|
|
|
|
জেলের পথে মুন্নাভাই |
ভিতরে ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছি |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সুপ্রিম কোর্টের বাইরে এসে চোখের জল লুকোনোর চেষ্টাই করলেন না প্রিয়া দত্ত। ১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণের সময় বেআইনি অস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগে ফের জেলে যেতে হবে দাদাকে! মুম্বই উত্তর-পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস সাংসদ ধরা গলায় শুধু বলতে পারলেন, “আমি জানি না, কী বলা উচিত...।”
প্রিয়া দত্তের সেই দাদা, গত প্রায় এক দশকে যাঁকে গোটা দেশ আদর করে ‘মুন্নাভাই’ বলে ডেকেছে, সেই সঞ্জয় দত্ত তখন মুম্বইয়ের ইম্পিরিয়াল বিল্ডিংয়ের দশ তলার ফ্ল্যাটে নিজেকে বন্দি করে রেখেছেন। অনেক পরে অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিক ও ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে একটা বিবৃতি পাঠালেন। যেখানে বললেন, “এই মুহূর্তে নীচে এসে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারলাম না। আমি দুঃখিত।” সেই বিবৃতিতেই লিখলেন, “পরিবারের জন্য আমাকে শক্ত হতে হবে।”
শক্ত হওয়ার কথা বলেছেন তাঁর আইনজীবী সতীশ মানেশিন্দেও। সতীশের কথায়, “আমরা ওঁকে প্রথম থেকেই তৈরি করেছি। উনি খুব শক্ত মনের মানুষ। উনি নিজের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন।” সঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠরাও প্রায় একই সুরে বলছেন, ও চেষ্টা করবে।
কী আর চেষ্টা করবেন? সর্বোচ্চ আদালতের আজকের রায়ের পরে বাকি রইল রিভিউ পিটিশন দাখিল করা। আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে সকলে। যদিও আইনজ্ঞ মহলের একটা বড় অংশের বক্তব্য, রায় বদলের সম্ভাবনা খুবই কম।
অতঃকিম! |
|
সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর সমন হাতে মুম্বই পুলিশের অধিকর্তারা।
বৃহস্পতিবার সঞ্জয় দত্তের বাড়ির পথে। ছবি: পিটিআই |
জেলযাত্রাই ভবিতব্য মুন্নাভাইয়ের, মনে করছেন প্রায় সকলেই।
২০০৬ সালে টাডা কোর্ট ছ’বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল সঞ্জয়কে। এ দিন সুপ্রিম কোর্ট তার মেয়াদ এক বছর কমিয়েছে। সঞ্জয়কে অবশ্য আর সাড়ে তিন বছর জেল খাটতে হবে। কারণ তিনি ইতিমধ্যেই দেড় বছর জেলে ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অপরাধ এতই গুরুতর যে, জেলের বাইরে তাঁকে স্রেফ প্রোবেশন অফিসারের নজরদারিতে রাখা অসম্ভব। তাই এই সিদ্ধান্ত। চার সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে সঞ্জয়কে। নইলে গ্রেফতার।
কী অপরাধ সঞ্জয় দত্তের?
