চলতি বছরেই জঙ্গলমহলে পর্যটন-পরিকাঠামো তৈরির প্রাথমিক কাজ শেষ করতে চায় রাজ্য সরকার। কাজ কতটা এগিয়েছে, খোঁজ রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রথম পর্যায়ে মাওবাদী হামলায় নষ্ট হয়ে যাওয়া পর্যটন আবাস নতুন করে গড়ছে রাজ্য। এই সব আবাস চালাতে ‘হোম ক্রুজ’ নামে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করছে পর্যটন দফতর।
বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে হবে ৩০টি আবাস। প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পর্যটন সচিব বিক্রম সেন বলেন, “অক্টোবরে কাজ শেষ হওয়ার কথা। বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৭ লক্ষ টাকা।” পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ড সীমানায় দলমা গিরিশৃঙ্গে অযোধ্যা পাহাড়কে ঘিরে হচ্ছে আরও একটা পর্যটন সার্কিট।
কলকাতা থেকে মোটামুটি ৩২৮ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়া, সেখান থেকে অযোধ্যা পাহাড় আরও প্রায় ৬০ কিলোমিটার। দুর্গাপুর এবং বাঁকুড়া থেকে দূরত্ব যথাক্রমে ১৭০ কিলোমিটার এবং ১৬০ কিলোমিটার। পর্যটন দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “সপ্তাহান্তে ছোট সফর করে ওখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব।”
অযোধ্যা পাহাড়েও তৈরি হবে ৩০টি আবাস। কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। পর্যটন সচিব বলেন, “ওই অঞ্চলে যে সব পর্যটন আবাস ছিল, মাওবাদী হামলায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়।” নিকটবর্তী ময়ূরপাহাড়, সীতাপাহাড়, রামঝর্না, পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেখার সুযোগ মিলবে এ সবেরও। |
কারা চালাবে এই সব আবাস? মহাকরণের পদস্থ এক অফিসার বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদেরই এগুলো দেখভাল এবং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ‘হোম ক্রুজ’।” প্রকৃতিবান্ধব একটি অংশে কিছু বাড়ির ফাঁকা জমির উপরে হবে বিলাসবহুল কুটির। সেগুলো থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার একাংশ পাবেন ওই সব জমির মালিকরা। অপর অংশ পাবে পর্যটন দফতর। যাঁদের জমিতে আবাস হবে, তাঁদেরই সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ এবং অতিথিপরায়ণতার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে, সরকার সামগ্রিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব থাকবে। বিক্রমবাবুর কথায়, “এতে পর্যটনের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় আবাসিকেরা বাড়তি রুজির সুযোগ পাবেন।”
পর্যটন-কর্তাদের সঙ্গে কথা চলছে ঝাড়গ্রাম রাজপরিবারেরও। কলকাতা থেকে সড়কপথে ২১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে ঝাড়গ্রামে যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টারও কম। রাজা নরসিংহ মল্লদেব বাহাদুরের উদ্যোগে গথিক ও মুসলিম স্থাপত্যের মিশ্রণে এই প্রাসাদ তৈরি হয়। বিভিন্ন সময়ে এই প্রাসাদে অতিথি হয়েছেন ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড উইলিংডন, বাংলার গভর্নর স্যার জন আর্থার হার্বার্ট, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, মোরারজি দেশাই প্রমুখ। পরবর্তী কালে নীচের তলায় তৈরি হয়েছে অতিথিশালা। পর্যটন সচিব বলেন, “প্রাসাদটিতে পর্যটক টানতে রাজপরিবারের সঙ্গে শীঘ্রই রাজ্য সরকারের একটা সমঝোতাপত্র হওয়ার কথা। আশা করা যাচ্ছে, আগামী পুজোয় ওটা বেড়ানোর একটা ভাল জায়গা হয়ে উঠবে।” প্রায় ১৭ একর জমির উপরে প্রাসাদের একাংশ তৈরি হয়েছিল তিনশো বছরেরও আগে। মল্লদেব পরিবারের তরফে দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “প্রাসাদটিকে বাণিজ্যিক কাজে লাগাতে ইতিমধ্যে রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি। টাকা বিনিয়োগের দায়িত্ব সরকারের। আশা করছি, শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।” |