অবশেষে স্বস্তি। মার্চ মাসের হিসেব বলছে অনেকটাই বাগে এসেছে মূল্যবৃদ্ধির হার। নেমেছে ৬ শতাংশের নীচে।
শিল্প মহল একে মুশকিল আসান হিসেবেই দেখতে চাইছে। তাদের আশা, সুদ কমানোর পথে এখন আর বাধা থাকবে না রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে। মূল্যবৃদ্ধি তিন বছরের মধ্যে সব চেয়ে নীচে নেমেছে। এটা খুশির খবর সরকারের কাছেও। লোকসভা ভোটের বছর খানেক আগে অর্থনীতির হাল ফেরানোর ক্ষেত্রে এটাকেই এখন তুরুপের তাস করতে পারে মনমোহন সিংহ সরকার।
মূল্যবৃদ্ধির হার এর আগে এতটা নেমেছিল ২০০৯-এর ডিসেম্বরে। হয়েছিল ৪.৯৫%। সরকারি হিসেব বলছে, মার্চে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫.৯৬%। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া আগাম হিসেব ৬.৮% থেকেও যা অনেকটাই কম। আরও আশাবাদী যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তিনি বলেছেন, “সংশয় নেই, ধীরে হলেও মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমছে। আগামী মাসগুলিতে তা আরও নেমে আসবে।” ফেব্রুয়ারিতে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির এই হার ছিল সাতের কাছাকাছি। আর ২০১২-র মার্চে ছিল আটের নীচে। মূলত শাক-সব্জির দাম কমার ফলেই মূল্যবৃদ্ধি এতটা নেমে এসেছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে। মার্চে শাক-সব্জির দাম সরাসরি কমেছে ০.৯৫%, যেখানে আগের মাসে তা বেড়েছিল ১২%-এরও বেশি। |
বাজারের আঁচ কমে আসার সুযোগ নিয়েই মে মাসের ৩ তারিখ ঋণনীতি ঘোষণা করতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর পথে হাঁটবে বলে প্রত্যাশা শিল্প ও ব্যাঙ্কিং মহলের। তাদের মতে শিল্পের চাকা দ্রুত ঘুরিয়ে আর্থিক বৃদ্ধিকে টেনে তোলার লক্ষ্যে সুদ কমানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তা আরও বাড়িয়ে দিল মূল্যবৃদ্ধি কমার খবর। আগুন বাজারে সুদের হার কমালে তা মূল্যবৃদ্ধির আগুনে ঘি ঢালারই সামিল হবে বলে এর আগে মন্তব্য করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কারণ, সুদ কমার ফলে অর্থনীতিতে নগদের জোগান বাড়লে তা চাহিদার উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যার পরিণামে আরও বেশি করে ফণা তুলতে থাকে মূল্যবৃদ্ধির সাপ। পরিস্থিতি কিছুটা সুবিধাজনক হওয়ায় এখন সুদ কমাতে অসুবিধা হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাতে এক দিকে কারখানার উৎপাদনকে টেনে তোলা যাবে, অন্য দিকে গাড়ি-বাড়ির জন্য ঋণের চাহিদা বাড়লে পালে হাওয়া লাগবে ওই সব শিল্পেরও।
আর্থিক বৃদ্ধির হার সদ্যসমাপ্ত ২০১২-’১৩ সালে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে ৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই তিন মাসে তা ছিল আরও কম, ৪.৫%। এই অবস্থায় শিল্প মহলের তরফেও সুদ কমানোর জোরদার দাবি উঠেছে। বণিকসভা কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি এক সমীক্ষায় দাবি করেছে, চলতি ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে সুদের হার যেন কমপক্ষে ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমানো হয়। সিআইআইয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট এবং ইনফোসিসের কো-চেয়ারম্যান কৃস গোপালকৃষ্ণন বলেছেন, “আর্থিক বৃদ্ধিকে এক ধাক্কায় অনেকটা উপরে নিয়ে যেতে হলে বিনিয়োগ ও গৃহস্থালির চাহিদা, দু’টিই বাড়াতে হবে।” সিআইআইয়ের আশঙ্কা, শিল্পোৎপাদন বাড়লেও তা সম্ভবত ৫.৫%-এর মধ্যেই থাকবে। সেই কারণেই লগ্নিকারীদের আস্থা বাড়াতে সুদ কমানোর উপর বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। তবে চলতি খাতে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনে ঘাটতি এবং খুচরো বাজারের চড়া দাম বাধা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হয়তো মার্চের মতোই মে মাসেও ২৫ বেসিস পয়েন্টের বেশি সুদ কমাতে পারবে না শীর্ষ ব্যাঙ্ক। |