এক মন্ত্রীর হাত ধরেই ইন্দ্রজিতের রমরমা, ওঠাবসা লালবাজারেও
লাল বাতির গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর বাবুয়ানি তিনি তো করতেনই। কিন্তু কীসের জোরে কেউকেটা সেজে ঘুরতেন কোটি কোটি টাকা জালিয়াতিতে অভিযুক্ত ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়?
এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে গোয়েন্দারা জেনেছেন, রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং লালবাজারের একাধিক বর্তমান ও প্রাক্তন পুলিশকর্তার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের ওঠাবসা ছিল। গোয়েন্দাদের দাবি, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ইন্দ্রজিৎ ঘনঘন মহাকরণে গিয়ে ওই মন্ত্রীর ঘরে অনেকটা সময় কাটাতেন। শাসক দলের একটি প্রভাবশালী মহলের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। এই ধরনের যোগাযোগের সূত্রেই ইন্দ্রজিৎ লাল বাতির গাড়ি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারতেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশ-প্রশাসনের উঁচু মহলের সঙ্গে ওই যোগাযোগটাই ছিল ইন্দ্রজিতের তুরুপের তাস। শীর্ষস্থানীয় কিছু কর্তার সঙ্গে ওই ঘনিষ্ঠতা ভাঙিয়েই তাঁর পক্ষে পশ্চিমবঙ্গ পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের কর্তাদের একাংশ এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ও অফিসারদের প্রভাবিত করা সহজ হয়েছিল। ইন্দ্রজিতের শাগরেদরা ইউকো ব্যাঙ্কের লোক সেজে নিগমে বারবার গিয়ে বুঝিয়ে এসেছিলেন, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ১২০ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট সরিয়ে তাঁদের ব্যাঙ্কে রাখলে অনেক বেশি সুদ মিলবে।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “লাল বাতির গাড়ি চড়া ইন্দ্রজিৎকে সকলেই হোমরাচোমরা কেউ বলে জানত। কিন্তু সে যে ঠিক কে বা কী, সেটা কেউ জানত না।”
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এসইউভি, সেডান মিলিয়ে ইন্দ্রজিতের ৭-৮টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। যখন যেটা ব্যবহার করতেন, তারই মাথায় বসিয়ে নিতেন লাল বাতি। ওই গাড়িগুলি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে।
কিন্তু গাড়িতে বেআইনি লাল বাতি বসিয়েও ইন্দ্রজিৎ পার পেয়ে গেলেন কী ভাবে?
লালবাজারের এক শীষকর্তার বক্তব্য, পুলিশ-প্রশাসন এবং শাসক দলের একাংশের সঙ্গে ওঠাবসাটা এ ক্ষেত্রে কাজে লেগেছিল। ওই কর্তা বলেন, “নিগমের কর্তাদের একাংশও এই তছরুপে জড়িত। ইন্দ্রজিৎকে জেরা করে আমরা কয়েকটি নাম পেয়েছি। সেগুলি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। বখরা বাবদ ওই নিগমকর্তারাও কয়েক কোটি টাকা পেয়েছিলেন।”
পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের তছরুপ ধরা পড়ে মার্চে। শুধু ওই ঘটনায় নয়, জানুয়ারিতে স্টেট মার্কেটিং বোর্ডের ১৭ কোটি টাকা এবং তার পরে প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ কোটি টাকা তছরুপেও ইন্দ্রজিৎ অভিযুক্ত। গোয়েন্দারা জানান, দু’টি তছরুপেই ইন্দ্রজিতের প্রধান সহযোগী ছিলেন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ভূপেন বোস অ্যাভিনিউ শাখার এক অফিসার। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে আগেই।
১৪২ কোটি টাকা দিয়ে কী করলেন ইন্দ্রজিৎ?
কলকাতা পুলিশের এক অফিসার বলেন, “ইন্দ্রজিৎ ওই সরকারি টাকার কতটা ভোগবিলাসে উড়িয়েছে, কতটা দিয়ে সম্পত্তি গাড়ি-বাড়ি-জমিজমা কিংবা শেয়ার কিনেছে আর কত টাকাই বা এখনও ব্যাঙ্কে জমা রয়েছে, আমরা তারই খোঁজ চালাচ্ছি।”
এক বছর আগেও ইন্দ্রজিৎকে মাঝেমধ্যে ধার করতে হত বলে গোয়েন্দারা জানান। কিন্তু তছরুপের পরেই তার জীবনযাপনের ধারা বদলে যায়। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “তছরুপের পরে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে প্রতি মাসে ইন্দ্রজিতের খরচ ছিল দু’কোটিরও বেশি টাকা। সেলিব্রিটিদের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করার শখ মেটানোর জন্যও দেদার খরচ করত সে। কসবার বোসপুকুরের যে-ফ্ল্যাটে তাকে গ্রেফতার করা হয়, তার দাম কোটি টাকার কম নয়। এর মধ্যে সে বিদেশেও গিয়েছে বেশ কয়েক বার।”
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮-এর জুনে জালিয়াতি করে ব্যাঙ্ক থেকে সাড়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ধৃত ইন্দ্রজিৎ এবং তাঁর স্ত্রী রসিকা চট্টোপাধ্যায় মাস ছয়েক পরে জামিন পান। তার পরে বছর তিনেক জমি-বাড়ির দালালি করেই দিন গুজরান করছিলেন ইন্দ্রজিৎ। ২০১১-র পর থেকে সরকারি টাকা এক ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্যাঙ্কে সরানোর নামে তছরুপের খেলায় নামেন ইন্দ্রজিৎ।
কিন্তু এই জালিয়াতির মতলব হঠাৎ ইন্দ্রজিতের মাথায় এল কেন?
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, বছর ষোলো আগে ইন্দ্রজিৎ একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। সিবিআই সেই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটও দিয়েছে। ওই অফিসারের কথায়, “শেষমেশ ১৬ বছর আগের সেই জালিয়াতির কায়দাতেই ফিরে গেল ইন্দ্রজিৎ। এ বার হাতিয়ে নিল ১০০ গুণ টাকা।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.