শিয়ালদহে সূর্য সেন বাজারের অগ্নিকাণ্ডের পিছনে কি অন্তর্ঘাত? ফরেন্সিক রিপোর্ট থেকে তেমনই আশঙ্কা দানা বাঁধছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাজারের একতলায় একাধিক জায়গায় আগুনের উৎস খুঁজে পেয়েছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। একই সঙ্গে একাধিক জায়গা কী ভাবে আগুনের উৎস হয়, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। ফরেন্সিক রিপোর্টটিকে ভাল করে খতিয়ে দেখছে কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশ। আগুনের পিছনে কোনও অন্তর্ঘাত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখাই এখন মূল লক্ষ্য। ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বাজারে গিয়ে বলেছিলেন, এর পিছনে চক্রান্ত রয়েছে কি না, দেখা হবে।
২৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে সূর্য সেন বাজারে ওই অগ্নিকাণ্ডে ২১ জনের মৃত্যু হয়। আগুনে বেশ কয়েক জন জখমও হন। রাজ্য সরকার মৃতদের ক্ষতিপূরণ বাবদ দু’লক্ষ করে টাকা দেয়। ওই রাতে দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শিখা মিত্র। তিনি বলেছিলেন, শিয়ালদহের কয়েকটি বাজার জতুগৃহ হয়ে রয়েছে। যে কোনও সময়ে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তাঁর অভিযোগ, এক বছর আগে মেয়রকে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও পুর-প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ দিলেই কি শেষ হয়ে যায়, এই প্রশ্নও তোলেন শিখাদেবী। তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সে দিনই মেয়র বলেছিলেন, “এমন কোনও চিঠির কথা আমি জানি না।” |
ওই রাতে মুচিপাড়া থানা এলাকার সরু রাস্তার ধারে পাঁচতলা ওই বাজারটির একতলায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। মেজেনাইন ফ্লোরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ছোট জায়গা, বেরোনোর পথ না-পেয়ে রাতে বাজারে থাকা কয়েক জন ছোট ব্যবসায়ী আগুনের হাত থেকে রক্ষা পাননি। পুলিশের পক্ষ থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের আনা হয়। প্রথম দিন বাজারের একতলায় তাপ ছিল অস্বাভাবিক। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে পোড়া জিনিসের নমুনা সংগ্রহ করেন। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, বিড়ি-সিগারেট, দাহ্য কোনও বস্তু বা প্রাকৃতিক কারণে আগুন লেগেছে কি না, তা খুঁটিয়ে দেখেন তাঁরা। কিন্তু সব দিক পরীক্ষা করে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। কারণ, একাধিক জায়গায় আগুন লাগার উৎস খুঁজে পান তাঁরা। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা।
প্রাক্তন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শর্ট সার্কিট বা কোনও দাহ্য বস্তু থেকে আগুন লাগলে ফরেন্সিক রিপোর্টে তা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু একাধিক জায়গায় আগুনের উৎস মেলায়, আগুনের কারণ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। পুলিশের হাতে ফরেন্সিক রিপোর্ট পৌঁছে গিয়েছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ফরেন্সিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, অনেক জায়গা থেকে আগুন লেগেছে (মাল্টিপল সোর্স)। আমরা এই রিপোর্ট নিয়ে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করব। ভাল করে জানার চেষ্টা করব কী থেকে এমন হতে পারে।” রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “ফরেন্সিক রিপোর্টে কী আছে, তা আমার জানা নেই। যদি আগুনের মাল্টিপল সোর্সের কথা বলা হয়ে থাকে, তা হলে অন্তর্ঘাতের একটা আশঙ্কা থেকে যায়। বিষয়টি ভাল করে খতিয়ে দেখব। ”
|