বাড়ির অদূরে গাড়ি রাখার পরে স্ত্রীকে ফোন করে খাবার গরম করতে বলেছিলেন কড়েয়ার বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন আহমেদ। কিন্তু তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিন আততায়ীর হাতে খুন হলেন তিনি। রবিবার গভীর রাতে গুরুসদয় দত্ত রোডে এই ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক তদন্তে নেমে পুলিশ বারমুডা, জিন্স, গেঞ্জি পরা তিন যুবকের কথা জানতে পারলেও সোমবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
|
সাহাবুদ্দিন আহমেদ। |
কী হয়েছিল ওই রাতে? পুলিশ সূত্রের খবর, রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ গুরুসদয় দত্ত রোডে স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা রাস্তার ধারে এক ব্যক্তিকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। সেখান থেকেই খবর পায় বালিগঞ্জ থানা। পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সাহাবুদ্দিন আহমেদ (৪০) নামে ওই ব্যক্তিকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। দেহটি ময়না-তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের মাথা থেকে একটি গুলি মিলেছে। শরীরে ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান লালবাজারের হোমিসাইড শাখার এক অফিসার। ফের সকালে লালবাজারের গোয়েন্দাদের একটি দল গুরুসদয় দত্ত রোডের ঘটনাস্থলে যায়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সাহাবুদ্দিনের মাথার পিছনে যে গুলিটি মিলেছে, প্রাথমিক তদন্তে সেটিকে ওয়ান-শটারের কার্তুজ বলেই ধারণা পুলিশের। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, একটি বহুতলের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে। তদন্তে নেমে ওই বহুতলের বাইরে লাগানো একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এক পুলিশকর্তা জানান, ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, রাত ১১টা ৫৩ নাগাদ তিন যুবক সাহাবুদ্দিনকে মারধর করছে। এর পরে তারা পালিয়ে যায়। |
নিহত সাহাবুদ্দিনের বাড়ি কড়েয়ার আহিরিপুকুর ফার্স্ট বাইলেনে। এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকস্তব্ধ পরিজনেদের ভিড়। ঘটনার পর থেকেই সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ফরিদা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নিহতের ভাগ্নে সদাব হবিবুল্লাহ জানান, তাঁর মামা গত পাঁচ-ছ’মাস ধরে জাপানি কনস্যুলেটের এক অফিসারের গড়ি চালাতেন। সকাল সাতটা নাগাদ বেরোতেন, ফিরতেন রাত আটটা নাগাদ। তবে রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় সকালে কাজে যাননি। বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানে ওই অফিসারকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ বেরিয়েছিলেন সাহাবুদ্দিন। বলে গিয়েছিলেন, রাতে ফিরতে দেরি হবে।
সাহাবুদ্দিনের পরিবার সূত্রের খবর, তাঁর মেয়ে সফিরার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। নিহতের এক আত্মীয় জানান, প্রতিদিনের মতো সাহাবুদ্দিন গুরুসদয় দত্ত রোডের কাছে গাড়ি পার্ক করেছিলেন। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ স্ত্রী ফোন করলে সাহাবুদ্দিন খাবার গরম করতে বলেন। কিন্তু তার পর থেকে ঘণ্টা তিনেক কেটে গেলেও সাহাবুদ্দিন ফিরছেন না দেখে চিন্তায় পড়ে যান তাঁর পরিবারের লোকেরা। সাহাবুদ্দিনের মেয়ে সফিরা জানান, রাত দেড়টা নাগাদ বাবার মোবাইলে ফোন করলে অন্য এক ব্যক্তি ফোন করেন। তিনি জানান, সাহাবুদ্দিনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসএসকেএমে আনা হয়েছে। এর পরে রাতে হাসপাতালে গিয়ে গোটা ঘটনা জানতে পারেন তাঁরা। এ দিন দুপুরে তাঁরা থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। |