বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন দল বেঁধে শপিং মলের প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখতে এসেছিলেন ওঁরা অনেকেই। আচমকা বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ পর্দা অন্ধকার হয়ে যায়। হলের বেল বেজে ওঠে। দরজাও খুলে যায়। সকলকে বেরিয়ে আসতে বলেন রক্ষীরা। ঘোষণা করা হয়, ‘মল ছেড়ে এখনই বেরিয়ে পড়ুন। বোমা রয়েছে।’
সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলগিন রোডের ওই শপিং মলে। সিনেমা হল ছেড়ে ছুটে বেরিয়ে আসতে থাকেন সকলে। প্রেক্ষাগৃহগুলি রয়েছে মলটির ছ’তলায়। ততক্ষণে অন্যান্য তলা থেকেও হুড়মুড়িয়ে নীচে নেমে আসতে শুরু করেছেন সকলে। অনেকেই নিজেদের মালপত্র কাউন্টারে জমা দিয়ে ঢুকেছিলেন বিভিন্ন বিপণিতে। আতঙ্কের জেরে সে সব জিনিস ভিতরে ফেলেই বেরিয়ে যান অধিকাংশ মানুষ। এর পরে মলটি খালি করা হলে সেখানকার দখল নেন পুলিশ ও বম্ব-স্কোয়াডের কর্মীরা। বোমা খুঁজতে আনা হয় পুলিশ-কুকুরও।
কিন্তু কোথায় বোমা? ঘণ্টা দু’য়েক তল্লাশি চালিয়েও কোনও বোমা উদ্ধার করতে পারেননি তাঁরা। পুলিশ সূত্রে খবর, একটি উড়ো ফোন পেয়ে মল-কর্তৃপক্ষই খবর দেন পুলিশে। যে নম্বর থেকে মলে ওই ফোন এসেছিল, সেটি এখন জানার চেষ্টা করছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও এসটিএফ শাখা। |
শপিং মলে তখন চলছে বোমার খোঁজ। বাইরে উদ্বিগ্ন ভিড়। সোমবার, এলগিন রোডে। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ সূত্রে খবর, দশ দিন আগেই মলটির জন্মদিন পালিত হয়েছে। এর আগে আরও দু’বার সেখানে এই রকম উড়ো ফোনে বোমা রাখার ভুয়ো খবর দেওয়া হয়। বছরখানেক আগে বোমা রয়েছে বলে এমনই একটি উড়ো ফোন আসায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে বেসমেন্ট থেকে একটি খালি ব্যাগ উদ্ধার করেছিল। ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে কেউ বারবার এ ভাবে ভয় দেখাচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
মলের তিনতলায় নিজের একটি শো-রুম রয়েছে আশুতোষ তিওয়ারির। তিনিও ওই ঘোষণা শুনে নীচে নেমে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, “আজ উৎসবের দিন। তাই এখানে ভিড় হয়েছিল ভালই। মাঝপথে এই ঘটনা ঘটায় আমাদের ব্যবসা মার খেল।” বারুইপুর থেকে সিনেমা দেখতে এসেছিলেন শ্বেতা চক্রবর্তী ও সরিতা চক্রবর্তী। তাঁদের সঙ্গে ছিল দুই শিশুও। মাঝপথেই নেমে আসার পরে তাঁরা বললেন, “কী আর করব এখন। ফুচকা খেয়ে বাড়ি ফিরব।”
সন্ধ্যার পরেও অনেকেই মলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, পুলিশ চলে গেলে বাকি সিনেমাটা দেখবেন বলে। অনেকে আবার টিকিটের দাম ফেরত নিতে গেলেন কাউন্টারে। উড়ো ফোনের জেরে মলের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল সামনে বসা ফুচকাওয়ালার। |