সর্বোচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই আত্মসমর্পণ করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন সঞ্জয় দত্ত। সেই নির্দিষ্ট একটি মাস পূর্ণ হওয়ার তিন দিন আগে আরও ছ’মাস সময় চেয়ে ফের আদালতেরই দ্বারস্থ হলেন তিনি।
মুম্বই বিস্ফোরণ মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট মুন্নাভাইকে বেআইনি অস্ত্র রাখা ও সাক্ষ্য লোপাটের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। দেড় বছর জেল খাটা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে সঞ্জয়ের। বাকি সাড়ে তিন বছরের মেয়াদ পূরণ করতে ফের জেলে ঢুকতে হবে তাঁকে। শুভানুধ্যায়ীরা অনেকে সঞ্জয়কে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি যেন রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানান। সঞ্জয় রাজি হননি। বরং নায়কোচিত ভাবে বলেছিলেন, “কোর্ট যে সময়সীমা দিয়েছে, তার মধ্যেই আত্মসমর্পণ করব।” সঞ্জয়ের হয়ে বরং ক্ষমাভিক্ষার আর্জি রাজ্যপালের কাছে জমা দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজু।
কিন্তু এক মাসের সময়সীমা ফুরনোর ঠিক তিন দিন আগে আজ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলেন সঞ্জয় ধরা দেওয়ার জন্য তাঁকে আরও ছ’মাস সময় দেওয়া হোক। কারণ, জেলে যাওয়ার আগে অসমাপ্ত ছবিগুলোর কাজ শেষ করতে চান তিনি। ওই সব ফিল্মের পিছনে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কাজ শেষ না হলে প্রযোজকদের বড়সড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আর সে সব কাজ শেষ করতে অন্তত ১৯৬ দিন সময় লাগবে বলে আদালতকে জানিয়েছেন তিনি। সাজা শোনার দিনই সন্ধেয় সঞ্জয় নিজে অঙ্গীকার করেছিলেন, তাঁর হাতে থাকা ছবিগুলোর কাজ শেষ করবেন তিনি। “কাউকে ফেরাব না,” বলেছিলেন। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে দেওয়া এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্যই আদালতের কাছে নতুন করে সময় চেয়েছেন তিনি।
১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণের সময় সন্ত্রাসবাদীদের দেওয়া বেআইনি অস্ত্র বাড়িতে রাখার অপরাধে গত ২১ মার্চ আদালত সঞ্জয়ের কারাদণ্ড বহাল রাখে। এর আগে টাডা কোর্ট তাঁকে ছ’বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেটা কমিয়ে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছে। সঞ্জয় যেহেতু আগেই ১৮ মাস সাজা ভোগ করে ফেলেছেন, তাই তাঁকে আর সাড়ে তিন বছর জেলে থাকতে হবে। আত্মসমর্পণ করার জন্য ৪ সপ্তাহ দেওয়া হয়েছিল সঞ্জয়কে। ইতিমধ্যে মুন্নাভাইকে যাতে জেলে যেতে না হয়, তার জন্য অনেকেই জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। সেই তালিকায় ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে দিগ্বিজয় সিংহ, রাজ ঠাকরে। জয়া বচ্চন থেকে শত্রুঘ্ন সিন্হা। রজনীকান্ত, অজয় দেবগন, কর্ণ জোহররা জানিয়েছিলেন, সঞ্জয়ের সাজায় তাঁরা বিচলিত।
২৮ মার্চ বান্দ্রায় নিজের বাড়ির নীচে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুন্নাভাই। বলেন, “সংবাদমাধ্যমকে, দেশের মানুষকে আমি হাত জোড় করে বলছি, ক্ষমাভিক্ষার আর্জি আমি জানাব না। ক্ষমার যোগ্য অনেকে রয়েছেন।” সঞ্জয় আশ্বাস দিয়েছিলেন, ১৮ এপ্রিল জেলে যাওয়ার আগে শেষ করে ফেলবেন ‘পুলিশগিরি’ এবং ‘জঞ্জির’ ছবির কাজ। কর্ণ জোহরের ‘উংলি’ এবং রাজকুমার হিরানির ‘পিকে’ ছবির কাজও এগিয়ে রাখবেন কিছুটা। তখন প্রযোজকরাও সম্মতি জানিয়েছিলেন তাঁর সিদ্ধান্তে। এখন সঞ্জয় বলছেন, হাতে থাকা সব কাজই শেষ করে যেতে চান তিনি।
ইতিমধ্যে মুম্বই বিস্ফোরণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আরও তিন আসামি জবিউন্নিসা, ঈশাক মহম্মদ হাজওয়ানে এবং শরিফ আব্দুল গফ্ফরও সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, রাষ্ট্রপতি যত দিন না তাদের ক্ষমাভিক্ষার আর্জি নিয়ে সিদ্ধান্ত না নিচ্ছেন, তত দিন সাজা স্থগিত রাখা হোক। কাল সঞ্জয়-সহ এদের সকলের আবেদনের জবাব দেবে শীর্ষ আদালত। আজ টাডা আদালত অবশ্য সঞ্জয়ের একটি আর্জি খারিজ করেছে। জেল কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। আদালত বলেছে, টাডা আদালতেই আত্মসমর্পণ করতে হবে মুন্নাভাইকে।
|