|
|
|
|
ফাঁসির সাজা বহাল ইয়াকুব মেমনের |
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
২০ বছর আগে এমনই এক মার্চের দিনে পর পর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল গোটা মুম্বই। সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিল, দাউদ ইব্রাহিম, টাইগার মেমন, ইয়াকুব আব্দুল রজ্জাক মেমনরা ছিল ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণে তিরন্দাজের ভূমিকায়।
তাদের নির্দেশে বাকিরা ধনুক থেকে ছোড়া তিরের মতোই কাজ করে গিয়েছে। রায়ে টাইগারের ভাই ইয়াকুব মেমনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। দাউদ ইব্রাহিমের সহযোগী আবু সালেমের কাছ থেকে বেআইনি অস্ত্র নেওয়া ও পরে সে অস্ত্রশস্ত্র লোপাট করার অপরাধে
পাঁচ বছর কারাদণ্ড হয়েছে চিত্রতারকা সঞ্জয় দত্তের।
বিস্ফোরণ মামলায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত। তাদের মধ্যে কেবল ইয়াকুব মেমনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশই বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। বাকি ১০ জনের শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। নিম্ন আদালতে ১৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৬ জনের ক্ষেত্রে শাস্তির আদেশ বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যাদের মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে তারা সমাজের নিচু স্তরের মানুষ। কোনও কাজকর্মও করত না। মূল ষড়যন্ত্রীরা নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তাদের ব্যবহার করেছে। ওই আসামিরা কেবল মুম্বইয়ের বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরক রাখা ও হামলা চালানোর কাজ করেছে। তাদের যাবজ্জীবনই প্রাপ্য।
বিস্ফোরণ কাণ্ডে দাউদ ইব্রাহিম ও তার ভাইদের পাশাপাশি সমান সক্রিয় ছিল টাইগার মেমনও। পুরো মেমন পরিবার বিস্ফোরণের পরে প্রথমে দুবাই ও পরে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়।
মেমন পরিবারের সবচেয়ে শিক্ষিত সদস্য ইয়াকুব পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। টাইগারের ব্যবসার আর্থিক লেনদেন দেখাশোনা করত তারই ফার্ম। সিবিআইয়ের মতে, টাইগারের চোরাচালানের কারবারে সাহায্য করত ইয়াকুব। মুম্বই বিস্ফোরণের আগে পাকিস্তান থেকে আরডিএক্স ও অস্ত্রশস্ত্র চোরা পথে ভারতে আনা তথা বিস্ফোরণের পুরো ষড়যন্ত্রেও যুক্ত ছিল সে। পরে সে অন্যান্য অভিযুক্তদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক তুলে দেয়।
কিন্তু নিজেকে বরাবরই নির্দোষ বলে দাবি করে এসেছে ইয়াকুব। কোন পরিস্থিতিতে ইয়াকুব সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়ে তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, নয়াদিল্লিতে ১৯৯৪ সালের ৫ অগস্ট গ্রেফতার করা হয় ইয়াকুবকে। কিন্তু ইয়াকুব ও তার স্ত্রী রাহিনের দাবি, ১৯৯৪ সালের জুলাই মাসে আত্মসমর্পণ করেছিল ইয়াকুব। অনেকের মতে, ভারতীয় গোয়েন্দাদের সঙ্গে বিশেষ সমঝোতার ভিত্তিতেই দেশে ফিরেছিল ইয়াকুব। নেপাল থেকে তাকে বিশেষ উপায়ে ভারতে নিয়ে আসা হয়। এই বিষয়ে নয়াদিল্লিকে সাহায্য করেছিল নেপাল সরকার। পরে কোর্টেও ইয়াকুব জানায়, তাকে নেপালে গ্রেফতার করেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।
ইয়াকুবের বাবা প্রয়াত আব্দুল রজ্জাক মেমন-সহ মেমন পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যও দেশে ফিরে আসেন। অনেকের দাবি, মেমন পরিবারের ফেরার ব্যবস্থা করতে দুবাইয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর এক অফিসার।
ফিরে আসার পরে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল ইয়াকুব। সে জানায়, পাকিস্তানি মদতে টাইগার মেমন বিস্ফোরণের ছক কষেছিল। তার স্ত্রী রাহিন জানিয়েছেন, পাকিস্তানে মেমন পরিবারকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। ইয়াকুব নির্দোষ। তাই সে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
নিম্ন আদালতে ইয়াকুবের মৃত্যুদণ্ডে অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। কেবল ষড়যন্ত্র ও অস্ত্রশস্ত্র বিলি করার অভিযোগে তার চরম শাস্তি হবে বলে ভাবেননি মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরাও। তা ছাড়া গোয়েন্দাদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ফেরায় তাকে কিছুটা রেয়াত করা হবে বলেও ভেবেছিলেন অনেকে। কিন্তু নিম্ন আদালতও বিস্ফোরণ মামলায় তার ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল। আজ সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছে শীর্ষ আদালত।
মুম্বই বিস্ফোরণে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি পি সদাশিবম ও বি এস চহ্বাণের বেঞ্চের মতে, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। পাকিস্তানে ষড়যন্ত্রীদের অবাধ যাতায়াত ছিল। তাদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছিল পাক সরকার। সে দেশে বহু ভারতীয় যুবককে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বেঞ্চের মতে, অভিযুক্তদের জবানবন্দি থেকেই স্পষ্ট যে দাউদ ইব্রাহিম ও টাইগার মেমন পাকিস্তানি সহযোগিতায় পুরো ষড়যন্ত্র করেছিল।
বিস্ফোরণের আগে বেশ কয়েক বার মহারাষ্ট্র ও গুজরাতে বিস্ফোরক এবং অস্ত্রশস্ত্র গোপনে নামানো হয়। সে ক্ষেত্রে দাউদের চোরাচালানের জন্য তৈরি নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করেছিল আইএসআই। বেশ কিছু পুলিশ অফিসারও এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে আজ মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আইনগত দিক থেকে আজ একটি বিশেষ মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত। এই মামলা থেকে রেহাই চেয়েছিল আসামি মহম্মদ মইন ফরিদুল্লা কুরেশি। তার আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে জানান, ঘটনার সময়ে সে নাবালক ছিল। তাই নাবালক বিচার আইনে তাকে এই মামলা থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া যেতে পারে। এই আর্জি মানতে চায়নি বেঞ্চ। বেঞ্চের মতে, সন্ত্রাসবাদীদের বিচারের জন্য তৈরি আইনে কুরেশির বিচার হয়েছে। তাই নাবালক বিচার আইন প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। |
|
|
|
|
|