১৯৯৩ সালে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস। মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার দিঘি ও শেখাড়ি উপকূলে এসে ভেড়ে একাধিক নৌকা। আগন্তুকরা পাকিস্তান থেকে বোঝাই করে আনে প্রচুর পরিমাণে আরডিএক্স এবং আগ্নেয়াস্ত্র। পরে এই সব অস্ত্রই ব্যবহার করা হয় ’৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণে। এর মধ্যে থেকে হাত ঘুরে একটি ৯ এমএম পিস্তল এবং এ কে-৫৬ পৌঁছয় সঞ্জয়ের হাতে। অস্ত্রগুলো তাঁকে দিয়েছিলেন দুই প্রযোজক বন্ধু, সমীর হিঙ্গোরা ও হানিফ কড়াওয়ালা। বেশ কিছু কার্তুজ, ম্যাগাজিন এবং হ্যান্ড গ্রেনেডও তাঁরা দিয়েছিলেন সঞ্জয়কে। পরে সঞ্জয়ের পালি হিলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় সে সব অস্ত্র। সঞ্জয় তখন জেরার মুখে জানিয়েছিলেন, পরিবারের উপর হামলা চালানো হবে, এমন খবর পেয়েই বাড়িতে অস্ত্র মজুত করেছিলেন তিনি। মুম্বই বিস্ফোরণের খবর তিনি বিন্দুমাত্র জানতেন না। কিন্তু ওই সব অস্ত্র তো সন্ত্রাসবাদীদের মজুত করা অস্ত্রের অন্যতম! তাই বাড়িতে বেআইনি অস্ত্র রাখা এবং মুম্বই বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে।
সঞ্জয় তখন ‘আতিশ’ ছবির শু্যটিংয়ে মরিশাসে। দেশে ফিরতেই ১৯ এপ্রিল বিমানবন্দরে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। দিন কুড়ি জেলে থাকার পর ৫ মে অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্তি পান তিনি। এর পর ’৯৪ সালের ৪ জুলাই টাডা আদালত জামিন নাকচ করায় ফের জেল। এ বার টানা ১৬ মাস। সুপ্রিম কোর্ট জামিন দেওয়ায় রেহাই মিলল ১৯৯৫ সালের
|
সঞ্জয়ের সাজার খবর
শোনার পরে বোন প্রিয়া।
ছবি: পিটিআই |
১৭ অক্টোবর। পিছু ছাড়ল না কারাবাস। বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই মিললেও অস্ত্র আইনে দোষী ঘোষণা করল টাডা আদালত। ২০০৭-এর ৩১ জুলাই মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলে নিয়ে যাওয়া হল সঞ্জয়কে। পরে সেখান থেকে সরানো হয় পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে। মাঝে কিছু দিনের মুক্তি, ফের জেল। ২০০৭-এর ২৭ নভেম্বর জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট। আজ তারাই শোনাল কারাবাসের সাজা।
সুনীল দত্ত-নার্গিসের এই সন্তানটির সঙ্গে অপরাধ জগতের নাম মাঝেমাঝেই জড়িয়েছে। বয়স তখন ২৫ পেরোয়নি, জড়িয়ে পড়েছেন মাদক চক্রে। সালটা ১৯৮২। সে বছর মাদক রাখার অপরাধে পাঁচ মাস জেল খাটেন সঞ্জয়। ছাড়া পাওয়ার পর বছর দু’য়েক থাকেন আমেরিকায়। জনতা কিন্তু তাঁর সেই মাদকাসক্ত ভাবমূর্তির জন্য তাঁকে দূরে ঠেলে দেয়নি। বরং অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে সঞ্জয় যখন বলেন, মাদক বিরোধী লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকতে চান তিনি, তখন এক রকম মাথায় তুলে রেখেছে তাঁকে। তাতে অবশ্য কিছু যায়-আসেনি সঞ্জয়ের। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে মুম্বই-বিস্ফোরণের সময় অস্ত্র রাখার অপরাধ। তাতেও অবশ্য ভাটা পড়েনি সঞ্জয়ের ফিল্মি-কেরিয়ারে। ১৯৯৩ সালে দাউদ-যোগে জড়িয়ে পড়েন সঞ্জয়। সে বছরই ‘খলনায়ক’ ছবির জন্য ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতা মনোনীত হন! দীর্ঘ দিন জেল খেটে বাইরে আসার পরে ‘দাউদ’ ছবিতে দারুণ ভাবে ফিরে আসা। দু’বছর পর ‘বাস্তব’ ছবিতে গ্যাংস্টারের চরিত্রে সেরা অভিনেতার সম্মান ঝুলিতে ভরার পরে আর সে ভাবে পিছোনে তাকাননি। কিন্তু জনপ্রিয়তায় বোধহয় সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল তাঁর মুন্নাভাই সিরিজ। দেশ জুড়ে সঞ্জয়-ভক্তরা তাঁকে মুন্নাভাই বলেই ডাকতে শুরু করেন।
মুন্নাভাই সিরিজের তৃতীয় ছবির সইসাবুদ পর্ব সবে শেষ হয়েছে। ছবির নাম ‘মুন্নাভাই চলে দিল্লি’। তার মধ্যেই এই রায়।
মুন্নাভাইয়ের দিল্লি যাওয়া এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। তার বদলে তিনি আপাতত জেলের পথে।
মুন্নাভাই, নাকি খলনায়ক!
|
|
|
|
|
|
|