|
|
|
|
স্ট্যালিনের বাড়িতে হঠাৎ হানা সিবিআইয়ের, অস্বস্তিতে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের উপর থেকে মঙ্গলবারই সমর্থন প্রত্যাহার করেছে ডিএমকে। আর দু’দিন পরেই সাত সকালে ডিএমকে-প্রধান করুণানিধির পুত্র স্ট্যালিনের ঘুম ভাঙল সিবিআই কর্তাদের ডাকাডাকিতে! বিদেশি গাড়ি আমদানি করে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে আজ করুণানিধির রাজনৈতিক উত্তরসূরির বাড়িতে তল্লাশি চলল। ঘণ্টাখানেক পরে আচমকাই তল্লাশি থামিয়ে চলে যান গোয়েন্দারা।
ঘটনা এখানেই শেষ হলে অন্য কথা ছিল। তাৎপর্যপূর্ণ হল, দলের আগামী দিনের প্রধানের বাড়িতে এই সিবিআই হানায় ডিএমকে যতটা না কেঁপে উঠল, তার থেকে বেশি কম্পন হল সরকারের অন্দরে! কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ উঠতেই দলের ভাবমূর্তি বাঁচাতে নজিরবিহীন ভাবে সিবিআই হানার বিরুদ্ধে সরব হলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁদের দাবি, সিবিআই হানার নির্দেশ সরকার দেয়নি। এমনকী তাঁদের কাছে এ ব্যাপারে কোনও আগাম খবরও ছিল না। সরাসরি না বললেও সিবিআই হানার নেপথ্যে অন্তর্ঘাত ও ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে সরকারের মধ্যে থেকেই। পুত্রের এই হেনস্থার জন্য বাবা করুণানিধিকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশও করেন চিদম্বরম।
আজ সকালে চেন্নাইয়ে স্ট্যালিনের বাড়িতে সিবিআই হানা শুরু হওয়ার খবর চাউর হতেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে কংগ্রেসের মুণ্ডপাত করতে নেমে পড়েন ডিএমকে নেতারা। একই অভিযোগ তোলে বিজেপিসহ বিরোধী দলগুলিও। টনক নড়ে সরকারের। দ্রুত বিবৃতি দিয়ে চিদম্বরম বলেন, “যদিও সিবিআই আমার মন্ত্রকের অধীনে নয়, কিন্তু তাদের এই তল্লাশিতে আমার মত নেই। কেন এই তল্লাশি চালানো হল, তা নিয়ে সিবিআই সংক্রান্ত মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইব।” |
|
করুণানিধি-পুত্র স্ট্যালিন। বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ে। ছবি: পিটিআই |
চিদম্বরমের পর মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রীও। যে মনমোহন সচরাচর সংসদে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন না, আজ তিনি নিজে থেকেই ঘটনাটি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে এগিয়ে আসনে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার এই সিবিআই তল্লাশির নির্দেশ দেয়নি। এটা উচিতও হয়নি। বিশেষ করে এই তল্লাশি চালানোর সময়টা দুর্ভাগ্যজনক। এর জন্য কারা দায়ী, তা খুঁজে বের করবে সরকার।”
বিরোধীরা অবশ্য মনমোহন বা চিদম্বরমের বিবৃতিতে নরম হচ্ছেন না। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, আসলে প্রকাশ্যে সাধু সাজলেও সরকার তথা কংগ্রেসই এর পিছনে রয়েছে। সিবিআইয়ের জুজু দেখিয়ে শরিকদের পাশে রাখার পুরনো খেলায় নেমে পড়েছে কংগ্রেস। বিরোদীদের এই অভিযোগের জবাব দিতে আসরে নেমে সরকার ও কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “সিবিআই হানা বড় বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল তার সময়টা। ডিএমকে সমর্থন প্রত্যাহারের পরক্ষণেই সিবিআই হানা দিলে স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার অভিযোগ উঠবে। ভবিষ্যতে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও শরিক দলই জোট বাঁধতে চাইবে না। এটা সবাই বুঝতে পারছে, আর কংগ্রেস বুঝবে না!” অনেক কংগ্রেস নেতার ধারণা, তামিলনাড়ুতে স্থানীয় সিবিআই কর্তাদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে এডিএমকে বা কোনও আঞ্চলিক দলও এটা করাতে পারে। আবার ডিএমকে-র মধ্যে অনেকেই এই গোয়েন্দা-হানার নেপথ্যে করুণানিধির বড় ছেলে আলাগিরির হাত দেখছেন। কারণ, ডিএমকে রাজনীতিতে স্ট্যালিন-আলাগিরি রেষারেষি সর্বজনবিদিত। কালাইনার স্ট্যালিনকে তাঁর উত্তরসূরী হিসাবে ঘোষণা করে দেওয়ার পর দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, প্রকৃত