কুকথার ধারা ফিরিয়ে ফের বিতর্কে কল্যাণ
ফের কুকথার স্রোত বইতে শুরু করল রাজ্য রাজনীতিতে। সৌজন্যে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কল্যাণবাবু রবিবার সিপিএম এবং এসএফআইকে হুমকি দিয়েছিলেন। সোমবার তিনি কটূক্তি করলেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানকে। শ্রীরামপুর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি পুরনো ট্যাঙ্ক সংস্কারের অনুষ্ঠানে গিয়ে এ দিন কল্যাণবাবু মান্নানের উদ্দেশে বলেন, “প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ভাল। আপনি কংগ্রেসকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছেন। আপনি প্রিয়দা’র সঙ্গে (প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি) রাজনীতি করেছেন। এখন দীপাদেবীর পিছনে ঘুরবেন না!” কল্যাণবাবুর চ্যালেঞ্জ, “ক্ষমতা থাকলে মান্নান সাহেব লোকসভা ভোটে আমার বিরুদ্ধে লড়ে জিতুন!”
দিল্লি-কাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবার কোন্নগরে কল্যাণবাবু এসএফআই নেতাদের প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, “মমতার উপরে আর এক বারও আক্রমণ হলে ওদের হাত ভেঙে দেব। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রকে ন্যাড়া করে দেব!” কংগ্রেসের মান্নান এ দিন সকালে কল্যাণবাবুর ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে বলেন, “উনি শ্রীরামপুরের কলঙ্ক! কোনও জায়গায় উনি এক বারের বেশি জিততে পারেন না। বিধানসভা ভোটে সেটা প্রমাণিত। আগামী লোকসভা ভোটে আবার দাঁড়ালে আবার তা টের পাবেন। উনি হতাশা থেকে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে ওই সব বলছেন।” মান্নানের ওই প্রতিবাদের জবাবেই তাঁকে কটূক্তি করেন কল্যাণবাবু।
বস্তুত, কুকথায় কল্যাণবাবুর রেকর্ড যথেষ্ট ধারাবাহিক! তার উপরে দিল্লি-কাণ্ডের জেরে এখন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত। রাজ্য জুড়ে সিপিএম তথা বামেদের একের পর এক দলীয় কার্যালয় ভাঙার অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাদ যাচ্ছে না কংগ্রেস বা অন্য ছোট বামপন্থী দলগুলির কার্যালয়ও। এমনিতেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের কুকথার জেরে যথেষ্ট বিব্রত হতে হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। এই অবস্থায় ফের কটূক্তি করে কল্যাণবাবু পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুলছেন বলে তৃণমূলেরই একাংশের অভিমত। এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বলেন, “কল্যাণ কী বলেছেন, খোঁজ নিয়ে দেখব।” তবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের মত, অহেতুক এই ধরনের মন্তব্য করে বিতর্ক না বাড়ানোই বাঞ্ছনীয়। দলেরই এক প্রথম সারির নেতার কটাক্ষ, “দিল্লি-কাণ্ড নিয়ে দিল্লিতে উনি মুখ খোলার সুযোগ পাননি। এখন দলনেত্রীর কাছে নম্বর বাড়াতে এ সব বলছেন!”
মান্নানকে বিঁধে এ দিন তৃণমূলের আইনজীবী-সাংসদ আরও বলেছেন, “আপনি ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। আপনার উন্নত চেতনাবোধ কামনা করি! তৃণমূলের সহযোগিতায় রাজ্যসভায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল আপনার। সেটা হয়নি। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আমাদের উপরে আপনার রাগ!” কল্যাণবাবুর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মান্নানের বক্তব্য, “হুগলি জেলায় জন্মেছি। এই জেলার সংস্কৃতি ও কৃষ্টি সবই জানি। কিন্তু যে ভাষায় কথা বলা হচ্ছে, তা শ্রীরামপুর তথা হুগলির লজ্জা! পরিযায়ী পাখিরা আসে ও চলে যায়। তাদের বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করা ঠিক নয়। যিনি ওই মন্তব্য করেছেন, তাঁর হুগলি জেলার ইতিহাস ভাল করে পড়া দরকার।”
মান্নানের সংযোজন, “যিনি নিজের রাজনৈতিক জীবনে কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া জিততে পারেননি, তাঁর মুখে কংগ্রেসের সমালোচনা শোভা পায় না। এটা অকৃতজ্ঞতার লক্ষণ! আর মহিলাদের সর্ম্পকে করা কুরুচিকর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে আমি ঘৃণা বোধ করি।” হাওড়া স্টেশনে নতুন ট্রেন চালু করতে গিয়ে এ দিন রেল প্রতিমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও কল্যাণবাবুর মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, “পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়! এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।”
কল্যাণবাবুর আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি বামেরাও। তিনি বলেন, “নতুন বছরে বুদ্ধদেববাবু, ঋতব্রতরা ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। কিন্তু লক্ষণরেখা পেরোবেন না! ধ্বংসের রাজনীতি করবেন না। আমাদেরও সহ্যের সীমা আছে!” কল্যাণবাবুর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “উনি এ ধরনের কথা আগেও বলেছেন। লাগাতার বলেই চলেছেন। তবে মানুষ আর এ সব কথা নিচ্ছেন না। আগামী দিনে তা উনি বুঝতে পারবেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.