায় করত না। সারাদিন শুধু চিন্তা করত। অমিত জেল থেকে বার হলে বলব আর রাজনীতির দরকার নেই।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.