সত্য খুঁজে বের করার জন্য কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ দফতরের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ স্বামীকে নির্দেশ দিয়েছেন মনমোহন। নারায়ণ স্বামীকে ডেকে কথা বলেন সনিয়াও। পরে স্বামী জানান, স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। কিন্তু কার নির্দেশে সিবিআই কর্তারা তাঁর বাড়িতে গেলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু সিবিআই কর্তারা কার নির্দেশে আচমকা তদন্ত থামিয়ে ফিরে গেলেন, সে প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে।
সরকার আজ যে ভাবে তেড়েফুঁড়ে পরিস্থিতির মোকাবিলায় মাঠে নামে, তাতে বিজেপির পক্ষে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তোলার সুযোগ বিশেষ ছিল না। কিন্তু মনমোহন-চিদম্বরমের বক্তব্যের সূত্র ধরে বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি বলেন, “সিবিআই নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা। তারা যদি কোনও তল্লাশি চালায়, সরকার তাতে বাধা দেবে কেন? কেনই বা প্রধানমন্ত্রী বলবেন, তদন্তের নির্দেশ সরকার দেয়নি? গোটা ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, সিবিআইয়ের অপব্যবহার বা রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহারের যে অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপি এর আগে জানিয়েছে, তা সর্বৈব সত্য।” প্রসঙ্গত, প্রাক্তন সিবিআই প্রধান অশ্বিনী কুমারকে রাজ্যপাল পদে নিয়োগ প্রসঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকরণ নিয়ে সম্প্রতি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বিজেপি।
আর গোটা ঘটনায় সিবিআইয়ের ভাবমূর্তিই ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই অবস্থায় তদন্ত সংস্থাটির তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার একটা চেষ্টা য়েছে আজ। সিবিআই মুখপাত্র বলেন, চলতি একটি তদন্তের সূত্রেই আজ তল্লাশি চালানো হয়েছিল। কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আক্রোশের কারণে তা করা হয়নি। সিবিআই এ-ও জানায়, বিদেশ থেকে ৩৩টি গাড়ি আমদানি করে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে একজন ব্যবসায়ী ও রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। আজ ১৮টি জায়গায় হানা দিয়ে ১৭টি গাড়ি আটক করা হয়েছে। তা ছাড়া সার্ভিস সেন্টার থেকে স্ট্যালিনের ছেলে উদয়নিধির গাড়ি আটক করা হয়েছে। তাঁকে জেরাও করা হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, সিবিআই হানা নিয়ে করুণানিধি কিন্তু আজ চড়া সুরে কোনও কেন্দ্র-বিরোধী মন্তব্য করেননি। বরং তিনি বলেন, “এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঘটনা হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। কেন্দ্রের মন্ত্রীরা যখন বলছেন তাঁরা বিষয়টি জানতেন না, তখন তাঁদের বিশ্বাস করতেই হবে।” যা শুনে অনেকেই বলছেন, হতে পারে সিবিআই হানার পর আজ ডিএমকে নেতারাও ভয় পেয়েছেন। কেন না তাঁরা এটা অন্তত দেখলেন যে, কেন্দ্র থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পরেই তাঁদের কী পরিণতি হতে পারে! তা সে সরকার এটা করিয়ে থাকুক বা নেপথ্যে কোনও ষড়যন্ত্র থাকুক। একই ভাবে আজকের ঘটনা মায়াবতী-মুলায়মকেও বার্তা দিয়েছে বলে ধারণা অনেকের।
সারা দিনের ঘটনায় কংগ্রেসের কপালে চিন্তার ভাঁজটাও আজ আরও কিছুটা বেড়েছে। কারণ তাঁদের আশঙ্কা, শরিক সম্পর্ক রক্ষায় কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর আজকের ঘটনা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। কংগ্রেসের এই ‘করুণ’ দশা নিয়ে আজ টিপ্পনি করতে ছাড়েনি সিপিএম। দলের পলিটব্যুরো নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “এখন দেখা যাচ্ছে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারের বেঁচে থাকার খরচও বাড়ছে!” |
|
|
|
|
|