জৌলুস অনেকটাই ম্লান। সপ্তাহের প্রথম দিনেই বিশ্ব বাজারে আরও তলিয়ে গেল সোনা। দাম নেমে গেল গত দু’বছরের মধসব থেকে নীচে। নববর্ষ উপলক্ষে সোমবার কলকাতায় সোনার বাজার ছিল বন্ধ। সেই কারণে ওই পতনের প্রভাব এ দিন তেমন টের পাওয়া যায়নি রাজ্যে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের দিকে তাকিয়ে সোনার দর পড়েছে দিল্লি-সহ দেশের অন্যান্য প্রান্তে। খাস রাজধানীতেই তার দাম নেমে গিয়েছে গত ১৫ মাসের তলানিতে। আন্তর্জাতিক বাজারে একই হাল রুপো, প্ল্যাটিনাম, প্যালাডিয়ামের মতো দামি ধাতুরও।
সোনার দরে এমন ব্যাপক পতনে স্বাভাবিক ভাবেই কপালে ভাঁজ স্বর্ণঋণ সংস্থাগুলির। এ দিনও দেশের বাজারে হু হু করে নেমেছে তাদের শেয়ার দর। সংস্থাগুলির আর্থিক অবস্থার উপর কড়া নজর রাখছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যে-সোনা বন্ধক রেখে তাদের যাবতীয় ঋণ, তারই এমন দাম কমলে সংস্থার স্বাস্থ্য কেমন দাঁড়াবে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। পর পর দু’দিন (শনি ও সোমবার) সোনার দরে এমন চমকে দেওয়া পতনে শেয়ার দর পড়েছে টাইটান ইন্ডাস্ট্রিজ, পি সি জুয়েলার্স, গীতাঞ্জলি জেমসের মতো গয়না নির্মাতা সংস্থারও। তবে নয়াদিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন শহরের খুচরো বিক্রেতাদের দাবি, দাম কমায় সোনার গয়নার চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। আগামী দিনে এই বাজার আরও চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা।
শনিবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্সে সোনার দাম এক ধাক্কায় কমে গিয়েছিল ৮৪ ডলার। দাঁড়িয়েছিল ১৪৭৭ ডলারে। এ দিন লন্ডনের বাজারে ফের তা আরও ৯০ ডলার পড়ে নেমে গিয়েছে ১,৩৮৬.৩০ ডলারে। গত দু’বছরে যা সব থেকে কম। পতনের একই চিত্র বহাল থেকেছে মার্কিন মুলুকের বাজারেও।
বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সোনার দর পড়েছে ভারতেও। শনিবার প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট পাকা সোনার দাম দিল্লিতে কমে গিয়েছিল ১,২৫০ টাকা। এ দিন ফের ৭৫০ টাকা কমে তা দাঁড়িয়েছে ২৭,৬০০ টাকা। ১৫ মাসেরও বেশি সময়ে যা সব থেকে কম।
অবশ্য শুধু শনিবার নয়। দেশ-বিদেশের বাজারে সোনার দাম পড়ছে কিছু দিন থেকেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অন্যতম কারণ, আর্থিক হাল ফেরাতে সাইপ্রাসের সোনা বিক্রির ভাবনা। এই একই ইঙ্গিত দিয়েছে ইতালি এবং পর্তুগালও। বাজারের আশঙ্কা, এই দৃষ্টান্ত এক বার তৈরি হলে, আগামী দিনে ওই একই পথে হাঁটতে পারে ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ। সে ক্ষেত্রে বিশ্ব বাজারে সোনার জোগান হঠাৎই বেশ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। ফলে কমতে পারে দাম। আর এই আশঙ্কা এ দিনও সোনাকে টেনে নামিয়েছে বিশ্ব বাজারে।
সোনার দরে ধস নামার আরও একটি কারণ কিছুটা হলেও মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার ইঙ্গিত। আর সেই সূত্রে চাঙ্গা হওয়া ডলার। সাধারণত দেখা যায়, যাঁরা একটু চড়া রিটার্নের আশায় বিনিয়োগ করেন, তাঁরা টাকা ঢালেন শেয়ার, মুদ্রা এবং সোনার বাজারে। লেম্যান ব্রাদার্সের পতনের পর থেকে আমেরিকা-সহ সারা বিশ্বেরই অর্থনীতির অবস্থা ছিল নড়বড়ে। সেই সময়ে তাই লগ্নির সব থেকে নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে ফুলেফেঁপে ওঠে সোনা।
কিন্তু সম্প্রতি কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে মার্কিন অর্থনীতি। চাকা ঘোরার ইঙ্গিত পাওয়ায় চলতি বছরের শেষে ত্রাণ প্রকল্প বন্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। আগের তুলনায় কিছুটা চাঙ্গা সে দেশের শেয়ার বাজার। বিনিময়মূল্য বেড়েছে ডলারেরও। লাভের আশায় অনেকেই সোনা থেকে লগ্নি সরিয়ে শেয়ার বাজার ও ডলারে নিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সোনার পতনের যা অন্যতম কারণ বলে তাঁদের দাবি।
|
বিশ্ব বাজারের রেশ |
তারিখ |
দাম |
১০ এপ্রিল |
২৯,৯০৫* |
১১ এপ্রিল |
২৯,৫১০* |
১২ এপ্রিল |
২৯,৪৩৫* |
১৩ এপ্রিল |
২৮,৫৫০* |
|
সোমবার নববর্ষ উপলক্ষে কলকাতার বাজার বন্ধ ছিল
*১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম টাকায়
তথ্যসূত্র: ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন |
|
পুরনো খবর: পতনে নজির গড়ল সোনা
|