|
|
|
|
জোট-দরজায় ধাক্কা মমতার, সাড়া দিচ্ছেন সনিয়াও |
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি |
বন্ধ দরজাটা আবার খুলছে। অতিথি কড়া নেড়েছেন। গৃহকর্ত্রী দরজা খুলছেন।
অতিথি: মমতা বন্দ্যোপাধায়। গৃহকর্ত্রী: সনিয়া গাঁধী। লোকসভা নির্বাচন হতে বাকি আর মাত্র এক বছর। তার আগে কংগ্রেস ও তৃণমূলের আবার জোট বাঁধার সম্ভাবনা বাড়ছে বই কমছে না।
পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণের প্রতিবাদে আজ সকালে সংসদে গাঁধী মূর্তির সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে হুঙ্কার দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদেরা। কিন্তু অনেকেরই মতে, এই প্রতিবাদ বাইরের সত্য। প্রকৃত সত্য নয়। কারণ, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে মুখর হলেও এই মুহূর্তে তৃণমূলের রাজনৈতিক স্বার্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “মমতার রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গে তিনিই যে আসল কংগ্রেস, সেটা প্রতিষ্ঠা করা। প্রদেশ কংগ্রেসকে মুছে দিয়ে তার সবটুকু পরিসর দখল করে নেওয়া।” কিন্তু সেই কাজে তিনি সফল হননি। মমতা যখনই কংগ্রেসের হাত ছেড়েছেন, তখনই ধাক্কা খেয়েছেন রাজনীতির ময়দানে। হাজার চেষ্টাতেও কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক পুরোপুরি নিজের দিকে টেনে আনতে পারেননি মমতা। ফলে সিপিএম-কে ক্ষমতাচ্যুত করতে তাঁকে কংগ্রেসের সাহায্য নিতেই হয়েছে।
তার পরে ফের কংগ্রেসকে তালাক দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত যে আত্মঘাতী, সম্প্রতি তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন তা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। তার উপরে প্রায় দু’বছর ক্ষমতায় থাকার পরে নানা কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে তাঁর সরকার। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত ভোটের মুখে একলা চলার নীতিতে লাভের চেয়ে যে লোকসান বেশি, সেই বোধোদয় মমতার হয়েছে বলেই কংগ্রেস নেতাদের একটা বড় অংশের মত।
শুধু ভোটের রাজনীতি নয়, সরকার চালাতেও যে কংগ্রেস তথা কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য প্রয়োজন, তা বিলক্ষণ বুঝছেন মমতা। নীতীশ কুমার এনডিএ শরিক হয়েও কেন্দ্রের সঙ্গে বোঝাপড়া করে বিহারের জন্য বিশেষ আর্থিক মর্যাদা আদায় করে নিয়েছেন। আর মমতা প্রতিদিন ঝগড়া করে এক কানাকড়িও বাড়তি সুবিধা পাননি। |
|
জঙ্গলমহলের উন্নয়ন থেকে দার্জিলিং সমস্যা, আর্থিক সঙ্কট থেকে যোজনা বরাদ্দ, রাজ্য চালাতে গেলে সব কিছুর জন্যই তো কেন্দ্রকে তাঁর দরকার। তা ছাড়া, তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ অংশকে যে কংগ্রেস ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, সেই আশঙ্কা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় থেকেই মমতার রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি বন্ধুত্ব করে নিলে এই সব সমস্যারই সমাধান করে ফেলতে পারবেন তিনি।
কিন্তু কংগ্রেসের স্বার্থটি কী?
দীপা দাশমুন্সি বা অধীর চৌধুরীরা চাইছেন, মমতা কড়া নাড়লেও সনিয়া যেন কিছুতেই দরজা না খোলেন। তাঁরা বলছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে কংগ্রেস ছ’টি আসন এমনিতেই পাবে। মমতার সঙ্গে জোট করলে বড়জোর দু’-একটি আসন বাড়তে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মমতার আসন বাড়বে অনেক বেশি। আর লোকসভা ভোটের পরে সেই সংখ্যার জোরে তিনি যে এনডিএ-তে সামিল হবেন না, তার নিশ্চয়তা কী!
কিন্তু অধীর-দীপা যা-ই চান না কেন, সনিয়ার রাজনৈতিক স্বার্থ কী বলছে?
জয়পুরে দলের অধিবেশনে সনিয়া বলেছিলেন, তিনি জোটের বিরুদ্ধে নন। কিন্তু কংগ্রেসের সাংগঠনিক স্বার্থ উপেক্ষা করে যেনতেন প্রকারে জোট বাঁধাও তাঁর লক্ষ্য নয়। কিন্তু মমতা নিজেই যখন বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তখন কংগ্রেসই বা তৎক্ষণাৎ তা প্রত্যাখান করবে কেন। সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটলের বক্তব্য, “বন্ধু সংখ্যা যত বেশি হয়, ততই তো ভাল।” কমল নাথের মতো নেতারাও বলছেন, পুষ্পস্তবকে দশ রকম ফুল থাকা ভাল। তাতে কোনও একটি শরিক দলের দাপট থাকে না।
এই জোট রাজনীতির যুগে বন্ধুরক্ষার তাগিদে তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেণীপ্রসাদ বর্মার মন্তব্যের জন্য মুলায়মের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন সনিয়া। অতীতেও জোটধর্ম রক্ষার স্বার্থে ১০ জনপথ থেকে হেঁটে রামবিলাস পাসোয়নের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন তিনি। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, আসলে এটা প্রেম-ভালবাসার ব্যাপার নয়। এটা রাজনীতির বাস্তবতার প্রশ্ন।
তার মানে অবশ্য এই নয় যে, আগামিকালই মমতা ইউপিএ-র শরিক হচ্ছেন। তার মানে এই নয় যে, ৮ এপ্রিল যোজনা কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি এলে সনিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসে যাবেন মমতা। কিন্তু পুনর্মিলনের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে এগোনোটা অসম্ভব নয় বলেই মনে করছে দু’পক্ষ। মমতাকে কমল নাথ এবং জয়রাম রমেশের ফোন সেই লক্ষ্যপূরণের প্রাথমিক কাজটা করেছে বলেই অনেকের মত। তাঁরা বলছেন, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে কমল নাথ সংসদের সঙ্কট মেটানোর তাগিদে মমতাকে ফোন করতেই পারেন। কিন্তু সনিয়া-রাহুলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জয়রাম কি ১০ জনপথের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া এই কাজ করবেন? অতএব মমতার ডাকে দরজা ফাঁক করেছেন সনিয়া। |
|
|
|
|
|