স্বীকৃত সরকারি ল্যাবরেটরি একটিই। সেখানেই ওষুধের মান পরীক্ষার পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে পুলিশের আটক করা বিভিন্ন রকম মাদক দ্রব্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। কলকাতার কনভেন্ট রোডের সেই রাজ্য ড্রাগ ল্যাবরেটরিতে গত পাঁচ মাস ধরে পরিকাঠামোর অভাবে হেরোইন, হাসিস, কোকেন, গাঁজার মতো মাদকের পরীক্ষা বন্ধ। পরীক্ষার রিপোর্ট না মেলায় বিভিন্ন জেলায় নারকোটিক্স-সংক্রান্ত অসংখ্য মামলার আটকে গিয়েছে। পুলিশ মামলার চার্জশিট দিতে পারছে না, অভিযুক্তেরা প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
দিন কয়েক আগেই এ ব্যাপারে অসন্তোষ জানিয়ে স্বাস্থ্যঅধিকর্তা ও ড্রাগ ল্যাবরেটরির অধিকর্তার কাছে কড়া চিঠি পাঠিয়েছেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। চিঠির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে হুমায়ুনবাবু জানান, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুর্শিদাবাদ এলাকায় সবচেয়ে বেশি হেরোইন, চরস, কোকেন ধরা পড়ে। নিয়মানুযায়ী সেগুলির নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতার ড্রাগ ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে হয়। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয় যে সেটা ঠিক কোন ধরনের মাদক। তার ভিত্তিতে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে। হুমায়ুন কবীরের কথায়, “গত নভেম্বর মাসের পর থেকে আমরা কলকাতায় যত মাদক দ্রব্যের নমুনা পাঠিয়েছি তার কোনওটার পরীক্ষা রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। এর জন্য আমাদের ৩০টি কেস আটকে গিয়েছে। এত কষ্ট করে পুলিশ যাদের ধরেছে তাদের প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এর সমাধান চেয়ে আমি স্বাস্থ্যদফতরে চিঠি দিয়েছি।”
চিঠির কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। মাদক পরীক্ষা বন্ধ থাকার বিষয়টিও মেনেছেন। তাঁদের যুক্তি, “বেশ কয়েক বছর যাবত্ ড্রাগ ল্যাবরেটরিতে লোক নিয়োগ হচ্ছে না। কর্মীর অভাবে ল্যাবরেটরি ধুঁকছে। নভেম্বরে ল্যাবরেটরির নার্কোটিক্স শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র অফিসার অবসর নেন। সম্প্রতি সেখানে একজন লোক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ বুঝতে তাঁর সময় লাগছে। ফলে কোনও জেলা থেকে পাঠানো কোনও মাদক পরীক্ষা হচ্ছে না।”
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অবশ্য জানিয়েছেন, মাদকপরীক্ষা বন্ধের কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর্তারা তাঁকে লোকাভাবের কথা বলেননি, বরঞ্চ মাদকের ‘রেফারেন্স স্ট্যান্ডার্ড’-এর অভাবের কথা বলেছেন।
এই রেফারেন্স স্ট্যান্ডার্ট জিনিসটি কী?
ড্রাগ ল্যাবরেটরির কর্তাদের বক্তব্য, এটি মাদক পরীক্ষার আদর্শ নমুনা। যার সঙ্গে পুলিশের পাঠানো মাদকের নমুনা মিলিয়ে বোঝা যায় যে মাদক দ্রব্যটি ঠিক কী ধরনের। ড্রাগ ল্যাবরেটরির অধিকর্তা সত্যব্রত রায়ের জানিয়েছেন, রেফারেন্স স্ট্যান্ডার্ড পাওয়ার সমস্যা চিরকালের। কিন্তু এই ভাবে কতদিন পুলিশের কেসগুলি অপেক্ষা করে থাকবে। পুলিশ যেখানে চার্জশিট দিতে পারছে না, অভিযুক্তেরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন, আর কোনও বিকল্প ল্যাবরেটরিও নেই। তা হলে স্বাস্থ্যদফতর এবং ড্রাগ ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষের কি কোনও দায়িত্ব বর্তায় না?
সত্যব্রতবাবু এর উত্তরে জানান, তাঁরা নিরুপায়। তাঁর কথায়, “পার্ক সার্কাসে কেন্দ্রীয় সরকারের একটা ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি আছে। ওদেরও রেফারেন্স স্ট্যান্ডার্ডের অভাব রয়েছে। কিন্তু তাদের একটা অত্যাধুনিক যন্ত্র রয়েছে। যাতে রেফারেন্স স্ট্যান্ডার্ড ছাড়াও মাদক পরীক্ষার কাজ করা যায়। ফলে তারা অসুবিধায় পড়ছে না। কিন্তু রাজ্যের হাতে সেইরকম কোনও যন্ত্রও নেই। বার বার স্বাস্থ্যদফতরে চিঠি লিখে ৪০ লক্ষ টাকার ওই যন্ত্র কেনার অনুরোধ জানানো হয়েছে। জবাব মেলেনি।” |