রেকর্ড পড়ল সোনার দাম। ডলারের দাম বাড়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের শেয়ার বাজারগুলির বেশ কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠাই সোনার দরের পতনের কারণ বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তবে সোনার দাম আরও পড়বে কি না, তা নিয়ে অবশ্য দ্বিমত রয়েছে তাঁদের মধ্যে।
শনিবার আন্তর্জাতিক বাজারে এক ধাক্কায় সোনার দাম প্রতি আউন্সে কমে গিয়েছে ৮৪ ডলার। এর ফলে প্রতি আউন্সের দাম দাঁড়িয়েছে ১৪৭৭ ডলার।
তবে ভারতের বাজারে অবশ্য সোনার দামের পতনের হার এক এক শহরে এক এক রকম। সব থেকে বেশি পড়েছে দিল্লির বাজারে। সেখানে প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট পাকা সোনার দাম ১২৫০ টাকা পড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮,৩৫০ টাকা। তবে মুম্বইয়ের বাজারে ১০১০ টাকা কমে হয়েছে ২৮,০১৫ টাকা। সব থেকে কম পড়েছে কলকাতায়। এখানে প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনা ৮৮৫ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮,৫৫০ টাকা।
কেন এতটা কমল সোনার দাম? বিভিন্ন সূত্রের খবর, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে লগ্নিকারীদের মধ্যে এখন বিদেশি মুদ্রায় লগ্নির প্রবণতা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপ এবং আমেরিকার শেয়ার বাজারের হালও বেশ কিছুটা ফিরেছে। বিশেষ করে আমেরিকায় বেকারের সংখ্যা কমার খবরে সেখানকার শেয়ার বাজার বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে লগ্নিকারীদের কাছে শেয়ারে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখ জানান, “বিশেষ করে যাঁরা স্বল্পকালীন ভিত্তিতে লগ্নি করে থাকেন, তাঁদের মধ্যেই সোনায় লগ্নির প্রবণতা কমেছে। বেড়েছে ডলার এবং শেয়ারের বিনিয়োগের বহর।”
তবে যে-বিষয়টি সোনার দামের পতনে সব থেকে বেশি ইন্ধন জুগিয়েছে বলে বাজার সূত্রের খবর, তা হল, সম্প্রতি পোর্তুগাল এবং ইতালির সরকার জানিয়েছে যে, আর্থিক সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনে সোনা বিক্রির পথে যেতে পারে তারা। ওই দুই দেশ বিক্রি শুরু করলে জোগান বেড়ে যাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম দ্রুত পড়ে যেতে পারে বলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন লগ্নিকারীরা। হাতের সোনা বিক্রি করে তাই অনেকেই নিশ্চিন্ত হয়েছেন। যা বড় রকম পতন ডেকে এনেছে বাজারে।
সোনার দাম কি আরও কমবে? এই প্রশ্নটিই এখন ঘুরে-ফিরে বেড়াচ্ছে লগ্নিকারী এবং কন্যাদায়গ্রস্ত অভিভাবকদের মনে। সোনার দামের ভবিষ্যৎ নিয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। পারেখ মনে করেন, “দাম আরও পড়ার সম্ভাবনা কম।” পড়তি বাজারে সোনা কেনার এটাই সুবর্ণ সুযোগ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একই মত পোষণ করেন স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি এবং গয়না ব্যবসায়ী বাবলু দে। তবে তিনি বলেন, “শনিবার ব্যাঙ্ক অর্ধ দিবস খোলা থাকার জন্য দামের প্রকৃত স্থিতি বোঝা যাচ্ছে না। আগামী সোমবারও যদি দাম কম থাকে, তা হলেই বোঝা যাবে দাম যথার্থ কমেছে।” বৈশাখ মাসে ফের বিয়ের মরসুম শুরু হচ্ছে। ওই মাসে তিনটি বিয়ের তারিখ রয়েছে। তাতে চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে। এর ফলে গয়নার দামও কিছুটা উপরের দিকে উঠতে পারে বলে গয়না ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ অবশ্য মনে করছেন, সোনার দাম আরও পড়তে পারে। তাঁদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারের উপরেই সোনার দামের ওঠা-পড়া নির্ভর করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের প্রেক্ষাপট বিচার করে তাঁদের ধারণা, সোনার দাম আগামী কিছু দিন আরও পড়তে পারে। |