ককপিটেই গগনদর্শন,
বিমান-সুরক্ষায় নয়া জমানা
কপিটে বসে সামনের মনিটরে পাইলট দেখবেন, আকাশের ঠিক কোথায় তাঁর অবস্থান। আশপাশে কোথায় কোন বিমান, মনিটরের পর্দায় সে ছবিও ফুটে উঠবে। নিশ্চিন্তে বিমান ওড়াতে পারবেন পাইলট। নিজের বা কন্ট্রোলের লহমার ভুলে আচমকা অন্য বিমানের ঘাড়ে গিয়ে পড়ার ভয় থাকবে না।
বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে এমনই এক ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে দেশ জুড়ে। বিশেষজ্ঞদের আশা, এতে আকাশে দুই বিমানের কাছাকাছি চলে আসার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যাবে। ব্যবস্থাটির নাম: অটোম্যাটিক ডিপেন্ডেন্স সার্ভেইল্যান্স-ব্রডকাস্টিং, সংক্ষেপে এডিএস-বি। শুধু দুর্ঘটনা প্রতিরোধ নয়, এর দৌলতে বিমান ওঠা-নামা করতে পারবে সময় মেপে। বাঁচাতে পারবে জ্বালানি। কমানো যাবে দুই বিমানের মধ্যবর্তী আড়াআড়ি দূরত্বও। ফলে জায়গা পাবে বেশি সংখ্যক বিমান, কমবে আকাশের বিমান-জট।
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া-সহ বিভিন্ন উন্নত দেশে এডিএস-বি ইতিমধ্যে চালু হয়ে গিয়েছে। ভারতে ১৪টি জায়গায় যন্ত্রটি বসানো হলেও পুরোপুরি চালু হয়নি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কমিউনিকেশন্স বিভাগের কর্তা ভি সোমসুন্দরম বলেন, “আমাদের আকাশে উড়ে বেড়ানো সমস্ত বিমানে ওই যন্ত্র বসাতে হবে। পাইলটদের তালিম নিতে হবে। তবেই দেশ জুড়ে এডিএস-বি চালু করা সম্ভব।”
এডিএস-বি
রিসিভার মাটিতে, বিমানে ট্রান্সপন্ডার
পাইলটের মনিটরে অন্য বিমানের গতিবিধি
কন্ট্রোলে বিমানের অবস্থান সেকেন্ডে দু’বার
দুই বিমানের আড়াআড়ি ব্যবধান ৮০% হ্রাস
আকাশে আরও বিমানের জায়গা
অবতরণের সময়ে বিমান-জটের সুরাহা
বিমানের জ্বালানি সাশ্রয় বৃদ্ধি
বস্তুত উদ্যোগটি নিয়ে সোমবার, বাংলা নববর্ষের দিনই কলকাতায় চার দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সূচনা হল। বিশ্ব জুড়ে বিমান পরিবহণের নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করে যারা, সেই ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (ইকাও)-এর তত্ত্বাবধানে। সে অর্থে এটি কলকাতায় ইকাওয়ের প্রথম সম্মেলন। ইকাও-এর প্রতিনিধি লি পেং-সহ এ দিন উপস্থিত ছিলেন চিন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া-সহ প্রায় ১৩টি দেশের প্রতিনিধিরা। অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ ডান্সটন বলেন, “দেশের আকাশে ২৯ হাজার ফুট উপরে উড়তে গেলে বিমানে এডিএস-বি থাকতেই হবে। না-থাকলে ওই উচ্চতায় উঠতে দেওয়া হয় না।”
ভারতের বিমানসংস্থাগুলো কী করবে? সংস্থা-সূত্রের খবর: ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া, জেট এবং স্পাইসজেটের কেনা নতুন সব বিমানে এডিএস-বি রয়েছে। ভারতে এই ব্যবস্থা আবশ্যিক হলে পুরনো বিমানেও এডিএস-বি বসাতে হবে। যদিও এক বিমানসংস্থার এক কর্তার কথায়, “কিছু দেশ এডিএস-বি ব্যবহার করলেও ইকাও এখনও তা বাধ্যতামূলক করেনি। আমাদের দেখতে হবে, ওই যন্ত্র বসাতে আর পাইলট-প্রশিক্ষণে কত খরচ হবে। দীর্ঘমেয়াদি লাভই কত থাকবে। অবশ্য আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হলে কিছু করার নেই।” বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের তরফে সোমসুন্দরমের বক্তব্য, “ওঁদের বোঝাতে হবে। এতে তো ওঁদেরও লাভ।”
তবে এডিএস-বি যে কখনওই রেডারের বিকল্প নয়, সোমসুন্দরম তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। রেডার আকাশের অনেক বেশি জায়গার তথ্য জোগায়, যা এডিএস-বি পারে না। “কার্যত রেডারকে সাহায্য করার জন্য একে কাজে লাগানো হবে।” জানাচ্ছেন তিনি। এ-ও জানা যাচ্ছে, কলকাতায় আগামী ছ’মাসের মধ্যে নতুন যে রেডার বসছে, তাতে এডিএস-বি যুক্ত থাকবে। অর্থাৎ, অদূর ভবিষ্যতে কলকাতার মাথার উপরে দিয়ে উড়ে যাওয়া এডিএস-বি সমৃদ্ধ বিমানের যাবতীয় তথ্য মুহূর্তের মধ্যে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) মনিটরে ফুটে উঠবে। কিন্তু যতক্ষণ না সমস্ত বিমানকে এডিএস-বি’র আওতায় আনা যাচ্ছে, ততক্ষণ দুই বিমানের মাঝের দূরত্ব কমানো যাবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.